শুক্রবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুদিন আগে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন দেশের মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করতে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণবিরোধী। জনগণের পকেট কাটতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।’
বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করা হলে তা যাত্রীদের পকেট থেকেই দিতে হবে। এতে যানজটের তীব্রতা বাড়বে, নষ্ট হবে সময়।
বিএনপির এ নেতা দাবি করেন, দেশের মহাসড়কগুলো টোল আদায়ের জন্য উপযুক্ত না। নানা কারণে সব সড়কে যানজট লেগেই আছে। যানজটের কারণে গাড়ি ঠিকমতো চলতে পারে না। এর মধ্যে টোলঘর বসালে প্রতিবন্ধকতা আরও বাড়বে। যানজটের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
‘এমনিতে বাস ভাড়া অনেক বেশি। সড়কে টোল আদায় করলে বাস ভাড়া আরও বাড়বে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিবহন মালিকরা নেন না। তারা অনেক বেশি টাকা নেন। এখন টোলের টাকাও যাত্রীদের কাছ থেকে উঠানো হবে। এ টোলের ফলে যাত্রীদের অর্থ অপচয় হবে, সময় অপচয় হবে। ফলে যাত্রীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন,’ বলেন তিনি।
টোল থেকে আদায় হওয়া টাকার কত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘সরকার নিজেরা টাকা উঠালে সেখানে দুর্নীতির কারণে নয়-ছয় হয়। আবার ইজারা দিলে খাতিরের লোকজনকে নামমাত্র মূল্যে দেয়া হয়। ফলে সরকারি কোষাগারে খুব বেশি টাকা জমা পড়ে না।’
তিনি অভিযোগ করেন যে সরকার মুখে ‘টাইটানিক মার্কা’ উন্নয়নের বুলি কপচালেও মূলত লুটপাটের নীতিতে দেশ চালাচ্ছে। তারা জনগণকে নানা করের মধ্যে বন্দী করে ফেলেছে।
‘আপনারা দেখেছেন, সিটি ও পৌর কর কীভাবে বাড়ানো হয়েছে। একটা ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে এখন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে বহুগুণ। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল কয়েক বছরে বাড়িয়েছে ১০ গুণের বেশি। মানুষ মোবাইলে কথা বলবে, সেখান থেকেও টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার। সত্যিকার অর্থে এ সরকার লুটপাট চালিয়ে দেশকে ফোকলা করে ফেলেছে। এখন তাদের জনগণের ওপর কর না বসিয়ে কোনো উপায় নেই। তাই একের পর এক ফন্দি করে জনগণের টাকা কেটে নিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
‘আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে এ ধরনের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি,’ বলেন রিজভী।
সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন আরও বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নৃশংসতার ধরনও বেড়েছে। ‘বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় আটক বাংলাদেশিদের প্রতি ভয়ংকর নৃশংস আচরণ করেছে বিএসএফ। তারা বাংলাদেশিদের ওপর যে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’
রিজভী দাবি করেন, আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও তাদের বিএসএফ নির্বিচারে হত্যা করছে। সুযোগ পেলেই এ দেশের নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। দিন দিন বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যার সংখ্যা বাড়লেও বর্তমান সরকার নীরবতা পালন করে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মানবধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যে বরাতে তিনি জানান, চলতি বছরের ছয় মাসে বিএসএফের হাতে ১৮ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গত তিন দিনে মারা গেছেন দুজন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে রাষ্ট্র একবারে চুপ করে বসে আছে কিংবা কোনো কোনো সময় প্রতিবাদের পরিবর্তে বিএসএফের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। ‘দুনিয়ার কোনো দেশের সীমান্তে এত হত্যা ও রক্তপাতের একতরফা ঘটনা ঘটে না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ হলে এসব ঘটনা কমতে পারত। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত নিরাপদ হচ্ছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। আমি সরকারের এ ধরণের ঘৃণ্য নীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’