সিলেটে ৬২ বছরের মধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে সিলেট আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জেলায় গত মাসে ২৪৫৬ দশমিক ০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা ১৯৫৬ সালের পরে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিকগড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার।কিন্তু এ বছরের জুন মাসে এখানে ১৪৫৬ দশমিক ০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭ দশমিক ৬২ মিলিমিটার বেশি। শতকরা হিসেবে প্রায় ৭৭ দশমিক ৭৮ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে এবারের জুন মাসে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এবারের জুন মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। জুন মাসে গড়ে ২২দিন বৃষ্টি হয়; কিন্তু এবার হয়েছে ২৮ দিন। এ মাসে বৃষ্টির পরিমাণঅনেক বেড়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে জুন মাসে সর্বোচ্চ ১৩৯৪মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।’
তিনি জানান, এ বছরের জুন মাসের ১৮ তারিখে ৩০৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া একশ’ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে ১৭ জুন (১০৯ মি.মি.) ও ২৭ জুন (১১০ মি.মি.)।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি
সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার নেমে যাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ২৪ ঘন্টায় এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৮ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: বন্যা: দোয়ারাবাজারে কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
জুনে বন্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষেরা এখনও পানিবন্দি হয়ে আছেন। অনেকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও অন্যরা মহাসড়ক ও সড়কে তাঁবুতে অবস্থান করছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চার লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবারের ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন সদস্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪০ হাজার বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের দু’একটি পয়েন্ট ছাড়া অধিকাংশ পয়েন্টে বন্যার পানি কমছে। তবে তা খুব ধীরগতিতে। রবিবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও পানি কমা অব্যাহত রয়েছে।
সরকারি বরাদ্দ
সিলেটে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩ জুলাই পর্যন্ত দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে সরকার। এছাড়া বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে এক হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবুর রহমান।
এছাড়া সরকার শিশুখাদ্য ও পশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং শুকনো খাবারের জন্য ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট প্রদান করেছে।
মজিবুর রহমান বলেন, বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগদ বিতরণের জন্য ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং পশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি