পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত করায় শুক্রবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে অবরোধ চলছে।
শনিবার ওই সংগঠনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার রাতেই সুপ্রিম কোর্টের আদেশে নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
এ ঘোষণার পর থেকেই শুক্রবার রাত দশটা থেকে এখন পর্যন্ত সকল রুটে অবরোধ চলছে। অবরোধের ফলে শনিবার সকালেও দূরপাল্লার কোন বাস, মিনিবাস জেলা ছেড়ে যেতে পারেনি। দিনভর জেলার বাইরে থেকেও কোন পরিবহন প্রবেশ করতে পারেনি।
ফলে শুক্রবার রাত থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ের সড়ক মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাসসহ কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে পিকআপের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১
পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও পঞ্চগড় জেলা ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যকার দ্বন্ধের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান প্রসাশন।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কলেজ শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার রুম্পা জানান, কলেজের পরীক্ষা চলছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
আশরাফুল ইসলাম ও হিমেল খান নামে দুজন পথচারী জানান, সড়ক মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকে রাখা হয়েছে। সাইকেল মোটরসাইকেল নিয়েও চলাচল করা যাচ্ছে না। হাজার হাজার পথচারী বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে শ্রমিক সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের প্রকোপ কমেনি
পঞ্চগড় জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ও আব্দুল লতিফ জানান, ভোটের আগের দিন ভোট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন না দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত একটি শ্রমিকও বাড়ি ফিরবে না।
পঞ্চগড় জেলা ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জসিদুল ইসলাম জসিম জানান, ‘২০১৭ সালে গেজেট করে সরকার জেলা ভিত্তিক শ্রমিক সংগঠনের শ্রেণি বিভাগ করে দিয়েছেন। এরপর জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আর অস্তিত্ব থাকে না। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমরা ট্রাক, ট্যাংকলড়ি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নির্বাচনের সিডিউল স্থগিতাদেশ দেন। তারপরও তারা তা অমান্য করে নির্বাচনের কার্যক্রম করে যাচ্ছিল। অবশেষে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনারের কাছে আদালতের আদেশের কপি পৌঁছালে তিনি নির্বাচন স্থগিত করে দেন। তারা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচনে যেতে পারতো।’
জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার সাদাত সম্রাট জানান, আমরা সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বলে নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসূফ আলী জানান, উচ্চ আদালতের এক আদেশে ওই শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করা হয়েছে। এর পরপরই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে অবরোধ করেছেন। শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। সমঝোতার উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সমাধান হয়ে যাবে।