বিশ্ব
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৪, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোরকে হত্যা
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাসের ছোড়া বিরল রকেট হামলার পর এই বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
রবিবার (৬ এপ্রিল) ইসরায়েলি হামলায় এসব হতাহত হয় বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।
অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিত তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ১৪ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০, আহত ১৬২
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড রবিবার সকালে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট হামলা চালানোর পর সহিংসতা বেড়ে যায়। রকেট হামলাকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি 'গণহত্যার' প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছে হাসাস।
রকেট নিক্ষেপকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে নিন্দা জানিয়ে 'কঠোর জবাব' দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া রকেটের বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছে। তবে একটি রকেট আশকেলন শহরে আঘাত হানলে তিনজন সামান্য আহত হয়েছেন। এর জবাবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দেইর আল-বালাহসহ মধ্য গাজার সন্দেহভাজন রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতভর লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে রবিবার গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নতুন করে চালানো এসব হামলায় অন্তত ১ হাজার ৩৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩ হাজার ২৯৭ জন আহত হয়েছেন।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রবিবার তুরমাস আইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোর ওমর মোহাম্মদ রাবেয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
আইডিএফ দাবি করেছে, সৈন্যরা ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে লড়াই করার সময় বেসামরিক নাগরিকরা পাথর নিক্ষেপ করেছিল, যার ফলে একজন নিহত এবং দু'জন আহত হন।
তবে বিনা উসকানিতে এই গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। তুরমাস আইয়ার মেয়র একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীকে সহিংসতায় উসকানিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: গাজায় চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীরে জানুয়ারি থেকে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে আইডিএফ। এসব অভিযানকে ইসরায়েল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান হিসেবে বর্ণনা করছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি নেতা ও বাসিন্দারা ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছে—যা ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলছে।
২৬৬ দিন আগে
ইসরায়েলে ঢুকতে দেওয়া হলো না দুই ব্রিটিশ এমপিকে
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছড়ানোর’ অভিযোগে যুক্তরাজ্যের দুই এমপিকে দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটেছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নৃশংস গণহত্যায় মেতে উঠেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে অধিকৃত পশ্চিমতীর ভ্রমণ করার কথা ছিল তাদের। স্থানীয় সময় শনিবার (৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির ওই এমপিরা হলেন ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহামেদ। এ ঘটনায় তারা স্তম্ভিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বার্কশায়ারের এয়ারলি ও উডলির প্রতিনিধিত্ব করছেন ইউয়ান, আর শেফিল্ড সেন্ট্রালের এমপি আবতিসাম।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সহযোগীদের নিয়ে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন তারা। তবে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাদের। বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্সে আরবেলের আদেশে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় তেল আবিব প্রশাসন।
ইসরায়েলের অভিবাসন মন্ত্রীর বরাতে স্কাই নিউজের খবর বলছে, তাদের ইসরায়েলবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নথিভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই ব্রিটিশ এমপি। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি দাতব্য সংস্থার সহায়তায় ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন বলে তারা জানান।
এই সফর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের একটি অংশ ছিল বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে এই প্রতিনিধি দলকে তেল আবিবের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন।
ইসরায়েল প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, অকার্যকর ও গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা ইসরায়েল প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যুক্তরাজ্যের এমপিদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
অবশ্য ইসরায়েলের নিজেদের সীমানা নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডনোচ।
