চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি চাষীরা।
তবে উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে সার,কীটনাশক ও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই তুলোনামূলক কম থাকায় বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২৪ মন থেকে ২৭ মণ করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
এখন মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটাই-মাড়াই এর কাজ। চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে।
বাজারে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি এ হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে।
ফলন ও দর দুটোই ভালো পেয়ে খুশি বোরো চাষীরা। অন্যান্য জেলায় ধান কাটা মজুরের সংকট থাকলেও এ জেলায় তেমন সংকট নেই।
আরও পড়ুন: প্রথমবার বোরো চাষের আওতায় ২০০ বিঘা জমি
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ধানখেতে কেউ ধান কাটছে, কেউ ধানের আটি বাঁধছে, কেউ বা মাথায় করে ধানের বোঝা নিয়ে যাছে। আবার কোথাও চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ।
জেলার সদর উপজেলার আতাহার এলাকার বোরো চাষী ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘এবার ধানের ফলন খুব ভালো, বিঘায় ২৫-২৭ মণ করে ফলন হচ্ছে। গড়ে ২৫ মণের ওপর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আমি তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। আমার তিন বিঘা জমিতে ৮০ মণ ধান পেয়েছি। বিঘায় ২৭ মণ করে পড়ে। ধানের বর্তমান বাজারদর প্রতিমণ এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা চলছে। এ অবস্থায় আমি খুশি। ধানের ফলন যদি কম হত তাহলে সমস্যা হতো। ফলন বেশি হয়েছে এজন্য ঠিকই আছে। ’
একই মাঠের আর এক চাষী আকবর আলী জানান, ‘এবার আবহাওয়া ভালো, পোকামাকড় কম এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় সেচের কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে ফলন ভালো হয়েছে। দামটাও ভালো, ধান কেটে কেটেই এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক ২০০ টাকা মণ দর পাওয়া যাচ্ছে। ফলন বেশি হওয়ায় আমাদের পুষিয়ে যাচ্ছে।’
নুনাপোখর এলাকার আরেক চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এবার ১২ বিঘায় বোরো আবাদ করেছি। এখন ধান কাটাকাটি চলছে। ধান কাটতে লেবারের কোনো সমস্যা নেই। এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বিঘাতে ২৫-২৬ মণ করে ফলন হচ্ছে। দাম যেটা পাওয়া যাচ্ছে সেটাও ভালো। কিন্তু সার, সেচ খরচ, কীটনাশকের দাম কমলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমতো। তাহলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হতাম। এজন্য এসবের দাম কমানোর দাবি সরকারের কাছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, এ বছর জেলায় ৫১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি প্রণোদনার আওতায় জেলার ৩৬ হাজার ২০০ জন প্রান্তিক চাষীর মাঝে বিনামুল্যে বোরো বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা ধান কাটাই-মাড়াই কাজে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা উপসি জাতের বীজ ব্যবহার করেছে। এবার ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯ এর চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। এই বীজ ব্যবহারে বিঘাপ্রতি শুকনো অবস্থায় প্রায় ৩০ মণ করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: হাওরে ৭০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে: কৃষি মন্ত্রণালয়