মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামির জেল আপিল গ্রহণ করে মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ।
২০০৪ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে বিগত ১৬ বছর যাবত কারাবন্দী রয়েছেন আসামি হুমায়ূন কবির।
আদালতে জেল আাপিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘মামলার সাক্ষিদের সাক্ষ্যে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব, অসামঞ্জস্যতা ও নানা ত্রুটির কারণেই হুমায়ুন কবিরকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এ রায়ের ফলে তার মুক্তিতে কোনো বাধা নেই।’
মামলার এজাহার ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশুটি বেলা সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করে তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।
সাকেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে মামলার এজাহারে বলা হয়, স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখে তারা। এসময় আরও ৫ থেকে ৬ জন ছিল সেখানে। সে সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলে সে শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। শিশুটিও বলে সে তার মামার সাথে যাবে।
এজাহারে শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, হুমায়ুন কবির আমার ভাতিজিকে বাড়ি পৌঁছে না দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কোনো নারী ও শিশু পাচারকারীর কাছে বিক্রি করে দেয় অথবা আটকে রাখে। পরে এ ঘনায় আইগত ব্যবস্থার আরজি জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ।
মামলা করার দুই দিন পরেই অর্থাৎ ৪ জুলাই পেশায় ট্রাক ড্রাইভার হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশের সুরতহাল ও ময়না দতন্ত ও তদন্তের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
২০০৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। পরে ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এইচ এম মোস্তাক আহমেদ মামলার রাায় দেয়। রায়ে হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক।
রায়ের পর পরই মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাতে অনুমতি চেয়ে আবেদন)হাইকোর্টে আাসে। এছাড়া আসামি একটি জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ডেথরেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির পর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট । এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৫ এপ্রিল জেল থেকে আবেদন (জেল পিটিশন) করেন হুমায়ুন কবির। পরে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল আবেদনটি আপিল হিসেবে গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আদালত।
সে জেল আপিলের শুনানির পর মঙ্গলবার হুমায়ুন কবিরকে খালাস দিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ। এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে ২০০৪ সালে গ্রেপ্তারের পর ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারেই আছেন মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া হুমায়ুন কবির।