ইউয়ান ও আবতিসাম গত বছর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর বেশ কয়েকবার পার্লামেন্টে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তারা। একারণেই তাদের এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে আবতিসামের নেতৃত্বে ইসরায়েলের পণ্য নিষিদ্ধ করতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের ৬১ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এদিকে, উত্তর গাজায় বসতি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়ায় ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ও বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন ইউয়ান। এ ছাড়াও গাজায় সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের জীবন নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার বিমানবন্দরের ঘটনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে ওই দুই এমপি জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়ে পার্লামেন্টে সরব ছিলেন তারা। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন তারা। পার্লামেন্টে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার তাদের রয়েছে। সেই অধিকার বলেই ইসরায়েল ও গাজা সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন তারা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০, আহত ১৬২
পার্লামেন্টের কাজের সুবিধার্থে পশ্চিমতীরে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে জানান তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। পরদিন থেকেই হামাসশাসিত গাজায় ইতিহাসের বর্বোরোচিত হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলার এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধলাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়ার বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, যুক্তরাজ্য গাজার এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করে এই সংঘাতের শেষ চান তারা।
২৬৬ দিন আগে
আল-আকসায় অবৈধ ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হানা
অধিকৃত জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে জোরপূর্বক ঢুকে পড়েছে পাঁচ শতাধিক অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইহুদি। রবিবার (৬ এপ্রিল) ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ করেছে।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদুলুর খবর বলছে, ইসরাইলি পুলিশের নিরাপত্তা মসজিদ চত্বরে ঢুকে পড়ে তারা। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ উৎসব ‘পাসওভারের’ সময় এই ধরনের হামলা বা ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ইসরাইলি পুলিশ আল-আকসায় ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের প্রবেশে নানা রকম কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছে। এতে ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম এই স্থানটিতে মুসল্লিদের স্বাভাবিক ইবাদতের পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। আল-আকসা মসজিদ বহুদিন ধরেই ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। ইসরাইলি বসতকারীদের এই ধরনের আগ্রাসী আচরণ আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনি ধর্ম ও আওকাফ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে মসজিদটিতে ২১ বারেরও বেশি হানা দিয়েছে অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তেরো হাজার ৬৪ অবৈধ বসতিস্থাপনকারী মসজিদটিতে জোর করে ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুন: গাজার হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা, হামাস নেতাসহ নিহত ৫
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন যখন মুসল্লিরা নামাজের জন্য জমায়েত হন, তখন ইসরাইলি উগ্র ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী মসজিদটিতে অনুপ্রবেশ করে। এরআগেও সে কয়েকবার একই কাণ্ড করেছে। তার এই উসকানিমূলক পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান।
এছাড়া ইসরাইলি অবরোধে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। তারা জানিয়েছে, গেল একমাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো বাণিজ্যিক সরবরাহ কিংবা সহায়তা ঢুকতে পারছে না।
কাজেই গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
২৬৬ দিন আগে
মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে গত মাসের শেষ নাগাদ একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সাত দশমিক ৯ মাত্রার ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত মোট ৮৯টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়েছে দেশটিতে।
স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগ।
কম্পনগুলো ২.৮ থেকে ৭.৫ মাত্রার মতো ছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মাসের ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই আফটারশকগুলো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব আফটারশকে দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে কারণে অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ‘ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তাতেই আফটারশক হয়ে থাকে।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মাটির উপরিভাগের ৭০০ কিলোমিটার নিচেও ভূমিকম্প হতে পারে। আর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি হয়েছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অনেক অগভীরে হওয়ায় কম্পনের পরিমাণ বেশি ছিল।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি অনেক বড় ছিল। জাপানের হিরোশিমায় আঘাত হানা মার্কিন পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়েছে এই ভূকম্পন থেকে।
যখন পৃথিবীর দুটি খণ্ড হঠাৎ করে পরস্পর থেকে সরে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেখান থেকে ভূখণ্ডটি সরে যায়, সেটিকে ভূগর্ভের ফাটল বলা হয়। কখনো-কখনো ভূমিকম্পের ফোরশক (পূর্বাঘাত) হয়ে থাকে। বড় ভূমিকম্পের আগে যে ছোট ছোট কম্পন হয়, সেটাই ফোরশক।
ভূমিকম্পের প্রধান আঘাতকে মেইনশক (মূলকম্পন) বলা হয়। এই মূলকম্পনের পরে অনেক সময় আফটারশক হয়ে থাকে। এগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প, যেটা মূলকম্পনটি যেখানে ঘটে, সেখানেই হয়ে থাকে।
মূলকম্পনের ওপর ভিত্তি করে কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা কয়েক বছরও এই আফটারশক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
২৮ মার্চ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। ভুমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে এই ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই দুর্যোগ। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়। সোনার পাত উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঝলমলে এই শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
২৬৭ দিন আগে
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০, আহত ১৬২
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬২ জন।
নিহতদের মধ্যে আজ ভোর থেকে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন ফিলিস্তিনি। মিডল ইস্ট আই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন শিশু নিহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজায় চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ।
গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছরের ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহতে এই হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছে আইডিএফ।
হত্যাকাণ্ডের শিকার রেফাত রাদওয়ানের মোবাইলে ধারন করা ভিডিওটি প্রকাশের পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসে। ত্রাণবাহী একটি দল নিহত চিকিৎসাকর্মীদের লাশগুলো খুঁজে পায়। এসময় তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করেছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাকর্মী ও ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। যা নতুন প্রকাশিত একটি ভিডিওতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এটি আন্তর্জাতিক আইনে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
গাজায় ১৫ জন চিকিৎসা ও ত্রাণ কর্মীর হত্যাকাণ্ডকে ‘নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধ’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক প্রধান এবং মেডিয়েশন গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মার্টিন গ্রিফিথস।
ওই ঘটনায় ৮ জন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ৬ জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলও অসংখ্য মৃতদেহসহ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এতো বেশি যে, ভূখন্ডটির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
২৬৭ দিন আগে
গাজায় চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছর ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে গত ২৩ মার্চ এই হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছে আইডিএফ।
রাফাহর কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করেছিল আইডিএফ। এতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
ওই ঘটনার পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিল যে, গাড়ি বহরটিকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালিয়েছিল। কারণ, বহরটির গাড়িগুলোর হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই অন্ধকারে চালানো হয়েছিল। তারা আরও দাবি করেছে যে, এসব যানবাহন চলাচলের আগে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তবে নিহত হওয়া একজন জরুরি চিকিৎসাকর্মীর মোবাইলে ধারন করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আহতদের সাহায্য করতে যাওয়ার সময় গাড়িগুলোতে আলো জ্বলছিল। গাড়িগুলোতে স্পষ্ট লোগো লাগানো ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জোর দিয়ে বলেছে যে, ওই বহরে থাকা কমপক্ষে ছয়জন চিকিৎসাকর্মী হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তাদের দাবির পক্ষে। ইসরায়েলি সেনারা যখন গুলি চালিয়েছিল, তখন তারা নিরস্ত্র ছিল বলে স্বীকারও করেছেন তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা মোবাইল ভিডিওতে দেখা যায়, ভোর হওয়ার ঠিক আগেই যখন গাড়িগুলো সড়কে চলছিল, ঠিক তখনই কোনো প্রকার সতর্ক বার্তা না দিয়েই গুলি চালানো শুরু করে সেনারা।
পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধারণ করা ভিডিতে রেফাত রাদওয়ান নামের ওই চিকিৎসাকর্মীকে শেষ প্রার্থনা করতেও শোনা যায়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ও ক্ষীণ কণ্ঠে বলছিলেন, 'আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। এই পথটাই আমি বেছে নিয়েছি মা, মানুষকে সাহায্য করার জন্য।’
আইডিএফের এক কর্মকর্তা শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে সৈন্যরা তিন হামাস সদস্যকে বহনকারী একটি গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন সাহায্যের জন্য ওই এলাকায় পৌঁছায়, তখন ইসরায়েলের আকাশ থেকে নজরদারিকারীরা ঘটনাস্থলে থাকা সেনাদের তাদের অগ্রসর হওয়াকে 'সন্দেহজনক’ বলে জানায়।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে এসে থামে, সৈন্যরা ধরে নিয়েছিল যে তারা হুমকির মধ্যে রয়েছে এবং জরুরি দলের কেউই সশস্ত্র ছিল— এমন কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও গুলি চালানো হয়।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে যে, অ্যাম্বুলেন্সগুলো বাতি না জ্বালিয়ে অগ্রসর হয়েছিল বলে তারা পূর্বে যে বক্তব্য দিয়েছিল তা ভুল ছিল। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাদের দায়ী করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলো স্পষ্টভাবে লোগো দিয়ে চিহ্নিত করা ছিল এবং জরুরি চিকিৎসাকর্মীরা রিফ্লেক্টিভ হাই-ভিস ইউনিফর্ম পরিধান করেছিলেন।
