জীবনধারা
সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বাংলাদেশের উপকূল থেকে বিশাল জলরাশির উপর বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত বুককে আশ্রয় করে আছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলো। চর নামের প্লাবনভূমিগুলো অঙ্গে ধারণ করে আছে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের পলি মাটিকে। এই দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যেকটিতে আছে আদিম জীবনের ঘ্রাণ। আছে অপরিচিত সম্প্রদায়ের মাঝে সাবলীল প্রবেশাধিকার। জেলে গ্রামগুলোর সংগ্রামী দিন যাপন, আতিথেয়তা, আর সংস্কৃতি নিমেষেই আপন করে নেয় স্তম্ভিত পর্যটককে। এমনি শত শত দ্বীপের মাঝে অন্যতম একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। সমুদ্র-বিলাসীদের এই চিরন্তন গন্তব্যে পাড়ি জমাতে চলুন, এই দ্বীপাঞ্চলে ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সোনাদিয়ার ভৌগলিক অবস্থান
বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান কক্সবাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত মহেশখালী। এই উপজেলার অন্তর্গত কুতুবজোম ইউনিয়নের ছোট্ট একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপটি একটি খাল দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে মহেশখালী দ্বীপ থেকে।
ভূতত্ত্ববিদ ও ভূগোলবিদদের মতে, বাঁকখালী নদীর স্রোতধারা ও মহেশখালী প্রণালীর সঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের সংঘর্ষে এই দুই এলাকার ঠিক মাঝে বালি জমে জমে জন্ম নিয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপ।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
সোনাদিয়া দ্বীপের নামকরণের ইতিহাস
১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে সাগরের মাঝে জেগে ওঠা এই চরে মানুষের বসতি গড়ে উঠে। এরই মাঝে এ দ্বীপের সঙ্গে জড়িয়ে যায় রোমাঞ্চকর সব কিংবদন্তি।
একদা এক বিদেশী জাহাজ মহেশখালীর উপকূলের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মালবাহী এই বাণিজ্যিক জাহাজে ছিল প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ। নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুদের সংঘর্ষে পুরো জাহাজটি সাগরের নিচে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই দূর্ঘটনাস্থলে বালি ও পলি জমে আস্ত এক দ্বীপের সৃষ্টি হয়। স্বর্ণবাহী জাহাজডুবির ঘটনার কারণে স্থানীয় জেলেদের মাঝে দ্বীপটি স্বর্ণ দ্বীপ বা সোনাদিয়া দ্বীপ নামে পরিচিতি পায়।
এই জায়গাটি নিয়ে লোকমুখে আরও মজার মজার গল্প শোনা যায়। প্রায় পৌনে তিনশ’ বছর আগের কথা। একবার লুতু বহদ্দার নামের এক জেলের জালে এক অদ্ভূত ও রহস্যময় পাথর ধরা পড়ে। পাথরটি সে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে আসে এবং তা ঘরে ঢোকার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ: বাংলার দার্জিলিং যাওয়ার উপায় ও খরচের বৃত্তান্ত
একদিন এক নাপিত এই সিঁড়িতে বসে কাঁচিতে ধার দেওয়ার সময় অসাবধানে পাথরটি ভেঙ্গে ফেলে। আর সঙ্গে সঙ্গেই তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটি স্বর্ণমুদ্রা। অতঃপর বহদ্দার ও নাপিত সেই স্বর্ণমুদ্রা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। লুতু বহদ্দার যে স্থানে জাল ফেলেছিল সেটি ছিল মূলত একটি চরের সৈকত। আর সেই চরটিই আজকের সোনাদিয়া দ্বীপ।
কেউ কেউ মনে করেন, এক সময় এখানে মুক্তার চাষ হতো। সেই মুক্তা কেনা-বেচা হতো স্বর্ণের দামে। আর এই কারণেই দ্বীপের নামকরণ করা হয় সোনাদিয়া।
৬০৬ দিন আগে
অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
বর্তমানে গরমের তীব্রতা অসহনীয় করে তুলেছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা আশঙ্কাজনক। অত্যধিক ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আর এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এই কম বয়সী শিক্ষার্থীরাই। তাই উষ্ণ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপের। উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তাই চলুন, গরমের তীব্রতা থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
তীব্র গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখার ১০টি উপায়
দিনের তীব্র গরমের সময় সূর্যালোক এড়িয়ে চলা
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি সবচেয়ে বেশি তীব্র থাকে। আর দিনের এই সময়টাতেই শিক্ষার্থীরা সাধারণত ক্লাস এবং স্কুল-পরবর্তী খেলাধুলার জন্য ঘরের বাইরে থাকে। তাই এই সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাগুলোতে সর্বাত্মকভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ-গাছালি ঘেরা প্রাকৃতিক ছায়া শোভিত স্থান সর্বোত্তম। তবে এর পাশাপাশি ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খেলাধুলার সময় ছাত্রছাত্রীরা যেন উন্মুক্ত জায়গায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সূর্যালোকের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য আরেকটি উত্তম উপায় হলো ছাত্রছাত্রীদের ইনডোর গেমের প্রতি আকৃষ্ট করা। এতে করে তাদের বিনোদনও হবে, একই সঙ্গে তাদের শরীরও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবে। এটি ছুটির দিনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
গরমের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ঘরের বাইরে থাকার সময়ে হাল্কা বুনন, হাল্কা ও এক রঙের কাপড় পড়তে হবে।
হাতাকাটা শার্ট বা গেঞ্জি এবং হাফ প্যান্ট বা শর্টস এক্ষেত্রে উপযুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু কাপড়ের উপাদান এবং শিক্ষার্থীদের শরীরের কতটা অংশ উন্মুক্ত থাকছে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া আবশ্যক।
এছাড়া হাতাকাটা বা শর্টসের ক্ষেত্রে কাপড় যদি অনেক মোটা বা ভারী হয়, তাহলে তা আরও গরম করে তুলতে পারে। উপরন্তু, রোদের সংস্পর্শে উন্মুক্ত হাত-পায়ের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। তাই শরীর যতটা ঢেকে রাখা যায় ততই ভালো। অর্থাৎ লম্বা হাতা এবং লম্বা প্যান্ট বেছে নেওয়া উত্তম। আর কাপড় ঢিলেঢালা ফিটিং ও হাল্কা রঙের হলে তা বাতাস চলাচলের জন্য উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সকালে স্কুলে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাদের শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন লাগিয়ে দিতে হবে। কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছোট থেকে অভ্যাস করানো হলে কিশোর বয়সীরা নিজেরাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে শিখে যাবে। এই অভ্যাস কার্যকর করার জন্য প্রতিবার ঘর্মাক্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া স্কুলের খেলাধুলার পর বাচ্চাদের সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
