বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সংস্কারের নামে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছানো হতে পারে বলে জনমনে যে ধারণার জন্ম হয়েছে তা ভিত্তিহীন নয়।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু তাদের সংস্কার প্রস্তাবে আমি নতুন কিছু পাইনি, যা ইতোমধ্যে আমাদের ৩১ দফা প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সুতরাং সংস্কার ইস্যুকে নির্বাচন পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জাতির ধারণা ভিত্তিহীন নয়।’
বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাব নিয়ে এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সংশোধন করে সরকার সংস্কার উদ্যোগ সম্পন্ন করতে পারে এবং দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে।
আরও পড়ুন: সারা বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে রোজা-ঈদ করা যায় কি না, বিবেচনার অনুরোধ তারেক রহমানের
তিনি বলেন, 'সরকার এমনকি আমাদের ৩১ দফা প্রস্তাব সংশোধন করে জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দিতে পারে। সরকার বলেছে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে, কিন্তু অহেতুক বিলম্বের কারণ বুঝতে পারছি না।’
সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর পক্ষে মত দেওয়ায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলেরও সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য আমাদের তাজা রক্ত দিয়েছি। কিন্তু এখন যখন ভোটের সময় এসেছে, তখন কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য নানা শর্ত আরোপ করছে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করেছে। তিনি বলেন, 'আপনারা (কিছু রাজনৈতিক দল) কি একই কথা ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই বাংলাদেশ জনগণের। তাই ভেবেচিন্তে কথা বলুন, যাতে কোনো হিসাব-নিকাশ না করেই আমাদের কথা বলতে না হয়।’
আরও পড়ুন: নারী নির্যাতনসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করুন: সরকারকে বিএনপি
কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, কিছু লোভী রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল নিছক বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে, কোনো বাস্তব কারণে নয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ভারত ভাগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম নেই। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। তারা যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চায়।’
মির্জা আব্বাস বলেন, কোনো দল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আসুন। আপনারা নির্বাচনকে ভয় পাচ্ছেন কেন?’
তিনি বলেন, যারা দাবি করে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, তাদের ব্যাখ্যা করা উচিত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে তাদের কতজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তিনি বলেন, এক মাসে আমাদের ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আপনাদের কতজন শহীদ হয়েছে?’
বিএনপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের চেয়ে বেশি তুলে ধররা সাংবাদিকদের একটি অংশের সমালোচনাও করেন দলটির এই নেতা।
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন দল, টেলিভিশন চ্যানেল ও ইউটিউবাররা সমন্বিতভাবে দলের বদনাম করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ‘আমাদের কর্তব্য হচ্ছে আমাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে এগুলোকে প্রতিহত করা।’
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, 'তারা (অপরাধীরা) অন্যায় করে, চাঁদাবাজি করে, অপকর্ম করে, তারপর এর জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করে। কথায় বা কাজের মাধ্যমে এই চাঁদাবাজদের প্রতিহত করতে হবে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজরা এখন বিএনপি-জামায়াতসহ সব দলে অনুপ্রবেশ করেছে। ‘এই চাঁদাবাজরা কমবেশি সব দলেই অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের চিহ্নিত করে হয় দল থেকে বহিষ্কার করুন অথবা পুলিশের হাতে তুলে দেন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপিতে দুর্বৃত্ত, অপরাধী ও চাঁদাবাজদের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, বিএনপিতে খারাপ লোকের কোনো স্থান হবে না—এটা মনে রাখবেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন পেছাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এনসিপি: ফারুক