জানা যায়, বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর দাবিতে খুলনার আটরা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ন গেটে মহাসড়ক অবরোধ করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। পুলিশ তাদেরকে মহাসড়ক থেকে তুলে দিতে গেলে শ্রমিকরা প্রতিরোধ করেন। এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ইট-পাটকেল, লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
বন্ধকৃত ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, আধুনিকায়ন করা, অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরত, বদলী, অস্থায়ী সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ করাসহ ১৪ দফা দাবিতে ইস্টার্ন জুট মিলের গেটে একত্র হয়ে সমাবেশ করেন শ্রমিকরা।
পরে তারা খুলনা-যশোর মহাসড়কের আটরা শিল্পাঞ্চলের পথ অবরোধ করেন। এর ফলে খুলনামুখী গাড়ি আটকা পড়ে এবং খুলনা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো বিকল্প পথ ধরে চলাচল করে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তারা পরে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানতে রাজি হননি। পরে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ এবং ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে স্টার জুট মিলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।
অবিলম্বে পাটকল চালুর দাবি জানিয়ে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের নেতারা বলেন, ‘বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে পাটকলে লোকসান হয়েছে। লুটপাটের জন্যই পাটকল ও পাটশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। অথচ বিজিএমসির দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে সৃষ্ট লোকসানের দায় সাধারণ পাটকল শ্রমিকদের ওপর চাপাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের অন্যায় শাস্তির ফল ভোগ করছেন শ্রমিকেরা।’
তারা আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়ায় অনেক শ্রমিকের জীবন চলছে মানবেতরভাবে। কর্মহীন এই শ্রমিকদের কেউ কেউ সহজ পেশা হিসেবে রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ ফল বিক্রেতা কিংবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজেও নেমেছেন। কোনো কাজ জোগাড় করতে না পেরে এখনও বেকার রয়ে গেছেন অনেকে।’
আরও পড়ুন: খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়া গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য মুনীর চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘বিনা উসকানিতে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। এতে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিজেএমসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি এবং ভ্রান্ত নীতির কারণে পাটশিল্পে লোকসান হচ্ছে। লোকসানের এই দায় নিষ্ঠুরভাবে শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। লুটপাটের এ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।’
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ অবরোধ শুরু করেন। পুলিশ সবাইকে সরিয়ে দেয়ার পর উত্তজনা সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপে নারী শ্রমিকসহ ১০/১৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) এডিসি (উত্তর) সোনালী সেন বলেন, ‘শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয় পুলিশ।’