সহায়ক আবহাওয়া ও উর্বর মাটির সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদ হয় সুস্বাদু ফল আমের। বিশেষত রাজশাহী বিভাগের নামটি সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে আছে সুমিষ্ট এই ফলটির সঙ্গে। তবে আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে দেশজুড়ে আমের সর্ববৃহৎ যোগান দাতা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলারই কানসাট নামের ইউনিয়নটিতে বসে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমের বাজার। তাই আমের মৌসুমে ভ্রমণ করার জন্য এটিই সব থেকে উৎকৃষ্ট গন্তব্য। চলুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ভ্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
কানসাটের নামকরণ
আগে এই অঞ্চলটির নাম ছিল কংসহট্ট। এখানকার রাজবাড়িটিকে স্থানীয়রা বলতো কুঁজো রাজার বাড়ি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই কংসহট্ট কালের বিবর্তনে বদলে বর্তমান কানসাট নাম পেয়েছে। বর্তমানে শিবগঞ্জে আগত পর্যটকরা যে কানসাট রাজবাড়িটি পরিদর্শনে যান, এটি মূলত সেই কুঁজো রাজার বাড়ি।
কানসাটের বিশেষত্ব
দেশের সর্ববৃহৎ আমের বাজারটি বসে এই কানসাটে। শুধু বাংলাদেশের বৃহত্তম বাজারই নয়, কানসাট গোটা এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার। ছোট-বড়-মাঝারি সব মিলিয়ে এখানে প্রায় আড়াইশ’ আড়তে দিনভর চলে আমের বিকিকিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তদাররা আম কিনতে এখানে চলে আসেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এই হাট। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যত্র অনেকগুলো আমের হাট থাকলেও পাইকারি বাজারের জন্য কানসাটই সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ।
আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন একশ’রও বেশি ট্রাক এখান থেকে আমভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হয়। শুধু এই কানসাটেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হয়।
আরও একটি কারণে কানসাটের খ্যাতি রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে মিষ্টি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মালদহে একটি নামকড়া মিষ্টি রয়েছে এই স্থানের নামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো মালদহও আমের জন্য বিখ্যাত। আর আমের পরেই জেলার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত খাবার হচ্ছে কানসাট মিষ্টি।
ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টির কারিগর হচ্ছেন মহেন্দ্রনাথ সাহা, যিনি মূলত বাংলাদেশের শিবগঞ্জ জেলার কানসাটের এলাকার মানুষ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে শত শত মিষ্টি কারিগর পাড়ি জমিয়েছিলেন মালদহের উদ্দেশে। সে সময় অন্যান্যদের মতো মহেন্দ্রনাথের ছেলে বিজয় কুমার সাহাও মালদহে চলে যান। এরপর বাবার শেখানো রন্ধন কৌশল কাজে লাগিয়ে সেখানে তিনি কানসাট বানানো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কানসাটের মিষ্টি স্বাদ। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিজয় কুমারের ২ ছেলে জয়দেব সাহা ও বিশ্বজিৎ সাহা। ভারতের অন্যত্র এই মিষ্টি বানানো হলেও এদের কানসাটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।