ডেমু ট্রেন চালানোর জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ক্ষতি হওয়ার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ থাকলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ২০টি অচল ট্রেন পুনরায় চালানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
সরকার ২০১৩ সালে চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেড থেকে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন কিনেছিল। সাত বছর ধরে এগুলো চালানোর পর সবগুলো অচল হয়ে পড়ে এবং এখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরামতের জন্য তড়িঘড়ি করে চেষ্টা করছে।
কিছু কর্মকর্তা ডেমু ট্রেনের ক্রয় বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ কিছু ট্রেন কয়েক বছরের মধ্যে অচল হয়ে যায়। তবে ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা লোকোমোটিভগুলো এখনও চালু আছে। এছাড়া, ১৯৮০’র দশকে জার্মান থেকে কেনা কোচগুলো এখনও যাত্রী বহনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এখন দুই থেকে তিন সেট ডেমু ট্রেন ২০২৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে মেরামত করা হবে। অন্য পাঁচটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে চালু করা হবে এবং বাকি ট্রেনগুলো ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেরামত করা হবে।
কর্মকর্তারা জানান, ডেমু ট্রেনগুলোর যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক অংশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে মেরামত না করার কারণে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তাই মেরামত করা জরুরি।
স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা অনুসারে, ডেমু ট্রেনগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো অবস্থায় আছে এবং সামান্য মেরামতের প্রয়োজন, সেগুলো প্রথমে চালু করা হবে। তারা জানান, এই ট্রেনগুলোর মডিউলভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের বাজারে সহজলভ্য যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি দ্বারা মেরামত করা হবে।
যেসব ডেমু ট্রেন আরও মেরামতের প্রয়োজন হবে সেগুলো মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এবং যে ট্রেনগুলোর বড়ধরনের মেরামতের প্রয়োজন তা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হবে।
যদিও ডেমু ট্রেনের জন্য রেল ট্র্যাক স্থাপনের ছয় বছর হয়ে গেছে, তবে ব্যস্ত সময়সূচির জন্য চালু না করায় বেশিরভাগ ট্রেনের ইঞ্জিন অচল হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ, বিপুল পরিমাণ কালো ধোঁয়া নির্গমন, লোড সমস্যা ও ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণে ডেমু অপারেশন স্থগিত করা হয়েছিল।
ডেমু ট্রেনগুলো মেরামতের জন্য কোনো পৃথক ওয়ার্কশপ না থাকায় ২০১৮ সালে পরিষেবার জন্য বিদ্যমান ডিজেল ওয়ার্কশপগুলো ব্যবহার করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
ডেমু ট্রেনগুলোর প্রতিটিতে দুটি মোটরকার ও একটি ট্রেলার কার রয়েছে৷ এই ট্রেনগুলোর দুই পাশে ইঞ্জিন আছে।
প্রথম ডেমু ট্রেনগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের অধীনে বিভিন্ন রুটে চলাচল করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৮-২০০৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মধ্যে ১৩ বছরে ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয় যে রাষ্ট্রচালিত সংস্থাটির এক হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ রেলওয়ে: ঢেলে সাজানোর বিস্তর পরিকল্পনা সরকারের