পুরুষ শ্রমিকরা বিকল্প পেশা হিসেবে বাদাম ও সবজি বিক্রি বা ইজিবাইক ও রিকশা চালানোর মতো কাজ শুরু করলেও নারী শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেন না। ফলে খুবই মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। বিশেষ করে যে নারীদের ওপর পরিবারের সবাই নির্ভরশীল তাদের এখন ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। ইচ্ছা করলেই তারা পুরুষদের মতো যেকোন পেশায় কাজ করতে পারছেন না।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে হোটেল-ছাত্রাবাস বন্ধ, বাসাবাড়িতে কাজ করার সুযোগও কমেছে অনেক। তাই লজ্জা উপেক্ষা করে অনেক নারী শ্রমিকই দিনমজুরি হিসেবে কাজ শুরু করেছে। তবে সেখানেও রয়েছে মজুরি বৈষম্য।
চলতি বছরের ১ জুলাই সরকারের সিদ্ধান্তে খুলনার স্টার জুট মিলস লিমিটেড, দৌলতপুর জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস, আলীম জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিলস, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড বন্ধ হয়। এসব মিলগুলোতে স্থায়ী ১৪ হাজারের বেশি ও অস্থায়ী প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ছিলেন।
মিল এলাকার একাধিক শ্রমিক জানান, ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে লজ্জা উপেক্ষা করে কাজ খোঁজ করছেন নারী শ্রমিকরা। যা কাজ পাচ্ছেন তা দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না। যার ফলে প্রতি মাসেই ধারদেনা করা লাগছে। মাসের পর মাস বকেয়া হয়ে যাচ্ছে ঘরভাড়া। অনেক পরিবারে দিনে একবার রান্না হচ্ছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের বদলি শ্রমিক শিউলি বেগম জানান, মাসে ১২-১৪ হাজার টাকা মজুরি মিলত। মিলের পাশে রেললাইনের বস্তিতে ভাড়া করা ঘরে পরিবার নিয়ে তার ভালোই চলত। কিন্তু গত তিন দিন তার বাড়িতে হাঁড়িতে আগুন দেয়া হয়নি। তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে কাজ জুটছে না।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক কোহিনুর বেগম প্রায় ১৬ বছর আগে মিলটিতে চাকরি শুরু করেন। মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা মজুরি পেতেন। সম্প্রতি তিনি মিলের সামনে একটি হোটেলে কাজ নিয়েছেন। যেখানে দিনে তাকে ১০০ টাকা দেয়া হয়।
শ্রমিকদের সংগঠন সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রমিক নেত্রী শাহানা শারমিন বলেন, ‘করোনাকালে মিল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। যা কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যাবে না। মিলের নারী শ্রমিকরা বিকল্প কোনো কাজ পাচ্ছেন না।’
খুলনাঞ্চলের পাটকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন বিবেচনা করে অতিদ্রুত মিলগুলো পুনরায় চালু করার দাবি জানান তিনি।