বাগেরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। জেলায় এবছর ৬৪২টি মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া, আর রং তুলিতে প্রতিমা সাজানো হচ্ছে। মাটির প্রতিমায় জীবন্ত রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
অন্যদিকে, এসব মণ্ডপে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা কাজ করবেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, নিরাত্তা ব্যবস্থা এবং পূজা চলাকালীন আযান ও নামাজের সময়সূচি নির্ধারণ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। সভায় জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম,পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পূজার এই পাঁচদিন জেলার সব মসজিদে একই সময়ে আযান ও নামাজ হবে।
আরও পড়ুন: দুর্গা পূজায় দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ: আইজিপি
বাগেরহাট শ্রীশ্রী হরিসভা মন্দির দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিটন সরকার জানান,এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এপর্যন্ত প্রশাসনের সবগুলো সভাতেই দুর্গোৎসবকে ঘিরে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, দুর্গোৎসব শুধু হিন্দুদের নয়, বাঙালীর সংস্কৃতিরও অংশ।
আর তাই দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগীতার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দুই স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। স্টাটিক ডিউটির পাশাপাশি, পর্যাপ্ত মোবাইল টিম রাখা হবে।
তিনি জানান, দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য জেলা পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছে। শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এরইমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
আর কদিন বাদে সনাতনধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শরৎকালের কাশফুলের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসছেন।
মহামারি করোনার কারণে গেল দুই বছর দুর্গাপূজায় উৎসবের কিছুটা কমতি ছিল। এবছর করোনার প্রভাব কমে আসায় আড়ম্বরসহকারে পূজার আয়োজন চলছে। দর্শনার্থী আর ভক্তদের ঢল নামবে এমন আশায় মণ্ডপগুলো সাজানো হচ্ছে নানা ভাবে। ভক্তরাও অপেক্ষায় রয়েছে দেবী দুর্গাকে বরণ করতে।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দেবদেবীর প্রতিমায় রঙের কাজ চলছে। প্রতিমা শিল্পীরা অপরূপ সাজে প্রতিমা সাজাচ্ছেন। এই সঙ্গে পূজামণ্ডপগুলোতে সাজসজ্জা আর আলোক সজ্জার কাজ চলছে।
বাগেরহাট শহরের শালতলা শ্রীশ্রী হরিসভা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে,শিল্পীরা রং তুলিতে দেবদেবীর প্রতিমা সাজাচ্ছেন। সেই সঙ্গে চলছে সাজসজ্জা আর লাইটিংয়ের কাজ। এই অঞ্চলের মধ্যে এই প্রথম শতবছরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী হরিসভা মন্দিরের থিমের ওপর ভিত্তি করে সাজসজ্জা করা হচ্ছে। ডেকরেশনে অনটাইম প্লেট ও বাটি ও বাঁশের তৈরি কুলার ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া নানা ধরণের উপকরণ ব্যবহার করে সাজসজ্জায় নানা বৈচিত্র আনা হয়েছে। এই পূজামন্দিরে দূর-দূরান্ত থেকে কয়েক হাজার দর্শনার্থী ও ভক্তদের ঢল নামবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
উল্লেখ্য, ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গা হাতিতে (গজে) চড়ে স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন। মহাসপ্তমী,মহাঅষ্টমী,মহানবমী এবং ৫ অক্টোবর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
আরও পড়ুন: দুর্গা পূজায় দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ: আইজিপি