জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কিনা; খুব দ্রুতই সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নিরাপরাধ আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষমা চেয়ে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনের ষষ্ঠ অধিবেশনে শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ অধিবেশন হয়।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এটা (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনপ্রতিনিধি না থাকা) আমাদের প্রত্যেকদিনের সমস্যা, আমাদের অফিসাররা অধিকাংশই অতিরিক্ত দায়িত্বে বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের সংস্থায় কাজ করছেন। তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে স্যার প্রশাসক দেন, নির্বাচন দেন।'
আরও পড়ুন: দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে যে বিভাগীয় কমিশনাররা এসেছেন, তারা কোনো না কোনো সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা প্রশাসকদের জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। একজন অফিসারের পক্ষে একসঙ্গে কয়েকটি দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত কঠিন। এ কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নিয়ে আসা উচিত বলে মত তিনি।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জানান, এ বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে হয়নি। তবে খুব দ্রুতই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন কিংবা প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলো পরিচালনা করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভালো হয় কিনা—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অবশ্যই ভালো হয়। উই হ্যাভ টু রান কান্ট্রি। দেখা যায় একটি ভালো জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
আরও পড়ুন: সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পেছানো যাবে না: ডা. ফরহাদ
স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষ নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে স্থানীয় নির্বাচন আগে হওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। তবে তার ব্যক্তিগত চিন্তা নয় বরং সরকারের পক্ষ থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে বলেও নিশ্চিত করেন আসিফ মাহমুদ।
নিরাপরাধ আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা ঘটিয়েছে তা উঠে এসেছে। তাদের অপরাধ এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তথ্য প্রমাণও রয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে অভিহিত করে হিটলার ও মুসোলিনির পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেন।
এ সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিক্ষিপ্তভাবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সময়ে বিগত ফ্যাসিবাদের সময় জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে জড়িত ছিল, তাদের অধিকাংশই বর্তমানে পলাতক অবস্থায় রয়েছে। গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা আছে বিধায় তারা পলাতক অথবা জেলখানায় রয়েছে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামে এর বক্তব্যের পুর্নব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ যেসব নেতারা কোনো প্রকার অন্যায় অপরাধ কিংবা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত নয়; তারা ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে আসতে পারবেন।