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, সৈন্যরা বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৫ জন মৃত কর্মীর দেহ বালিতে পুঁতে রাখে। রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য পরের দিন গাড়িগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ওই এলাকায় চলাচল নিরাপদ করার ব্যবস্থা করতে না পারায় ঘটনার এক সপ্তাহ পরও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ত্রাণবাহী একটি দল যখন লাশগুলো খুঁজে পায়, তখন তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে। আর সেই মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওগুলো থেকে এসব তথ্য উঠে আসে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার কোনো চিকিৎসককে হাতকড়া পরানোর কথা অস্বীকার করে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেন, খুব কাছ থেকে তাদের হত্যা করা হয়নি—যেমনটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বেঁচে যাওয়া একজন চিকিৎসা কর্মী বিবিসিকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলোর লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তার সহকর্মীদের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ঘটনার ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে যে তারা ‘ঘটনার প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি পরিচালনা করবে।’
ওই ঘটনায় ৮ জন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ৬ জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলও অসংখ্য মৃতদেহসহ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করত ইসরায়েলি বাহিনী
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এতো বেশি যে, ভূখন্ডটির নজনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
২৬৭ দিন আগে
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ভোরে চালানো বিমান হামলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলের আরও গভীরে প্রবেশ করেছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করেছে।
হামাস পরিচালিত গাজার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে বিমান হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অনেকেই একই পরিবারের সদস্য। হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিতদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
আরও পড়ুন: নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, পাল্টা প্রস্তাব ইসরায়েলের
এই হামলার মাত্র একদিন আগেই ইসরায়েলি হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে চাপ সৃষ্টি করতেই ইসরায়েল গাজায় হামলা বাড়িয়েছে। ইসরায়েলি বাহিননীর হামলায় গাজায় গত দুই সপ্তাহেই শত শত লোক মারা গেছেন।
শুক্রবার ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ বাড়ানোর জন্য তাদের স্থল বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করেছে।
স্থল অভিযানের আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উত্তর গাজার কিছু অংশ থেকে খালি করার জন্য বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছিল।
গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলও অসংখ্য মৃতদেহসহ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করত ইসরায়েলি বাহিনী
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এতো বেশি যে, ভূখন্ডটির নজনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
২৬৮ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে কী ভাবছে দেশগুলো?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চান বলে অভিমত দিয়েছেন শুল্কের আওতাধীন কয়েকটি দেশের নেতারা। ভিন্নমতও রয়েছে অনেক দেশের। স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে শুল্কারোপের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। শত্রু-মিত্র পরোয়া না করেই তিনি শুল্কারোপ করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যেসব দেশ তাদের পণ্যে শুল্কারোপ করে থাকে, সেসব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্কারোপ করবেন তিনি, কথা রেখেছেনও।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধ পরিকল্পনার চ্যাটগ্রুপে ভুলে সাংবাদিককে যুক্ত করলেন ট্রাম্প কর্মকর্তারা
আবার সমপরিমাণ না করে অর্ধেক শুল্কারোপ করে নিজের উদারতার পরিচয় দিয়েছেন—এমন দাবি তিনি নিজেই করেছেন। যেমন: বাংলাদেশ আমেরিকান পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্কারোপ করে, জবাবে এবার তিনি বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বেঁধে দিয়েছেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের একটি ভিত্তিরেখা দেওয়া হয়েছে।
পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে কী ভাবছে দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। জবাবে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেন, ‘ওয়াশিংটন এখনো তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটির আরোপিত শুল্কের প্রভাব কমাতে যুক্তরাজ্য একটি বাণিজ্যচুক্তি করতে আগ্রহী।’
রেনল্ডস বলেন, ‘কেউই বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না, আমাদের উদ্দেশ্য একটি চুক্তি নিশ্চিত করা।’ তবে বিকল্প পদক্ষেপ নিয়েও প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে যুক্তরাজ্য প্রশাসন।’
অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র জাপান। শুল্কারোপের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার কথা জানিয়েছেন জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি।
তিনি জানান, ‘প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
এ কারণে টোকিও এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার থেকে বিরত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই উদ্যোগ না যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ হবে, না যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করা হয়েছে তাদের কোনো কাজে আসবে।’
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ ঠেকাতে শুল্কারোপের বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তার প্রশাসন।’
এ সময়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের দুর্বল করে অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিকে সুবিধা দেবে বলে মত দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্কের জবাবে পাল্টা শুল্কারোপের কথা জানিয়েছে ব্রাজিল প্রশাসন। দেশটির পার্লামেন্টে এ সম্পর্কিত একটি বিলও পাশ করা হয়েছে বলে এপির খবরে বলা হয়েছে।
একই পথে হাঁটতে চলেছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী ম্যাক কার্নি। তিনিও পাল্টা শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তা সুষ্পষ্ট করে জানাননি তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্যে বড় আঘাত
ট্রাম্পের আকস্মিক এই শুল্কারোপে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। এরইমধ্যে এই আশঙ্কা বাস্তবে ফলতেও শুরু করেছে। বুধবারের ঘোষণার পরেই বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। তেলের দাম বেড়েছে ২ ডলারের বেশি।
এই শুল্কারোপ দীর্ঘায়িত হলে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) ভেঙে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিগগিরই যেসব সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দার ঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংসের প্রধান ওলু সোনোলা বলেন, চলতি বছরে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে গড়ে ২২ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প, যা গত বছর ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়; বরং বিশ্ব অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অনেক দেশেই মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলেও মত দেন তিনি।
এই শুল্ক ধার্য করায় অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় জর্জরিত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিজ নিজ দেশে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই এই অতিরিক্ত শুল্ক যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। ট্রাম্প প্রশাসন লাওসের ওপর ৪৮ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ ও মিয়ানমারের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে।
মিয়ানমারের অর্থনীতি এরইমধ্যে চরম সংকটে, গত সপ্তাহে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজারের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবেন, করেছেন মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ।
ক্ষতি কমাতে কি করতে পারে দেশগুলো
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ পণ্য আমদানি করে থাকে। ট্রাম্পের শুল্কারোপের কারণে নিজ দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে গাড়িনির্মাতাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। এতে সেখানকার অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে সম্পর্কে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ার বানিজ্যমন্ত্রী। এর ফলে তারা অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারবেন বলে আশা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চীনা পণ্যে শুল্কারোপ করেই যাচ্ছেন। চুপ হয়ে বসে নেই বেইজিংও। ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন। এবারও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
পাশাপাশি একতরফাভাবে শুল্কারোপ না করে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।
তবে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ট্রাম্পের আরোপিত নতুন এই শুল্ক মেক্সিকোর ওপর কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাম।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের ওপর শুল্কারোপ করলেই যে একই কাজ আমাদেরও করতে হবে; এমন কোনো কথা নেই। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তাই করবো। এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।’
ট্রাম্পের শুল্কারোপ অযৌক্তিক
হোয়াইট হাউস ঠিকঠাকভাবে হিসেব না করেই শুল্কারোপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই শুল্কারোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, তবে ক্যানবেরা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবে না।’
আলবানিজ বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি পাল্টা শুল্কারোপ করবেন। অষ্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তা সত্ত্বেও তিনি ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন, এটি হওয়ার কথা ছিল শূন্য। ট্রাম্প যেটি করেছেন, সেটি কোনো বন্ধু আচরণ হতে পারে না।’
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অষ্ট্রেলিয়ার মালিকানাধীন ছোট্ট দ্বীপ নরফকের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। অঞ্চলটিতে মাত্র দুই হাজার মানুষের বসবাস, অর্থনীতি পর্যটননির্ভর।
দ্বীপটির প্রশাসক জর্জ প্লান্ট জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তারা কোনো পণ্য রপ্তানি করেন না। তাই শুল্কারোপের প্রশ্নও ওঠে না। অথচ ট্রাম্প তাদের ওপর ২৯ শতাংশ পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন।
নিউজল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লেও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে তারা ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেননি। তবে তারা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের লাভবান হওয়ার আশা ক্ষীণ
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এই পাল্টা শুল্কারোপ করার দাবি করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনতে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান।
তবে এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান নীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।
এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘ট্রাম্পের এই শুল্কারোপের মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য নীতির মূলে থাকা নয়া-উদারতাবাদের মৃত্যু ঘটেছে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ কতটা ভোগাবে বাংলাদেশকে?
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ দেশটির অর্থনীতির জন্য খুব কমই ফলপ্রসূ হবে; বরং বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করবে— এমনটাই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়ন নামক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ম্যাট্টেও ভিল্লা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু শুল্কারোপ করেছে, ইউরোপকেও অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে। সম্ভবত ব্রাসেলস আশা করছে, তারা যদি কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেন, তাহলে ট্রাম্প বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং শুল্কারোপ থেকে সরে আসবেন।’
২৬৯ দিন আগে
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ভন দের লিয়েন।
এর আগে, স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন প্রশাসনের জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনতে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ৫০ বছর ধরে করদাতাদের ছাড় দেওয়া হলেও তা এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও কারখানাগুলো ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ
তবে তার এই পদক্ষেপকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান। লাখ লাখ মানুষের ওপর এই শুল্কারোপের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উরসুলা বলেন, ‘এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে নিত্যপণ্য, পরিবহন ও ঔষধের দাম বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন আয়ের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
তবে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। শুল্কারোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইইউ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রয়োজনে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান।
বুধবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আরোপিত মার্কিন শুল্ক নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন আরও অনেকে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২৭০ দিন আগে
ফিলিস্তিনিদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করত ইসরায়েলি বাহিনী
গাজা যুদ্ধে কুকুরের পরিবর্তে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল (হিউম্যান শিল্ড) হিসেবে ব্যবহার করত ইসরায়েলি সেনারা। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেডের এক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। দিনে অন্তত ছয়বার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের এভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সময় রবিবার (৩০ মার্চ) ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম গোপন করে এসব জানান ওই সেনা কর্মকর্তা। তিনি নয় মাস ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি একজন নন-রিজার্ভিস্ট সেনা। সামরিক বাহিনীতে নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেড হলেন তারা, যারা রিজার্ভ ফোর্স কিংবা সংগঠনের সদস্য না। অর্থাৎ তারা সামরিক বাহিনীর নিয়মিত, পূর্ণকালীন ব্রিগেড। রিজার্ভিস্টরা সামরিক বাহিনীতে খণ্ডকালীন সদস্য।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ৯ ফিলিস্তিনি নিহত
প্রতিবেদনে জানা গেছে, নিয়মিতই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গেছে, এটিকে রণনীতি হিসেবে ব্যবহার করতেন তারা। যেকোনো সামরিক অভিযানের আগে গাজার বাড়িগুলোতে জোর করে ফিলিস্তিনি কোনো নাগরিককে প্রবেশ করিয়ে তারা নিশ্চিত হতেন; সেখানে কোনো বিষ্ফোরক বা হামাসের যোদ্ধা রয়েছেন কিনা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ফিলিস্তিনিদের এভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পদ্ধতিকে আইডিএফ সেনারা ‘মসকিউটো প্রোটোকল’ (মশা প্রোটোকল) নামে একটি কোড নামে অভিহিত করত।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার দুমাস পরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম এই অমানবিক রণনীতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাধারণত এই কাজে সেনারা কুকুর ব্যবহার করে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে সে সময় সেনাবাহিনীতে কুকুরের অভাব ছিল না। অথচ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের একাজে ব্যবহার করা হত। সেনারা এসব নাগরিকদের ‘শাবিশ’ বলে অভিহিত করতেন।’
প্রতিটি প্লাটুনে একজন করে অর্থাৎ প্রতিটি ব্রিগেডে ৩৬ জন শাবিশ রাখা হয়। আন্তজার্তিক মানবাধিকার আইনে যেকোনো যুদ্ধে মানবঢাল ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতের রোম সংবিধির অধীনে এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
এ বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত মাসে ছয়টি তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী এই ব্যাপারে আন্তরিক হলে ১ হাজার তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে অভিমত দেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে এই পদ্ধতি এতটাই স্বাভাবিক যে, আমার মনে হয়েছে আমি হ্যালুসিনেট করছি। আমি জানিনা কোন পরিস্থিতি বেশি খারাপ—সেনাবাহিনী জানত না যে অভিযানে কি হচ্ছে; নাকি তারা জেনেও কিছু করেননি।’
এ বিষয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও মানবঢাল ব্যবহার বেড়েছে। বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে তা বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে বরং এটিকে অভিযানের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মত দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, গাজার বিভিন্ন বাড়িতে অভিযানে মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে রোবট, কুকুর কিংবা কুকুরও ব্যবহার করা যায়।
এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অনুসন্ধান করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিনা কারণে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলার পক্ষপাতি নন তিনি।
২৭০ দিন আগে