শুক্রবার সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে, র্যাবের পক্ষ থেকেও ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল (৪২) রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে সাবেক লাইব্রেরিয়ানকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জুয়েল বৃহস্পতিবার সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকালে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের তাকে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই জুয়েলের পায়ের ওপর পড়ে যায়। এ সময় বইগুলো তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে জুয়েলের সাথে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন।
সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। পরে উত্তেজিত জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। এ সময় মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেন স্থানীয়রা।
সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট-পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেই সাথে জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছেন।
ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, পুলিশের ওপর হামলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের দায়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ।’
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে। একই সাথে ঘটনা তদন্তে তিন দিনের সময় দিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’