শার্শার কজিরবেড় গ্রাম ঘুরে ইউএনবির এই প্রতিনিধি দেখেন, মনির হোসেন, নজরুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আলী হোসেন, শফিকুল রহমানের মতো অন্তত ১৫০ পরিবার এই বিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবহার করছেন।
ওই গ্রামের সেলিম রেজা বলেন, ‘দিন দুবার লাইনে পানি আসে। সকাল ৭টায় একবার, দুপুর ২টায় আসে দ্বিতীয়বার। এতেই আমাদের চাহিদা মিটে যায়। অধিকাংশ গ্রাহক চাহিদা মোতাবেক পানি সংরক্ষণ করে রাখে।’
নাভারন বাজারের রুস্তম আলী বলেন, ‘এই এলাকার মানুষের সুপেয় নিরাপদ পানির খুব অভাব ছিল। এখন আমরা খুব ভালো আছি। আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানি পাচ্ছি। মফস্বলে থেকেও শহরের স্বাদ পাচ্ছি।’
বুরুজবাগানের গৃহবধূ আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আগে আমরা সাধারণ টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতাম। ঘরের মেঝের টাইলস, বেসিন, বাথরুম, হাড়িপাতিল সব আয়রনের জন্য লাল হয়ে যেতো। সাপ্লাই পানি ব্যবহারের পর থেকে আর লাল হয় না। রান্না-বান্নার কাজেও এই পানি ব্যবহার করছি। এখন আমরা খুব ভালো আছি।’
নাভারন ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের অধ্যাপক বখতিয়ার খলজি মন্টু বলেন, ‘সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের নিরাপদ পানি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, পানি নিরাপদ না হলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না। তাই নিরাপদ পানি পানের সুযোগ তৈরি করা, গুণগতমান, সবার জন্য সহজলভ্য ও টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে বহুমুখী পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামাঞ্চলের পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারে ইউনিসেফ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, শার্শা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। এক লাখ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন ট্যাংকটিতে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। এই পানি আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত।
শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকায় আর্সেনিক দূষিত এলাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি পেতে পারে সেজন্যই সরকারিভাবে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।’
‘বিভাগীয় শহর বা মহানগরীর মানুষের কাছে সাপ্লাই পানি সম্পর্কে একটা ধারণা থাকলেও মফস্বল এলাকায় এই ধারণা একেবারেই ছিল না। ফলে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কিছুটা অসুবিধা হলেও এখন মানুষ সচেতন হয়েছে, সুফল পেতে শুরু করেছে। চাহিদাও বেড়েছে,’ বলেন তিনি।
শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় দুটি ধাপে মাসিক ১৫০ অথবা ১৯০ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবারকে এই পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ টাকা দিয়েই প্রকল্পের সকল ব্যয় মেটানো ও তদারককারিদের বেতন-ভাতা দেয়া হয় বলে উল্লেখ করেন সোহরাব।
তিনি বলেন, ‘শার্শা সদর ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৩৮ হাজার। সাপ্লাই পানি বাদেও অন্যান্য এলাকায় বিশুদ্ধ আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানির ব্যবস্থা করতে ২০০টি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এর বাইরে ইউনিয়নের ৫৫টি মসজিদ ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিশুদ্ধ পানির জন্য আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে।’