কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ সকল নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। মঙ্গলবার জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার ৬২ ইউনিয়নের ৪৭৩টি গ্রাম প্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৪৮ পরিবার।
বন্যার পানি ঢুকছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ইটনা, অষ্টগ্রাম, তাড়াইল, নিকলী, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর ও ভৈরব উপজেলার মানুষ।
অষ্টগ্রামের আটটি, মিঠামইনের সাতটি, করিমগঞ্জের আটটি, নিকলীর ছয়টি, কটিয়াদীর চারটি, বাজিতপুরের আটটি ও ভৈরবের পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল কলেজ, বসতবাড়ি, উপাসনালয় ও হাট-বাজার প্লাবিত। তিন উপজেলার ২০টি গ্রামে নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার নৌকা ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বসতবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে প্রবল বেগে পানি এখনও বাড়ছে। এ অবস্থায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। পানি না কমলে নতুন করে আরও ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে রয়েছে। দুর্গত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা প্লাবিত গ্রামে চাল বরাদ্দ করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন, বাড়ছে দুর্ভোগ
পাউবো সুত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১.৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বিশেষ করে মেঘনা নদীর পানি ভৈরবে বিপদ সীমার ৫.৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, হাওরের পানি কালনী ঘোড়াউত্রা হয়ে মেঘনা নদীতে ভৈরব সেতু দিয়ে নেমে যাবার কথা। মেঘনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিপরীতমুখী প্রচন্ড স্রোতের কারণে পানি নামতে না পেরে কিশোরগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বন্যার সার্বিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় বন্যায় এক হাজার ৫০৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৬২ ইউনিয়নে মোট ১৫৪ আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। মোট ১২ হাজার ৭৪৮ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৪৭ গবাদি পশুকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা আক্তার বলেন, উপজেলার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে।
বানভাসি মানুষের জন্য ইতোমধ্যে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৪৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান জানান, ইতোমধ্যে নতুন করে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি আরও বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ গোটা হাওরে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এভাবে বৃষ্টি হলে নিকলী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ হাওরের ওপর প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় এক ফুট বেড়েছে। বিশেষ করে কালনী-কুশিয়ারার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাওর অঞ্চল ঘুরে দেখেছি।
তিনি বলেন, অনেক এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। সেখানকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। অবস্থা বুঝে এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগে বন্যায় ৭ দিনে ২২ জনের মৃত্যু: বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক