জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, ‘সুমন ও পাপিয়া নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সংসদ সদস্য নজরুর ইসলাম হিরুর হাত ধরে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে। মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার পর তারা নরসিংদী থেকে গা ঢাকা দিলেও নজরুল ইসলাম হিরুর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই তারা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকত। পরবর্তীতে পাপিয়া নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পায়।’
একই বক্তব্য নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুলের। তিনি বলেন, ‘১০ বছর যাবৎ সুমন ও পাপিয়া নরসিংদীতে নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে এসে তারা বিভিন্ন সভা ও মিছিলে যোগদান করত। বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর ছত্রছায়ায় তারা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত এবং পাপিয়া জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।‘
এ অভিযোগ অস্বীকার করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পাপিয়াকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বানানোর সময় আমি নিজে এবং শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন প্রতিবাদ করেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে পাপিয়া সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।’
‘সুমন সাবেক কমিশনার মানিক হত্যায় সম্পৃক্ত আছে বলে শুনেছি,’ যোগ করেন তিনি।
পাপিয়ার সাথে ছবি উঠানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম উল্টো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথেও পাপিয়ার ছবি রয়েছে।’
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ‘সম্ভবত ২০১২ সালের শেষের দিকে সুমন ও পাপিয়া ঢাকায় চলে যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মাঝেমধ্যে এসে অংশ নিত। সুমন বিভিন্ন সময় গাড়িবহরে করে নরসিংদী শহরে আসলেও তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। তার বিরুদ্ধে আগের দুটি মামলা ছাড়া নতুন কোনও মামলা নেই।’
সুমনের বাবার নাম মতিউর রহমান চৌধুরী। ব্রাহ্মন্দী মহল্লায় তাদের চার তলা বাড়ি রয়েছে। এটি বর্তমানে তালাবদ্ধ। সুমনের বাবা গানের মাস্টার ছিলেন এবং এতেই সংসার পরিচালনা করতেন। অপর দিকে শহরের ভাগদী এলাকায় পাপিয়াদের বাড়িটিও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
পাপিয়া ও সুমনসহ চারজনকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার নগদ টাকা এবং বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়।
পরে র্যাব রবিবার রাজধানীতে পাপিয়ার দুটি বাড়ি ও তার ভাড়া করা পাঁচতারকা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে তল্লাশি চালিয়ে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করে।
এ ঘটনায় সোমবার পাপিয়া ও সুমনকে বিমানবন্দর ও শের-ই-বাংলানগর থানার তিন মামলায় ১৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার দুই আদালত। সেই সাথে তাদের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে এক মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড দেয়া হয়।