ঠাকুরগাঁওয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাহফুজা খাতুন (১৫) নামে এক মাদরাসাছাত্রীকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের টাঙন নদীর পাড় থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া মাহফুজা খাতুন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের ক্বারী মৃত মোস্তফা কামালের মেয়ে। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কওমী মহিলা মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, সকালে টাঙন ব্রিজের নিচে বস্তাটি মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলে স্থানীয়দের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বস্তাবন্দি লাশ ভেবে এগিয়ে গিয়ে বস্তার মুখ খোলে। এসময় ওই কিশোরী নড়াচড়া করলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। টাঙন নদী সংলগ্ন খালপাড়া এলাকার বাসিন্দা জয় মহন্ত অলক বলেন, নদীর ব্রিজের নীচে একটি বস্তার ভিতরে একটি মেয়েসহ পড়ে থাকতে দেখে আমাকে একজন মোবাইলে ফোন করে জানান। আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম মেয়েটি মারা গেছে। পরে ছবি তোলার জন্য একটু কাছে গিয়ে দেখি বস্তাটি নড়ে উঠল। তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের বস্তাটি খুলতে বললাম। বস্তা খোলার পর দেখা গেল মেয়েটি বেঁচে আছে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: উজিরপুরে নিখোঁজের ৪ দিন পর শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার
মাহফুজা খাতুনের বড় বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমার বোন টাঙন নদীর পাশে এক মাদরাসায় পড়াশোনা করে। ঘটনা কি ঘটেছে জানি না।
মাহফুজার মা সালমা খাতুন জানান, এর আগে গুলজার নামের এক ছেলে আমার মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল। কিন্তু পরে সেই ছেলে আমার মেয়েকে ছেড়ে চলে যায়। সেই ছেলেই আমার মেয়ের ক্ষতি করার জন্যে এমনটা করতে পারে।
খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কওমী মহিলা মাদরাসার মুহতামিম হযরত আলী বলেন, স্বাভাবিক নিয়মের মতো রাত ১১টায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের নামাজের সময় তাকে রুমে দেখতে না পেয়ে সহপাঠীরা তাকে খোঁজাখুঁজি করে। তার অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়। সকালে টাঙন নদীর পাড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানতে পারি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার পরিদর্শক (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, মাহফুজা শহরের একটি মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করে। মেয়েটির সাবেক স্বামী তার দলবল নিয়ে রাত আনুমানিক ২-৩টার দিকে কৌশলে মাদরাসা থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসে। পরে নির্যাতন করে তাকে বস্তাবন্দি করে টাঙন নদীর পাড়ে বাঁধের ঢালে ফেলে রাখে। কয়েক ফুট দূরেই ছিল গভীর নদী। সকালে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে মেয়েটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসি কামাল হোসেনে আরও বলেন, বস্তার ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েটি বলছেন যে, তার সাবেক স্বামীসহ আরও কয়েকজন তাকে প্রলোভন দেখিয়ে রাতে মাদরাসা থেকে বের করে আনে ও টাঙ্গন ব্রিজের নীচে বস্তায় ভরে রেখে চলে যায়। কিন্তু তারা তাকে কোন প্রকার নির্যাতন করেনি। ওই মেয়েটির এমন স্বীকারোক্তি বা বক্তব্য রহস্যজনক। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে তরুণের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার