এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে প্রিয়জন্মভূমিতে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
দারিদ্র্যতার মাঝে বেড়ে ওঠা ‘লাল মিয়া’ তথা এস এম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন শিশু সুলতান।
১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা।
পড়ালেখা ছেড়ে ১৯৩৮ সালে চলে যান বর্তমান ভারতের কলকাতায়। সেখানে চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে সুলতানের পরিচয় হয়। অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ছেড়ে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সাথে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান। ১৯৪৫ মতান্তরে ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও তার চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকা যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথপ্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি।
এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এসএম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইনাম আহম্মদ চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে স্থাপন করেন ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এসএম সুলতান।
চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন। সুলতান হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পছন্দ করতেন না।
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন।
এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন।
নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান, এসএম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংগ্রহশালা চত্বরে সোমবার সকালে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল এবং শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। এবার করোনা সংকটের কারণে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।