কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দেড়শো’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে শতশত পূণ্যার্থীর ঢল নেমেছিল। প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় আসেন।

মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনীরাম ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী এলাকার শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর দক্ষিণ তীরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, দেড়শো বছর আগে মেলার নামে মৃত শরৎ চন্দ্র রায় এক একর জমি দান করেন। শুরুতে নিজস্ব জমিতে পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতো। পরে ধরলা নদীর ভাঙ্গন ও গতিপথ বারবার পরিবর্তন হওয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে উপজেলার দুই স্থানে প্রতিবছরই গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মেলায় এসে ধরলা নদীতে স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল- দা, বটি, কাঠারি ও সব ধরনের হাতিয়ারসহ গৃহকর্মে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এছাড়াও উড়ুন, গাইন, লাঙ্গল, জোয়াল, ঝাপি, ডালি, কুলা, ডুলি, ঝাড়ু, হাতপাখাসহ সস্তায় কৃষি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও মৃৎপাত্রের বিভিন্ন বাহারি তৈজষপত্র, বর্ষার বিভিন্ন ফল, বড়মাছের শুঁটকিসহ বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, বাতাসা, মুড়ি, মিষ্টি-জিলাপি, বেলুনসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী।

মেলায় আগত পুরোহিত বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, প্রতি বছর মহা দশমীতে এখানে গঙ্গা স্নান সেরে পূণ্যার্থীরা পাপ মুক্ত হন।

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে ৩ দিনব্যাপী শিবচতুর্দশী মেলা শুরু আজ

নাগেশ্বরী উপজেলার বদিজামারপুর থেকে আসা পূণ্যার্থী মালতী রানী রায় বলেন, স্নান করে পাপ মুক্ত হয়ে আমাদের ভালো লাগছে।

দশহরা মেলার স্নান ও পূজা কমিটির সভাপতি হরিকান্ত চন্দ্র রায় বলেন, ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলাটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। আমরাও আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে গঙ্গা পূজা ও দশহরা মেলাটির জৌলুস হারাতে বসেছে।

উল্লেখ্য, সূর্য বংশীয় রাজা দশরত দশমীতে পাপ মোচনের জন্য গঙ্গা নদীতে স্নান সেরে পূজা দিয়ে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। এরই অনুকরণে বাংলা ১২৫০ সাল থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা দশমী তিথিতে গঙ্গার শাখা নদী ধরলায় পাপ মোচনের জন্য গঙ্গাপূজা করে স্নান করে বাড়ি ফেরেন।

স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে এদিন গীতাপাঠ, ভগবত আলোচনা, উপবাস ও সর্বশেষ প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

এ মেলায় ধরলায় ডুবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এদিন বন্ধু বা সই পাতান।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভপতি সুনীল চন্দ্র রায় বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে দেড়শো বছরের পুরনো গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত পূণ্যার্থী এসে গঙ্গা স্নানে অংশ নিয়ে পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা শেষে পূজা কমিটির লোকজন দূর-দূরান্তের পূণ্যার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করেন।

আরও পড়ুন:ফরিদপুরে পদ্মার চরে ঘুড়ি উৎসবে মানুষের মিলন মেলা

পূর্ণিমা তিথির ৩৪ তম সাধুমেলা অনুষ্ঠিত