রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, বিশ্বের কোনো দেশেরই কোভিড-১৯ উদ্ভূত বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সক্ষমতা ছিল না। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। জিডিপিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের নানাবিধ সূচকে উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতা বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বীকৃত হলেও কোভিড-১৯ উদ্ভূত চলমান সংকট স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের অর্জনগুলোকে ধরে রাখার সম্ভাবনাকে এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কোভিড-১৯ উদ্ভূত চলমান বিপর্যয়ে স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি বহুমুখী আর্থসামাজিক ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এ পর্যায়ে নিরূপণ সম্ভব না হলেও এটা পরিষ্কার যে, এ গভীর সংকট উত্তরণে উন্নয়ন সহযোগীদের ব্যাপক আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। এক্ষেত্রে, দীর্ঘকালের নির্ভরযোগ্য অংশীজন হিসেবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে সহায়তাসহ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার জন্য।’
‘আমরা মনে করি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তাই, আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সব ধরনের প্রকল্প ও উদ্যোগের সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও কঠোর দুর্নীতিবিরোধী মানদণ্ডের চর্চা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চলমান মহাসংকট মোকাবিলা ও উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়া অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিক, কিন্তু তা কোনোভাবেই এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তের স্বপ্রণোদিত এবং চাহিদামাফিক প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাকে যথার্থতা দিতে পারে না। বিশেষ করে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের তথ্য প্রাপ্তি ও তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন ও মত প্রকাশে কোনো অন্তরায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্যোগকালে ও সংকটের দ্রুত উত্তরণের স্বার্থে কখনও কখনও ক্রয়-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজন হবে, কিন্তু এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সব ধরনের যোগসাজশ, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, স্বার্থের সংঘাত ও অতিমূল্য নির্ধারণ প্রবণতা প্রতিরোধে যেকোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জনগণের কাছে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থার ওপর জনগণের আস্থা বাড়াবে। স্বচ্ছতার ঘাটতি হলে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সুযোগসন্ধানী, মধ্যস্বত্বভোগী ও দুর্নীতিপ্রবণ স্বার্থান্বেষী মহলের পারস্পরিক যোগসাজশের ফলে দুর্নীতির মহোৎসব সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।’
টিআইবি মনে করে কোভিড-১৯ উদ্ভূত মহাসংকট সমগ্র বিশ্বকে এক অভূতপূর্ব সমস্যাসংকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আর এ কারণেই সব পর্যায়ে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে সরকার ও অন্য সব অংশীজনের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছে টিআইবি।