শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি খাবারে স্বাদের ভিন্নতা আনার পাশাপাশি অনেক পুষ্টি যোগায়। কিন্তু বাজার থেকে ঘরে আনার পর রান্না করা সেই সবজিতে সম্পূর্ণ পুষ্টি আর পাওয়া যায় না। বিভিন্ন মশলার সংযোজনে হয়ত রান্নাটা বেশ সুস্বাদু হয়ে উঠছে, কিন্তু তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পুষ্টিগুণ হারিয়ে যাবার ফলে শীতের সবজি দিয়ে শরীর গঠনের কাজটা পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাইরে থেকে আনার পর সবজিগুলো পরিষ্কার করার পর সঠিক উপায়ে সেগুলো রান্না করা আবশ্যক। তাই চলুন জেনে নিই, পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করার সেরা কয়েকটি উপায়।
শাকসবজি বেশি ছোট করে না কাটা
সবজি ছোট ছোট টুকরো করে কাটলে রান্নার সময় অতিরিক্ত অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে তাদের শুধু পুষ্টিই ধ্বংস হয় না, অল্প রান্নাতেই বেশি পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে স্বাদও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা শীতের সবজি
সবজি বেশিক্ষণ ভিজিয়ে না রাখা
অনেকেই শাকসবজি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। সবজি কেটে রাখার পর বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয়। শাকসবজিকে দীর্ঘক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে প্রায় ৪০ শতাংশ দ্রবণীয় ভিটামিন ও মিনারেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই অল্প সময়ের জন্য ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। অবশিষ্ট পানি উদ্ভিজ্জ স্টক হিসাবে অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
শিকড় জাতীয় সবজি খোসা ছাড়ানোর আগে সিদ্ধ করে নেয়া
আলুর ক্ষেত্রে সিদ্ধ করার পরে খোসা ছাড়িয়ে নিলে, এগুলোর ত্বকে উপস্থিত পুষ্টিগুলো নষ্ট হবে না। এর ফলে অন্য খাবারের সাথে গ্রহণের সময় সহজেই সমস্ত পুষ্টি শোষণ করা সম্ভব হবে।
যেগুলোর ক্ষেত্রে খোসা না ছাড়িয়ে উপায় নেই সেগুলো খুব পাতলা করে খোসা ছাড়ানো যেতে পারে। খেয়াল রাখা দরকার যে সব শাকসবজিরই পুষ্টিগুণ ত্বকের ঠিক নিচে থাকে। শুধু তাই নয়, সিদ্ধ করার আগে শাকসবজির খোসা ছাড়ালে তা থেকে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন আলাদা হয়ে যায়। গাজর, মুলা, লাউ এবং আদার সম্পূর্ণ খোসা ছাড়ার পরিবর্তে ওপরের আবরণ থেকে হাল্কাভাবে চেঁছে ফেলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
আর্দ্র-তাপে রান্না যেমন সিদ্ধ করা স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি
সিদ্ধ করা বা শুধু আর্দ্র-তাপে গরম করা সবজি প্রস্তুত করার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় কারণ এতে তুলনামুলক কম তাপমাত্রা ব্যবহৃত হয়।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন কারণ এটি খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়াও এটি ওজন বৃদ্ধি ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
রান্নার সময়ে সাইট্রাস ব্যবহার
অভ্যন্তরীণ পুষ্টিগুণ অব্যাহত রেখে রান্নার মাধ্যমে সবজিকে খাবার জন্য উপযোগী নরম করা দরকার। এর জন্য সাইট্রাস ব্যবহার করে সবজির তন্তুযুক্ত টিস্যুকে নরম করা যায়। লেবুর রস বা চালের ভিনেগারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস থাকে।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
হিমায়িত সবজি রান্না করা
টাটকা সবজি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হলেও গ্রাম থেকে শহরে আসতে অথবা দোকানে অনেক পড়ে থাকার দরুন পুষ্টিহীন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে সবজি ঘরে এনে ফ্রিজে রেখে দেয়া যায় যেটা এখন সবাই করে থাকেন। হিমায়িত শাকসবজিতে থাকে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ-এর মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। হিমায়িত সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
চুলার উপর পাত্রে মাত্র দুই বা তিন ইঞ্চি পানি রেখে তা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ফুটন্ত পানির ঠিক উপরে একটি চালনি রাখতে হবে। প্রয়োজনে পাত্র থেকে কিছু পানি ঝরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
চালনী বসানোর পর তাতে হিমায়িত সবজি দিয়ে পুরো পাত্রটি একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পুরো রান্না শেষ হওয়ার সময়টি নির্ভর করে কি ধরনের সবজি রান্না হচ্ছে তার উপর। তাই যাতে পুড়ে না যায় সেজন্য সতর্ক খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
শেষাংশ
উপরোল্লিখিত পদ্ধতিগুলো শীতকালীন সবজি রান্নায় পুষ্টিগুণ বজায় রাখার পাশাপাশি খাবারের স্বাদও উন্নত করবে। শীতকাল শরীরচর্চার জন্যও অনেকের কাছে বেশ আরামপ্রদ একটা সময়। তাদের জন্যও এই পুষ্টি ধরে রাখা সবজি খাওয়ার উপায়গুলো বেশ উপযুক্ত হবে। সর্বপরি, সুস্থতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য খাবারের তথা রান্নার ক্ষেত্রে যত্নশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।