জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দুই উপজেলায় অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আরও তিনদিন নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।
রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নড়িয়া এলাকায় ডিগ্রিবাজারে ঢাকা-মাওয়া সড়কের কিছু জায়গায় পানি উঠেছে। সেই সাথে পুরো সড়কই পানি ছুঁইছুঁই করছে।
এলাকাবাসী জানান, এরকম পানি বাড়তে থাকলে দুয়েকদিনের মধ্যে রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যাবে। নড়িয়া-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কের পাঁচুখারকান্দি থেকে ইশ্বরকাঠি, পোরাগাছা এলাকার সড়ক সহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ঈশ্বরকাঠি এলাকায় পানি উঠে ঢাকার ও জাজিরা সাথে নড়িয়ার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
ইশ্বরকাঠি গ্রামের সেফালি বেগম বলেন, ‘গরু-বাছুর নিয়ে রান্না বাড়া করে খাইতে সমস্যা, ঘরে পানি ঢুকছে। সাপকোপের ভয়টয় করে। ভোট দেয়ার পরে জনপ্রতিনিধিরা কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। কত মানুষ পানিতে ভাসতাছে কেউ তো আইয়া দ্যাহে না। ’
সরেজমিনে দেখা যায়, নড়িয়ার গাগড়ি জোড়া, পৌর এলাকার ঢালিপাড়া, কলুকাঠি, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর সারেংকান্দি, পাচুখার কান্দি, কাজিয়ারচর, পালেরচর, বড়কান্দি, পূর্বনাওডোবা, জাজিরা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, বন্যাকবলিত জাজিরা ইউনিয়নের পাতালিয়া কান্দি, দুব্বাডাঙ্গা, ভানু মুন্সি কান্দি, হাওলাদার কান্দি, লখাই কাজি কান্দি, জব্বার আলী আকন কান্দি, জব্বার মোল্যা কান্দি ও গফুর মোল্যা কান্দি এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। হাস মুরগি, পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকার মানুষ। ওইসব এলাকায় পাট, রোপা আমন, বোনা আমন, শাক সবজি ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বহু জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নাল মাদবর বলেন, বন্যার পানিতে পাইনপাড়া গ্রামের ৬টি গরু মারা গেছে। আমার দুই শতাধিক হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। এ গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। আমাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্য সহ বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ‘নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ স্থানই পানিতে তলিয়ে গেছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। আর যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০-১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে রবিবার পদ্মার পানি বিপদসীমার ৭-১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উঠা নামা করছে। নদীতে পানির মোট উচ্চতা ছিল ৪৫৭ সেন্টিমিটার। আগামী তিনদিন নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌকিদার জানান, ১০ জুলাই বিকাল থেকে নড়িয়া-জাজিরা আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৩০০ মিটার ঈশ্বরকাঠি এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঢাকার ও জাজিরার সাথে নড়িয়ার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
জাজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে জাজিরার সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে কষ্টে আছে মানুষ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে শুরু করেছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তি রুপা রায় বলেন, বন্যার পানিতে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মোক্তারচর ও পৌর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। নড়িয়া পৌরসভার ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্তত ৯০টি পরিবারের বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে খাদ্যসহায়তা দেয়া হবে। তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাকবলিতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। এখনও কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করা শুরু হয়েছে। তালিকা করা হলে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে।’