চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আম। গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলিসহ শতাধিক সুস্বাদু জাতের আম এ জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে এ অঞ্চলের আম। কিন্তু এবার করোনার কারণে এ অঞ্চলের আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চলতি মৌসুমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আম চাষী অহিদ আলী জানান, মৌসুমের শুরুতে মুকুল আসার পর বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আম কম হয়েছে। তার ওপর করোনা পরিস্থিতি শুরুর প্রথম দিকে প্রশাসন চলাফেরায় কড়াকড়ি করার কারণে আম চাষীরা ঠিকমতো বাগানের পরিচর্যা করতে পারেননি। এছাড়া এখন আমের বাজারজাতকরণ নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে এবার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে আম চাষীদের।
আরামবাগ এলাকার আরেক আম চাষী আব্দুর রাকিব বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। এরপরও যেটুকু আশা ছিল, করোনার কারণে তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে আম বেচা-কেনাও কঠিন। কারণ কোনো পাইকার যাতায়াত করতে পারছে না।
আনোয়ার হোসেন নামে সদর উপজেলার একজন আম চাষী বলেন, ‘এ সময়ে আম বাগানগুলোতে কেনা-বেচা হয়ে থাকে। মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা বাগান কেনে, কিন্তু এখন সব বন্ধ। যারা বাগান কিনে নেন, করোনার কারণে তারা এখন ভরসা পাচ্ছেন না লোকসানের আশঙ্কায়। আমার নিজের বাগানও বিক্রি হয়নি।’
আম চাষী আশরাফ আলী বলেন, ‘করোনার কারণে হাট-বাজার, দোকানপাট, অফিস-আদালত সব কিছু বন্ধ। ঘর থেকে মানুষ ঠিকমতো বের হতে পারছে না। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা এই আমগুলো নিয়ে গিয়ে কোথায় বিক্রি করব, কে কিনবে?’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এখান থেকে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, করোনার কারণে আম চাষী বা ব্যবসায়ীরা কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন। কিন্তু শঙ্কার কোনো কারণ নেই, আমের ট্রাক যেন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এখনো বাজারে আম আসতে ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। এর মধ্যে রমজান মাস শেষ হয়ে যাবে।
রোজা শেষ হয়ে গেলে এ জেলা থেকে আম ঢাকা বা অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সমস্যা হবে না এবং অন্যান্য জেলা থেকেও পাইকারি ক্রেতারা আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।