জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও আস্থা গড়ে তুলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের একটি ইউনিটের কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশ পরিচালনায় সরকারের অযোগ্যতা পেলে জনগণ তা বরদাশত করবে না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ নির্ভয়ে,স্বাধীনভাবে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন, সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে যদি জনগণ সরকারের প্রতি তাদের আস্থা বজায় রাখতে পারে। ‘জনগণ যখন দেখবে সরকার সত্যিকার অর্থেই তাদের ভোটাধিকার ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সরকারের প্রতি তাদের আস্থা আরও গভীর হবে।’
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি জনগণের ন্যূনতম দাবিও পূরণ করতে পারে তবে ষড়যন্ত্রকারীদের সমস্ত অপচেষ্টা বৃথা যাবে।
তারেক রহমান বলেন, 'জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে আমরা যাকেই গণতন্ত্র, উন্নয়ন বা সংস্কার বলি না কেন, এর কোনোটিই টেকসই হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভোটের অধিকার। জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ না দিলে রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
তারেক বলেন, দেশ-বিদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী ও তাদের সহযোগীদের পাশাপাশি প্রশাসনের ভেতরেও থাকা প্রেতাত্মারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিএনপি নেতা বলেন, 'তারা যদি এই সরকারকে দুর্বল করতে সফল হয়, তাহলে তারা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে লালন করা কোটি কোটি বাংলাদেশিকেও ব্যর্থ করবে।’
আরও পড়ুন: জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে পদক্ষেপ নিন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তারেক
তিনি বলেন, এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে জনগণের ওপর সেটাই চাপিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘অনেক ধরনের অসন্তোষ ও ঘাটতি সত্ত্বেও জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু সরকার কি তা চায়? সরকার ও জনগণের মধ্যে আস্থা দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ হলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের চক্রান্ত ছড়িয়ে দিতে সফল হবে না।’
তারেক বলেন, প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে আহত এবং প্রায় দুই হাজার ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যার পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তখন বিধ্বস্ত প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মাত্র তিন মাসে ১৫ বছর ধরে মাফিয়া সরকারের সৃষ্ট জঞ্জাল দূর করা অসম্ভব হলেও এই সময়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক বা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তিনি বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, জনগণের সব দাবি পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। ‘তবে সরকারের মধ্যে যদি যোগ্যতার ঘাটতি থাকে বা জনগণ যদি তা উপলব্ধি করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তা মেনে নেবে না।’
তারেক আরও বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি ভুলভাবে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তা সরকারের অদক্ষতার লক্ষণ হিসেবে দেখবে জনগণ।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতরা সম্প্রতি সুচিকিৎসার দাবিতে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটি দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য, বিশেষ করে সাধারণ নাগরিক ও বিবেকবানদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক দৃশ্য। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার নয়? অথবা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় এটি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?'
তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
‘সুতরাং আরেকটি প্রশ্ন উঠছে, দ্রব্যমূল্য কমানো সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন অগ্রাধিকার তালিকায় কোথায়? প্রশ্ন তোলেন তারেক।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব পদক্ষেপকে সবাই সাফল্য হিসেবে দেখতে পারে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এটা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী সরকারগুলো দেশকে আমদানি ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’
তাদের দল ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ এখন এক সংকটময় সময় পার করছে।‘আমাদের অবশ্যই এই সময়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে।’
জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্বাচনি সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়ে দলের ভাবমূর্তি সংরক্ষণের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক।
জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি ফিরলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরাচার দমনের অঙ্গীকার তারেকের