বিধ্বস্ত জলরাশির ঐকতানের সঙ্গে রোদের আলোয় সোনালি বালির মৃদু আলিঙ্গন, এর সঙ্গে সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের মাঝে নিজেকে পরখ করার নেশা কিছুতেই উপেক্ষা করার নয়। গভীর রাতে শীতল সৈকতে আকাশ ভরা তারার সমীপে নিজেকে সপে দেওয়ার মাঝেই যেন চির প্রশান্তি। এই প্রাকৃতিক উপাচারগুলো নিয়ে ভারত মহাসাগরের বুকে মালদ্বীপের প্রতিটি দ্বীপ সরবে জানান দেয় নিজেদের উপস্থিতির কথা। কিন্তু মাফুশি নামের দ্বীপটি যেন আদ্যোপান্ত শব্দহীন এক নৈসর্গ। খুব কম সময়ের মধ্যে মালদ্বীপের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হওয়া এই দ্বীপটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।
মাফুশি দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে ২৬ দশমিক ০৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মাফুশি দ্বীপের অবস্থান। মাফুশি দ্বীপপুঞ্জের এই মধ্যমণির ১ হাজার ২৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৬৫ মিটার প্রশস্ত। অ্যাটলে অবস্থিত বাকি দ্বীপগুলোর তুলনায় এটি সব থেকে বড়।
মাফুশি দ্বীপ ৩টি এলাকায় বিভক্ত। স্থানীয় অধিবাসীদের এলাকা, পর্যটন এলাকা এবং দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে কারাগার এলাকা। পর্যটন এলাকাটি আবার বিকিনি সৈকত, পাবলিক সৈকত এবং ওয়াটার-স্পোর্টস সৈকতে বিভক্ত।
মাফুশি দ্বীপের ইতিহাস ও নামকরণ
এই দ্বীপবাসীরা মাছ ধরা সম্প্রদায় হিসেবে সুপরিচিত ছিল। দু-একজন পর্যটকের আনাগোণা হওয়া শুরু করতেই এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কম খরচে গেস্টহাউস পাওয়ার জন্য মাফুশি দ্বীপের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। প্রথম দিকে এই কারণেই স্থানীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
২০০৪ সালের বিধ্বংসী সুনামি দর্শনীয় জায়গাটির অনেক স্থাপনাই নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যটনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
‘মাফুশি’ নামটির উৎপত্তি মালদ্বীপের শব্দ ‘মা’ (maa) এবং ‘ফুশি’ (Fushi) থেকে। ‘মা’-এর অর্থ ‘বড়’ এবং ‘ফুশি’-এর অর্থ ‘দ্বীপ’। সমগ্র দেশের অন্যান্য অধ্যুষিত দ্বীপের তুলনায় এই দ্বীপটি বড় বলে এরকম নামকরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণের উপায়
মালদ্বীপের পর্যটন ভিসা
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যেতে হলে প্রথমেই মালদ্বীপের ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশিদের মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য আগমনী ভিসা দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি পর্যটকদের দেশ ছাড়ার পূর্বে পর্যটন ভিসার জন্য কোনো রকম আবেদনের প্রয়োজন হয় না। তবে মালদ্বীপের বিমান বন্দরে অভিবাসন ছাড়পত্র পেতে কিছু প্রাথমিক শর্ত রয়েছে যেগুলো আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হয়। শর্তগুলো হলো:
- কমপক্ষে ১ মাস মেয়াদী একটি বৈধ পাসপোর্ট। এমনকি শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য।
- আসা-যাওয়ার টিকিট, অগ্রীম হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণপত্রসহ মালদ্বীপে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রমাণ অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত ভিসা স্পনসরশিপ।
- পূরণকৃত ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ফর্ম, যা ফ্লাইটের সময় ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে হয়। https://imuga.immigration.gov.mv/ethd লিঙ্কের মাধ্যমে ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
এই শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে মালদ্বীপের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিনামূল্যেই বাংলাদেশিরা পেতে পারেন। এই পর্যটন ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন।
ঢাকা থেকে মাফুশি দ্বীপ যাতায়াত
ঢাকা - মালে রাউন্ড ট্রিপ বিমান ভাড়া নির্ভর করবে কিছু বিষয়ের উপর যেমন এয়ারলাইন্স কোম্পানি, বুকিংয়ের সময়, বিভিন্ন অফার, ইত্যাদি।
মালে থেকে মাফুশি দ্বীপ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য স্পিডবোট বা ফেরিতে যেতে হবে। স্পিডবোটের ভাড়া লাগবে ২৫ মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৭৫০ টাকা। এভাবে দ্বীপে পৌছতে প্রায় ৪৫-মিনিট সময় লাগবে। মালে শহরের ব্যাঙ্ক অফ সিলনের সামনে থেকে ৬ নম্বর জেটি থেকে পাওয়া যাবে এই স্পিডবোটগুলো।
আর সরকারি ফেরিগুলো শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলে এবং ভ্রমণপথে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় নেয়। ফেরিতে টিকেট খরচ নিতে পারে জনপ্রতি ২ মার্কিন ডলার বা ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়
মালদ্বীপের অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মতো এখানেও সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে বেশি ভিড় থাকে। এই শুষ্ক মৌসুমে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে এবং সামগ্রিকভাবে কম আর্দ্রতা থাকায় ভ্রমণের পরিবেশ বেশ মনোরম হয়। আর এরপর থেকে; অর্থাৎ মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘলা থাকে।
কখনো কখনো ঝড়ে কবলে পড়তে হয় বলে এই সময়টি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। তবে এই সময়গুলোর সবচেয়ে সেরা সুবিধা হচ্ছে- দ্বীপে ভ্রমণ খরচ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম থাকে।