একটি গল্ফ বলের মাপের সমান বা প্রায় ২৮ গ্রাম সানস্ক্রিন পুরো শরীরে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে শরীরের যে অংশগুলো সাধারণত এড়িয়ে যায় সেগুলোতে বেশি নজর দেওয়া উচিত। যেমন- কানের পিছনে, ঘাড়ে, হাত ও পায়ের উল্টো পিঠের অংশগুলো।
ছাতা ব্যবহার করা
স্কুলে যাওয়া ও আসা নিয়ে প্রতিদিনই বাচ্চাদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় রোদের আলোয় কাটাতে হয়। এই সময়টিতে শুধুমাত্র সানস্ক্রিনের উপর নির্ভর করাটা যথেষ্ট নয়। সূর্যালোক প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান ছাড়াও এ সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছাতা ব্যবহার করা। খুব নান্দনিক এবং রঙচঙা নয়, এ ক্ষেত্রে খেয়াল দিতে হবে ছাতাটি রোদ থেকে কতটা ছায়া দিতে পারছে তার উপর। মুষলধারে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে যেভাবে ছাতা ব্যবহার করা হয়, এক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিত। আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের এই অভ্যাস তৈরিতে আদর্শ হতে পারে পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ঘরকে ঠান্ডা রাখা
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হলে সেই ঘরকেও রাখতে হবে তাপমুক্ত। কেননা বাইরে থেকে রোদের আলো ঘরে ঢুকে অথবা ঘরের দেয়াল রোদ শুষে নিয়ে ঘরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এ অবস্থা থেকে শতভাগ মুক্তি না মিললেও সম্ভাব্য কার্যকর উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে।
যেমন হলুদ এবং হ্যালোজেন বাল্বগুলো প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। তাই এগুলোর বদলে ব্যবহার করতে হবে এলইডি লাইট, যা ঘর ঠান্ডাও রাখে আবার বৈদ্যুতিক খরচের দিক থেকেও বেশ সাশ্রয়ী।
দিনের উত্তপ্ত সময়গুলোতে জানালার পর্দা টেনে দিতে হবে। জানালা বন্ধ রাখা হলে সূর্যালোকের ঘরের ভেতর ঢুকতে আরও একধাপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। ঠিক সন্ধ্যার দিকে পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করবে। এতে করে দিনের বেলা বাইরের গরম বাতাস ভেতরে আসবে না। রাতভর ঘরের ভেতর জমা হওয়া ঠান্ডা বাতাস দিনের বেলা বাইরে যেতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
৬০৯ দিন আগে
থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
থ্যালাসেমিয়া সৃষ্টিকারী জিন মিউটেশনের সর্বপ্রথম উদ্ভব ঘটেছিল ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে আংশিক সুরক্ষা হিসেবে। তাই বিশ্বের যে অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি সেখানে থ্যালাসেমিয়া সক্রিয়। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপ এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর বংশানুক্রমিক যোগসূত্র থাকে তাদের পূর্বপুরুষের সঙ্গে। থ্যালাসেমিয়া রোগ দ্রুত শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এতে সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্তি না মিললেও জটিলতাগুলো অনেকাংশে কমানো যায়। তাই চলুন, থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ, ও নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
থ্যালাসেমিয়া কী
লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন অণু হিমোগ্লোবিন সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করে। থ্যালাসেমিয়া এমন একটি বংশানুক্রমিক ব্যাধি, যার ফলে এই হিমোগ্লোবিনে অসঙ্গতি দেখা দেয়। ফলে লোহিত রক্তকণিকা অত্যধিক মাত্রায় ধ্বংস হয়ে শরীরকে রক্তাল্পতার দিকে ঠেলে দেয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ
মা-বাবার মধ্যে যে কোনো একজনের থ্যালাসেমিয়া হলে সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হয়। এটি মূলত জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। এই পরিবর্তনটি ঘটে কোষের ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিইক এসিড) তে, যা হিমোগ্লোবিনকে প্রভাবিত করে।
হিমোগ্লোবিন অণুগুলো আলফা এবং বিটা নামক চেইন দিয়ে তৈরি। থ্যালাসেমিয়ায় এই আলফা বা বিটা চেইনের উৎপাদন কমে যায়। আর এ কারণে থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই ধরনের- আলফা-থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, নির্ণয়ের প্রক্রিয়া, চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
আলফা-থ্যালাসেমিয়ায় রোগের তীব্রতা নির্ভর করে পিতামাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিবর্তিত জিন সংখ্যার উপর। যত বেশি পরিবর্তিত জিন, থ্যালাসেমিয়া তত গুরুতর।
অন্যদিকে, বিটা-থ্যালাসেমিয়ায় হিমোগ্লোবিন অণুর কোন অংশ প্রভাবিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে রোগের মাত্রা কম-বেশি হয়।
আলফা-থ্যালাসেমিয়া
এই রোগে হিমোগ্লোবিনের আলফা চেইনকে প্রভাবিত করতে সর্বোচ্চ চারটি পরিবর্তিত জিন অংশ নেয়। মা ও বাবার প্রত্যেকের কাছ থেকে দুটি করে।
শুধু একটি জিন পেয়ে থাকলে আক্রান্তের দেহে রোগের কোন লক্ষণ থাকে না। কিন্তু এরপরেও আক্রান্তের দেহ থেকে পরবর্তীতে তার সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
দুটি জিনের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ হালকা হয়। আর এই অবস্থাতেই রোগীকে আলফা-থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বলা হয়।
তিনটি জিন প্রাপ্ত হলে উপসর্গ মাঝারি থেকে গুরুতর হয়। বংশানুক্রমিকভাবে চারটি জিন পাওয়াটা দুর্লভ। এই ক্ষেত্রে শিশুরা প্রায়ই জন্মের পরেই মারা যায় বা আজীবন ট্রান্সফিউশন থেরাপির প্রয়োজন হয়।
বিটা-থ্যালাসেমিয়া
রোগের এই সংস্করণে হিমোগ্লোবিন বিটা চেইনকে প্রভাবিত করতে দুটি পরিবর্তিত জিন অংশ নেয়। সন্তান মা ও বাবার প্রত্যেকের কাছ থেকে একটি করে জিন পায়।
একটি জিন পেলে রোগের হালকা লক্ষণ দৃশ্যমান হয়। এই অবস্থাকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা বিটা-থ্যালাসেমিয়া বলা হয়।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
দুটি জিন প্রাপ্ত হওয়া মানেই রোগ মাঝারি থেকে গুরুতর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি অ্যানিমিয়া বলা হয়।
দুটি বিটা হিমোগ্লোবিন জিন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা সাধারণত জন্মের সময় সুস্থ থাকে। কিন্তু প্রথম দুই বছরের মধ্যেই লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে।
থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ
উপসর্গহীনতা বা হালকা উপসর্গ
একদম প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গই পরিলক্ষিত হয় না। সর্বোচ্চ হালকা রক্তাল্পতার কারণে মৃদু ক্লান্তি বোধ হতে পারে।
হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ
লক্ষণ হালকা রক্তাল্পতা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে মাঝারি পর্যায়ের দিকে এগোতে থাকে। এ সময়-
- দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে
- বয়ঃসন্ধিকাল আসতে বিলম্ব হয়
- অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়
- তলপেটের অভ্যন্তরের প্লীহা নামক অঙ্গটি অস্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে যায়। এই প্লীহা পেটের ভেতরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
গুরুতর লক্ষণ
রক্তাল্পতা এ ক্ষেত্রে মাঝারি থেকে প্রকোট আকার ধারণ করে। এ সময় যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় তা হলো:
- আহারে রুচি কমে যাওয়া
- ত্বক ফ্যাকাশে বা হলুদ হওয়া
- প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া
- মুখের হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হওয়া|
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের জন্য জরুরি ভাবে বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন। এই টেস্টগুলো হলো:
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট
এর মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ এবং আকার সম্বন্ধে জানা যায়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের সাধারণত স্বাভাবিকের চেয়ে কম স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা এবং কম হিমোগ্লোবিন থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের লোহিত রক্তকণিকা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকতে পারে।
রেটিকুলোসাইট কাউন্ট
এটি মূলত তরুণ লোহিত রক্ত কোষের একটি পরিমাপ। এর মাধ্যমে জানা যায়, অস্থি মজ্জা যথেষ্ট পরিমাণে লোহিত রক্ত কোষ তৈরি করছে কি না।
এছাড়া আয়রনের টেস্টের মাধ্যমে রক্তশূন্যতার কারণ যাচাই করা হয়। বিটা-থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস। আর আলফা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক পরীক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
চিকিৎসার সম্ভাব্য উপায়
ব্লাড ট্রান্সফিউশান
এই চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা এবং হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা পুনরুদ্ধার। এর জন্য শিরাতে লোহিত রক্ত কোষ প্রবেশ করানো হয়। মাঝারি বা গুরুতর থ্যালাসেমিয়াতে প্রতি চার মাসে এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজরে প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহে একবার করে ট্রান্সফিউশন দেয়া হয়। হিমোগ্লোবিন এইচ রোগ বা বিটা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়ার জন্য মাঝে মাঝে ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হতে পারে।
আয়রন চিলেশন
এই চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন অপসারণ করা হয়। ব্লাড ট্রান্সফিউশানের একটি ঝামেলা হলো, এর ফলে আয়রন বেড়ে যেতে পারে। আর অত্যধিক আয়রন বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঘন ঘন ট্রান্সফিউশন দেয়া হলে তার সাথে আয়রন চিলেশন থেরাপিও দেওয়া হয়।
ফলিক অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্ট্স
শরীরে সুস্থ রক্তকণিকা তৈরির জন্য ডাক্তার এই প্রতিষেধকগুলো গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
বোন ম্যারো অ্যান্ড স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট
এই জটিল চিকিৎসায় একজন উপযুক্ত দাতার কাছ থেকে অস্থি মজ্জা এবং স্টেম সেল রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। উপযুক্ত মানে গ্রহীতার মত দাতার কোষের পৃষ্ঠে থাকতে হবে একই ধরনের প্রোটিন, যাকে হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (এইচএলএ) বলা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন গ্রহীতার রক্তপ্রবাহে দাতার অস্থি মজ্জা স্টেম সেল প্রবেশ করানো হয়। প্রতিস্থাপিত কোষগুলো এক মাসের মধ্যে নতুন ও সুস্থ রক্তকণিকা তৈরি করতে শুরু করে।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের উপায়
শুধুমাত্র বংশানুক্রমিকভাবে যোগসূত্র থাকা ব্যক্তিরাই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন। অর্থাৎ, আক্রান্ত শিশু এই ব্যাধি নিয়েই জন্ম নেয়। ফলশ্রুতিতে, জিনগত এই ব্যাধি থেকে দূরে থাকার কোনো প্রশ্ন থাকে না। তবে এর জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্বামী বা স্ত্রী যে কারো এই ব্যাধি থাকলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক্স কাউন্সিলরের সরণাপন্ন হতে হবে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসাটাই এখানে মূল উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর জীবন ধারণ পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। এখানে প্রথমেই নজর দিতে হয় খাবারের দিকে। এ সময় সহায়ক খাবারের তালিকায় যুক্ত করতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি। যেমন- কমলা, আঙ্গুর, সবুজ ও লাল মিষ্টি মরিচ, স্ট্রবেরি, কিউই ফল, ফুলকপি, এবং টমেটো।
তবে এড়িয়ে চলতে হবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো। এই তালিকায় রয়েছে মাছ, মাংস এবং পালং শাক।
খাদ্যাভ্যাস গঠনের পাশাপাশি মনোন্নিবেশ করতে হবে শরীর চর্চার প্রতিও। মূলত এই খাদ্যাভ্যাস ও শরীর চর্চা পরিপূর্ণ ভাবে থ্যালাসেমিয়া নিরাময় করতে পারে না। তবে ঝুঁকির তীব্রতা অনেকটা উপশম করা যায়।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
পরিশিষ্ট
থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণগুলোর ব্যাপারে সম্যক ধারণা নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা বজায় রাখার মোক্ষম হাতিয়ার। খাবার ও ওষুধ গ্রহণে ভিটামিনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আর এড়িয়ে চলতে হবে আয়রন উপাদান।সর্বপরি, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে নিত্যদিনের করণীয়গুলো সাজালে মুক্তি মিলতে পারে গুরুতর জটিলতাগুলো থেকে। দীর্ঘমেয়াদে যা সহায়ক হতে পারে আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
৬১০ দিন আগে
তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে মাত্রাতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর আশঙ্কাজনক হারে পানি হারাতে শুরু করে। পরিণতিতে দেখা দেয় পানিশূন্যতা, যার দীর্ঘস্থায়ীত্ব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। মানবদেহের এই ভারসাম্যহীনতা মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও শুষ্ক মুখমণ্ডলের মতো উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই অসহনীয় খরতাপের সময়টাকে মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উচ্চ পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ শাকসবজি। এই খাবারগুলো শরীরের হারানো পানি পুনরায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেহের রোগমুক্তিতেও সাহায্য করে। চলুন, তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে সেই শাকসবজিগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
যে সবজিগুলো তীব্র গরমে শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে সক্ষম
শসা
প্রায় ৯৫ শতাংশ পানিতে পরিপূর্ণ শসা গরমের জন্য উপযোগী সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সহায়তা করে। শসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিকেল হলো জোড়াহীন ইলেকট্রন, যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।
রোদের তীব্র রশ্মির কারণে ত্বকে রোদে পোড়া ব্যথা, ফোলাভাব এবং ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থা থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় সাহায্য করতে পারে শসা। চোখের নিচে এক বা দুই টুকরো শসা রাখলে চোখের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমে আসে।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
টমেটো
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পটাশিয়ামের আধার টমেটোতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৫ শতাংশ। লাইকোপিন নামক পদার্থ টমেটোর উজ্জ্বল লাল রঙের কারণ। শুধু তাই নয়, এই উপাদানের মধ্যে রয়েছে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য। তাই এই ফলের রয়েছে মানবদেহের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা।
এই একই কারণে টমেটো ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। লাইকোপিনের পাশাপাশি অন্যান্য উদ্ভিদ যৌগ রোদে পোড়া থেকে রক্ষার কাজে অংশ নেয়।
স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের মতো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে এক ধরনের নীল আলো নির্গত হয়, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। টমেটোতে থাকা লুটেইন এবং জিক্সানথিন নামক পদার্থ এই নীল আলোর বিরুদ্ধে চোখের সুরক্ষায় কাজে লাগে।
উপরন্তু, এগুলো চোখের ক্লান্তি এবং চোখের উপর চাপ জনিত কারণে মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
পালং শাক
তাজা, হিমায়িত, বাষ্প বা দ্রুত সিদ্ধ যে কোনো অবস্থায়ই পালং শাক বেশ পুষ্টিকর একটি খাবার। কাঁচা পালং শাকে রয়েছে ৯১ শতাংশ পানি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ও ফোলেট। এই শাকে থাকা লুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের রোগ ও ছানি পড়া থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া লুটেইন চোখের লেন্সের উপর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
শরীরের ত্বকসহ নানা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের টিস্যু বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য, যা পালং শাকের অন্যতম উপাদান। শুধু তাই নয়, ভিটামিন এ ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মুখে সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমে যায়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
মূলা
মাঝারি পরিমাণ ভিটামিন সি সম্পন্ন কাঁচা মূলায় পানির অংশ ৯৫ শতাংশ। তবে এর পাতায় থাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। শিকড়ের চেয়ে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাটিচিন, পাইরোগালল, ভ্যানিলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ফেনোলিক যৌগ। এগুলো সম্মিলিতভাবে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে রীতিমতো একটি প্রতিরক্ষা দূর্গে পরিণত করে।
এছাড়াও মূলায় রয়েছে কিডনি বিশোধনের ক্ষমতা। এটি পাকস্থলির বিভিন্ন এনজাইমকে সক্রিয়করণে সাহায্য করে। এই এনজাইমগুলো নানা ধরনের বিষক্রিয়া থেকে কিডনিসহ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে মুক্ত রাখে।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
৬১৩ দিন আগে
ঘরে রান্নার কাজে নিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায়
নানা ধরনের দুর্ঘটনার পরেও এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারগুলোই বর্তমানে গ্যাস যোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঠিক ব্যবহারের অভাবে জীবনের জন্য এই প্রয়োজনীয় বস্তুটিই ভয়াবহ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার মানেই যেন ঘরের ভেতর বিপজ্জনক বিস্ফোরক নিয়ে দিন যাপন। কিন্তু কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই বাধ্য-বাধকতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে। চলুন, দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তা মূলক কিছু পদক্ষেপ জেনে নেওয়া যাক।
বাড়িতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে ১০টি প্রয়োজনীয় সতর্কতা
.
অনুমোদিত বিক্রেতা
এলপিজি সিলিন্ডারের সুষ্ঠ ব্যবহারের প্রথম শর্ত হচ্ছে সেটি কেনার জন্য সঠিক বিক্রেতাকে বাছাই করা। কেননা শত যত্ন করলেও ত্রুটিপূর্ণ পণ্যে ভালো সেবা পাওয়া যায় না। সেই সঙ্গে অনেক হয়রানিরও শিকার হতে হয়, যা চূড়ান্ত অবস্থায় বিপদের কারণও হতে পারে।
তাই সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত একটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা। তারপর তাদের সূত্র ধরে খুঁজে বের করতে হবে যে, নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অনুমোদিত বিক্রেতা আছে কি না। এ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা এবং গ্যাস রিফিল সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। একজন অনুমোদিত বিক্রেতা বিক্রির পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে সিলিন্ডার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের সেবা দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
উপরোক্ত নিরীক্ষণ সফলভাবে সম্পন্নের পর সিলিন্ডার কেনার মুহূর্তে প্রধান দুটি বিষয় দেখে নিতে হবে।
- সিলিন্ডারে সেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সিল রয়েছে কি না
- সিলিন্ডারটির সেফটি ক্যাপ সুরক্ষিত ভাবে লাগানো রয়েছে কি না
মেয়াদ থাকা গ্যাস সিলিন্ডার
একজন অনুমোদিত সিলিন্ডার সরবরাহকারী কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করবেন না। এরপরেও কেনার সময় ক্রেতাকে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা এর উপর নির্ভর করছে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারকারির নিরাপত্তা।
গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত ন্যূনতম প্রতি ১০ বছরে প্রতিস্থাপন বা পুনরায় পরীক্ষা করা উচিৎ। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি সিলিন্ডারের বডিতেই লিপিবদ্ধ থাকে। প্রস্তুতের তারিখ থেকে ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সিলিন্ডারের গুণগত মান হারাতে থাকে। ফলে সেটি পুনরায় গ্যাস রিফিলের জন্য উপযুক্ত থাকে না।
আরও পড়ুন: বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে করবেন
সিলিন্ডারকে সর্বদা উপরের দিকে মুখ করে রাখা
স্পষ্ট করে ভিন্ন কোনো নির্দেশনা না থাকলে এলপিজি সিলিন্ডার উপরের দিকে মুখ করে সোজা অবস্থায় রাখা উচিৎ। উল্টো করে কিংবা যে কোনো একদিকে কাত করে রাখা যাবে না। মোট কথা এমনভাবে রাখতে হবে যেন সেটি স্থিরভাবে এক জায়গায় থাকতে পারে। এ সময় আশেপাশের কোনো কিছুর সঙ্গে সিলিন্ডারের যেন কোনো ধাক্কা না লাগে। খালি বা গ্যাস ভরা সিলিন্ডার, উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এ অবস্থায় রাখলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিক করে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে না।
সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গায় সঠিক বাতাস চলাচল
বদ্ধ জায়গায় জমা হওয়া এলপিজি ধোঁয়া বিপদের লক্ষণ। তাই সিলিন্ডারের সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল। এর জন্য সিলিন্ডারটি রাখার জন্য যতটা সম্ভব উন্মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির যে জায়গাটি বেশি খোলামেলা সেখানে মাটির উপর সমতোলে রাখা যেতে পারে। তবে সরাসরি সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখাই ভালো।
এতে করে বিপজ্জনক বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। আর কোনো কারণে বিস্ফোরণ হলেও তা থেকে ক্ষতি অনেকটা কম হয়।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গাটির সুরক্ষা
জঞ্জালপূর্ণ, আবদ্ধ এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় সিলিন্ডার রাখা ঠিক নয়। বরং যেখানে বিশৃঙ্খলা কম এমন খোলামেলা, বিচ্ছিন্ন এবং পরিষ্কার শুষ্ক জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। চুলার খুব কাছাকাছি তো রাখা যাই না, বরং লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে সিলিন্ডারটিকে স্থাপন করতে হয়। যত বেশি দূরে রাখা যায় ততই নিরাপদ।
তবে খেয়াল রাখতে হবে- সিলিন্ডার যেন অবশ্যই শক্তভাবে মাটির উপর স্থাপিত থাকে। দুর্ঘটনাজনিত কোনো আঘাতে তা যেন কাঁত হয়ে বা সম্পূর্ণ পড়ে না যায়। বিশেষ করে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার জন্য এই মজবুত স্থাপনাটি সবচেয়ে বেশি দরকারি। অতর্কিতে রেগুলেটরে টিপ পড়ে যাওয়া বা কাঁত হয়ে পড়ে যাওয়া রোধ করতে টেকসই সিলিন্ডার স্ট্যান্ড বা শক্ত খাঁচা ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোনো ধরনের দাহ্য বস্তু সিলিন্ডারের সংস্পর্শে না আনা
কাগজ, অ্যারোসল, পেট্রোল, পর্দা এবং রান্নার তেলের মতো দাহ্য বস্তু সর্বদা এলপিজি সিলিন্ডার থেকে দূরে রাখা উচিৎ। ছোট্ট আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে এমন সবকিছুই বর্জনীয়; এমনকি ধূমপানের জন্য ম্যাচের কাঠি বা দেয়াশলাইও।
এছাড়া উচ্চ ভোল্টেজের ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সিলিন্ডারের আশেপাশে রাখা যাবে না।
আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
রান্নার সময় করণীয়
রান্না শুরু করার আধ ঘণ্টা আগে থেকেই রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে। এতে করে তাজা বাতাস চলাচল করতে পারবে। রান্নাঘর যথেষ্ট প্রশস্ত না হলে সিলিন্ডার রান্নাঘরে রাখা উচিৎ নয়। অবশ্য বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি রান্নাঘর অত্যন্ত ছোট। নানা ধরনের তৈজসপত্রে ঠাসা ছোট জায়গাটি কোনো ভাবেই গ্যাসের সিলিন্ডারের মতো বিপজ্জনক বস্তুর জন্য উপযুক্ত থাকে না।
রান্না শেষে চুলার চাবি বন্ধ করতে কোনো মতেই ভুলে যাওয়া চলবে না।
নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ
এলপিজি সিলিন্ডারের সংযোগগুলো ক্ষয়ক্ষতি ও লিক জনিত যে কোনো লক্ষণের জন্য আগে থেকেই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। আর একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পরিদর্শন এই পরীক্ষার কাজে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
এর বাইরেও অনেক সময় কোনো ফাটল চোখে পড়তে পারে বা গ্যাস লিকের মতো আশঙ্কাজনক কোনো শব্দ কানে আসতে পারে। এ সময় অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সিলিন্ডার সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
এছাড়া শুধু সিলিন্ডারই নয়, এর সঙ্গে ব্যবহৃত বিভিন্ন খুটিনাটি পার্টসগুলোর প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এগুলোর মধ্যে আছে সিলিন্ডার রেগুলেটর, সংযোগ পাইপ, ভাল্ভ ক্যাপসহ নানাবিধ ছোট ছোট যন্ত্রাংশ। এগুলোতে ত্রুটি থাকা সামগ্রিক ভাবে পুরো সিলিন্ডারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ফলপ্রসূ উপায় হচ্ছে সেই অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বাছাই করা। এই পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণে তারা দক্ষ কর্মী দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
সিলিন্ডার পরিবর্তনের সময় চুলা বন্ধ রাখা
গ্যাস শেষ হয়ে গেলে রিফিল করার সময় ডিস্ট্রিবিউটরের কর্মীরাই এই সাবধানতাটি অবলম্বন করবেন। এছাড়া ব্যবহারকারিদেরকেও তারা এ সময় চুলা বন্ধ রাখার কথা বলেন।
এছাড়া গ্যাস শেষ হয়ে গেলে চুলাতে এমনিতেই গ্যাসের কোনো শব্দ থাকে না। এরপরেও চুলা বন্ধ রাখাটাই উত্তম। সিলিন্ডার রিফিল হয়ে যাওয়ার পর যখন গ্যাস অপারেটর যাচাইয়ের জন্য চুলা জ্বালাতে বলবেন একমাত্র তখনি চুলা জ্বালানো যেতে পারে।
ঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সিলিন্ডার সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো
দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়ার কারণে বাড়ি অনেক দিন বদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। এ সময় বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশের পর সবার আগে দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। ঘরের ভেতরে গ্যাসের কোনো গন্ধ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরকে জানাতে হবে। গ্যাস টেকনিশিয়ান আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ম্যাচের কাঠি জ্বালানো, ইলেকট্রিক সুইচ অন করা, কিংবা সিলিন্ডারের রেগুলেটরে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
শেষাংশ
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে এই সাবধানতাগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরণ থেকে বাড়িকে সুরক্ষিত রাখার উপযুক্ত উপায়। মূলত কোত্থেকে বা কাদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অর্ধেক কাজই হয়ে যায়। কেননা অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান সর্বাঙ্গীন ভাবে তাদের পণ্যের মান নিশ্চিতকরণের দিকে খেয়ালা রাখে। ফলে সিলিন্ডারের মেয়াদ, গ্যাস লিক, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, এবং গ্যাস রিফিল নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ থাকে না।
এর বাইরে ক্রেতাকে নিশ্চিত করতে হবে সিলিন্ডার স্থাপনের স্থানে বাতাস চলাচলের পরিবেশ এবং তার আশেপাশে দাহ্য বস্তু না রাখার বিষয়টি। সর্বপরি, এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার জনিত যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য চুলার কাজ ছাড়াও প্রতিনিয়ত গ্যাস লিকের ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
৬২২ দিন আগে
সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ঘুমিয়ে থাকার সময় মস্তিষ্কে নতুন তথ্য জানা ও তা মনে রাখার জন্য কার্যক্ষমতার বিকাশ ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাঝে সঞ্চার হতে থাকে নতুন কর্মোদ্দীপনার। ঘুমের এই পরিব্যাপ্তি বাধাগ্রস্ত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমগ্র দেহে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে দৈনন্দিন কাজ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীর তার প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরিতে বাধা পায়। তাই প্রকৃতিগতভাবেই মানবদেহের চাহিদা থাকে ঘুমের জন্য একটি রুটিন মেনে চলার। আর এখানেই আসে সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। চলুন, এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে জেনে নিই কীভাবে সার্কেডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করবেন।
সার্কেডিয়ান রিদম কি?
ল্যাটিন শব্দ সির্কা যার অর্থ ‘চক্র’, এবং ডাইস- যার অর্থ ‘দিন’। এই শব্দ দুটির সমন্বয় থেকে উদ্ভব ‘সার্কেডিয়ান’ শব্দের। সার্কেডিয়ান ছন্দ বা দেহ ঘড়ি এমন এক প্রক্রিয়া, যা সন্তান প্রসব করতে পারে এমন জীব প্রজাতির প্রকৃতি ও পরিবেশকে প্রভাবিত করে। একটি সার্কেডিয়ান চক্রের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পুনরাবৃত্তি ঘটে। এর ছন্দগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় সার্কেডিয়ান ঘড়ির মাধ্যমে, যার উদ্দেশ্য জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মাঝে সুনির্দিষ্ট স্পন্দন ধরে রাখা। এই স্পন্দন প্রাণীর সর্বাধিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করে। শুধু মানুষেই নয়, এই প্রক্রিয়া দেখা যায় অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক, এমনকি সায়ানোব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রেও।
সার্কেডিয়ান চক্র কীভাবে কাজ করে
সারা শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গ্রন্থির প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট স্পন্দনে সম্পাদিত হয়। এগুলোকে প্রতিটি প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক সময়সূচী বা ঘড়ি বলা যেতে পারে। এই সবগুলো ঘড়ির পরিচালনায় থাকে একটি মাস্টার ক্লক, যেটি থাকে মস্তিষ্কে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর নাম সুপ্রাকিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াস (এসসিএন)।
আরও পড়ুন: জিমে অনুশীলনের সময় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এই মাস্টার ঘড়ি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে ২৪ ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময়ে। প্রায় ১২ থেকে ১৮ মিনিট কম ধরে মাস্টার ঘড়িকে পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা ঘূর্ণনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই চক্র তরুণ এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রযোজ্য। সার্কেডিয়ান ছন্দের সময়গুলো নির্ধারিত হয় তার চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত সংকেত অনুসারে। এই সংকেতগুলোকে বলা হয় সাইটগিবার্স , যেটি মূলত একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ ‘সময় রক্ষক’।
সার্কেডিয়ান চক্রের সময় নির্ধারণকারী এই সাইটগিবারগুলো হলোঃ
- প্রাকৃতিক আলো এবং অন্ধকার
- খাদ্যাভ্যাস
- শরীর চর্চা
- পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, বা সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটানো
- প্রাত্যহিক জীবন ধারণ
- মানসিক চাপ
আরও পড়ুন: ব্লু জোন রহস্য: রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায়ের খোঁজে
সাইটগিবারগুলো মস্তিষ্কে হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের টিস্যুগুলোতে রাসায়নিক সংকেত প্রেরণকে উদ্দীপিত করে। আর এর মধ্য দিয়েই খাদ্যের শক্তিতে রূপান্তর, শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা, এবং ঘুমাতে যাওয়া বা জেগে ওঠার সময়গুলো পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন ধরনের সার্কেডিয়ান রিদম অসঙ্গতি
ডিলেইড স্লিপ-ওয়েক ফেজ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যায় ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে যে মুহূর্তে শুয়ে পড়েন সে সময় থেকে অনেক দেরিতে তার ঘুম আসে। একইভাবে সময় মতো ঘুম থেকে ওঠার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয়।
জেট ল্যাগ ব্যাধি
ভ্রমণের সময় ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোনে থাকার কারণে এই জটিলতা হয়ে থাকে। যে দেশগুলোতে দিন ও রাতের সময়সূচির মাঝে বিরাট পার্থক্য, সে দেশগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেহ ঘড়ির এরকম ছন্দ পতন হয়।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার
রাতের শিফটে যারা কাজ করেন বা যাদের কাজের সময় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়, তাদের এ ধরণের জটিলতা দেখা দেয়। কাজের প্রকৃতির কারণে পারিপার্শ্বিক পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়, যা স্বাস্থ্যকর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ইরেগুলার স্লিপ-ওয়েক রিদম ডিসঅর্ডার
ঘুম সংক্রান্ত এই দুর্লভ জটিলতায় প্রতিদিনের ঘুমের টাইম টেবিলটা থাকে আলাদা। একদিন হয়ত শুধু দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুম হলো, পরের দিন আবার তা বদলে হয়ে গেলো রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টা। অপ্রত্যাশিত এই ঘুম চক্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিন কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা পায় না।
নন-টুয়েন্টি ফোর-আওয়ার স্লিপ-ওয়েক রিদম ডিসঅর্ডার
এই ডিসঅর্ডারে ধীরে ধীরে ঘুমের সময়সীমার স্থানান্তর ঘটে। প্রতিদিন একটু একটু করে প্রলম্বিত এই সমস্যাটি এক সময় ২৪ ঘণ্টার চক্রের বাইরে চলে যায়। ফলে দেখা যায় ঘুম রাতের পরিবর্তে পরের দিন দুপুরের দিকে আসছে। এমনকি এই ঘুমের বিলম্বটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পরের দিন সন্ধ্যা বা রাত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
আরও পড়ুন: চোখ উঠা রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
অ্যাডভান্স্ড স্লিপ-ওয়েক ফেজ ডিসঅর্ডার
এই সমস্যায় অপ্রত্যাশিতভাবে কাঙ্ক্ষিত সময়ের অনেক আগে ঘুম চলে আসতে পারে বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে। কতক্ষণ জেগে বা ঘুমিয়ে থাকা হয়েছে এখানে সেটা মুখ্য নয়। সন্ধ্যায় জেগে থাকাটা খুব কঠিন হতে পারে, আবার বেশি রাত করে ঘুমিয়েও খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।
দেহ ঘড়ির ছন্দ পতনের কারণ
জিনগত কারণ
মস্তিষ্ক বা হরমোনকে প্রভাবিত করে এমন জিনগত অবস্থা সার্কেডিয়ান ছন্দ পতনকে রীতিমত ব্যাধিতে রূপ দিতে পারে। স্মিথ-ম্যাজেনিস সিন্ড্রোম ঠিক এমনি একটি জেনেটিক অবস্থা, যা শরীরের মেলাটোনিন হরমোন তৈরির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই হরমোনটি একটি মানুষকে ঘুমাতে সাহায্য করে। স্মিথ-ম্যাজেনিস প্রবণতা ঘুমের প্যাটার্নকে সম্পূর্ণরূপে বিপরীত করে দিতে পারে, যার ফলে সারা দিন ঘুম এবং সারা রাত অনিদ্রা হতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকলাপে বাধাগ্রস্ত হওয়া
বাহ্যিক গুরুতর কোনও আঘাতে মাথা ফেটে যাওয়া, ট্রমা, অবক্ষয়জনিত মস্তিষ্কের রোগ দেহের সামগ্রিক জৈবিক সময়কে নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রমণ বা বিষক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোতে সৃষ্ট প্রদাহ স্লিপ ডিসঅর্ডারের দিকে ধাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার প্রবণতা: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা
মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে হাইপোথ্যালামাস নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। মস্তিষ্কের কোষের (নিউরন) একটি নির্দিষ্ট ক্লাস্টারের এই আবাসস্থলটি হচ্ছে সেই মাস্টার ক্লক বা এসসিএন। চোখের সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ থাকে। তাই এর কার্যকারিতার জন্য দিনের প্রাকৃতিক আলো একটি অপরিহার্য বিষয়। চোখের রেটিনা বা স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে জৈবিক ঘড়ি গুরুতর ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে।
ঘন ঘন ভ্রমণ
যে কোনও অচেনা পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোজন ক্ষমতা মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এরপরেও মাত্রাতিরিক্ত ভিন্ন টাইম জোনের স্থানগুলোতে ভ্রমণ করা জেট ল্যাগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। একই টাইম জোনের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে, কেননা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের জন্য একটি স্থায়ী পরিবেশও প্রয়োজন।
কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ
দিনের বদলে রাতে কাজ করা বা কাজের সময়সীমা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্থায়ী না হলে শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার হয়। এছাড়া সদ্য নবজাতকের বাবা-মাদেরও এই জটিলতা হয়। কেননা শিশুর যত্নের জন্য রাতের পর রাত তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কে ১০টি প্রচলিত ধারণা: জেনে নিন সঠিক তথ্য
অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস
জৈবিক ঘড়ির সুষ্ঠ স্পন্দনের জন্য দিনের প্রাকৃতিক আলোর সান্নিধ্যে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে রাতের বেলা কৃত্রিম আলো স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। টিভি স্ক্রিন, অ্যালার্ম ঘড়ি, স্মার্টফোন, ও কম্পিউটার মনিটর এই কৃত্রিম আলোর একটি উপযুক্ত উৎস। নিয়মিত রাত জেগে টিভি দেখা বা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন চালানো চোখকে সেই কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে রাখে। অন্যদিকে রাতের ঘুমটি দিনে হওয়ার কারণে চোখ দিনের প্রথম সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হয়। এরকম জীবন ধারণে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা সার্কেডিয়ান স্পন্দন ব্যাধির ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্লিপ ডিসঅর্ডারগুলো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে হরমোনের পরিবর্তনের সাপেক্ষে নারীদের গর্ভাবস্থায় বা প্রসব পরবর্তী সময়ে জৈবিক ঘড়ির অসঙ্গতিগুলো দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
সার্কেডিয়ান রিদম অসঙ্গতির লক্ষণ
ছন্দ পতনের উপসর্গগুলো মূলত ব্যধি বা অসঙ্গতিগুলোর ধরণের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। গড়পড়তায় যে লক্ষণগুলো দৃশ্যমান হয়, সেগুলো হচ্ছেঃ
- দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পরেও ঘুম না আসা
- এক টানা ঘুম না হয়ে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া
- বিশেষ করে মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম না আসা
- আকস্মিকভাবে কাঙ্ক্ষিত সময়ের আগেই ঘুম ভাঙার পর আর ঘুম না আসা
- ঘুমের জড়তার কারণে হাঁটতে সমস্যা হওয়া
- দিনের বেলায় তন্দ্রা বা হাইপার-সোমনিয়া
- দিনের বেলা কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে সমস্যা, নিজের চারপাশ সম্পর্কে অসতর্ক থাকা
- দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ক্লান্ত বোধ
- অসহনীয় মাথাব্যথা
- অযাচিত বিরক্তি এবং তা থেকে হতাশার উদ্রেক
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সার্কেডিয়ান রিদম রিসেট করার উপায়
খুব ভোরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে যাওয়া
সদ্য উদয় হওয়া সূর্যের আলো চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এর জন্য খুব সকালে উন্মুক্ত জায়গায় হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এতে করে আলো ও অন্ধকারের জন্য নির্ধারিত জৈবিক ছন্দগুলো পুনঃস্থাপিত হয়।
সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
ঘুমের সময়সূচির মতো ক্ষুধা এবং বিপাক প্রক্রিয়াও সার্কেডিয়ান ছন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নাস্তা খাওয়া জরুরি। একই সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে না যেয়ে খাবার হজমের জন্য সময় দেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি খেয়াল রাখা জরুরি যে, রাতের খাবার যেন খুব বেশি দেরি হয়ে না যায়। খাদ্য গ্রহণের এই অভ্যাসটি নিয়মিত বজায় রাখার মাধ্যমে জৈবিক স্পন্দন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ক্যাফেইন সীমিত করা
ঘুমের জড়তা বা ক্লান্তি দূর করলেও ক্যাফেইন ঘুমকে ব্যাহত করে। তাই ক্যাফেইন কখন এবং কত পরিমাণে নেওয়া হচ্ছে দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সকালে নাস্তার পরে, বিকালে নাস্তার সঙ্গে পরিমিত পরিমাণে চা-কফি নেওয়া যেতে পারে। তবে সন্ধ্যার পরে এ ধরণের পানীয় গ্রহণ সীমিত করা উচিত।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
খুব দেরিতে ব্যায়াম না করা
ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা তার কাছাকাছি সময়টা শরীর চর্চার জন্য উপযুক্ত নয়। এটি নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে যদি খুব সকালে ওঠার তাড়া থাকে। সকাল সকাল ব্যয়ামের ক্ষেত্রেও অনিয়মিত হলে স্বাস্থ্যকর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সুতরাং খুব সকাল কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার অনেক আগে যে সময়েই হোক না কেন, ব্যয়াম হতে হবে প্রতিদিনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে।
কৃত্রিম আলো এড়িয়ে চলা
টিভি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং ট্যাবলেটের মতো ডিজিটাল ডিভাইসগুলো থেকে নির্গত নীল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় ধরে এই ডিভাইসগুলোর ব্যবহার করা দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ীভাবে অনিদ্রা সৃষ্টি করে। তাই ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে এগুলো বন্ধ করে রাখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য উইন্ডোর লাইটগুলোও ঘুমের আগে নিভিয়ে ফেলা উত্তম।
শেষাংশ
সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণের মাঝে নিহিত রয়েছে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি। অন্যান্য বয়স অপেক্ষা কর্মোদ্দীপনা বেশি থাকলেও কিশোর ও তরুণ বয়সীদের ক্ষেত্রে ছন্দ পতনের আশঙ্কা বেশি। অনিয়মিত ঘুমের প্রতিরোধকল্পে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ও মাত্রাতিরিক্ত ভ্রমণ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসাটা জরুরি। সেই সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ এবং শরীর চর্চার সময়ানুবর্তিতা সামগ্রিকভাবে ছন্দ ফিরিয়ে আনতে পারে জৈবিক ঘড়িতে।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
৬২৩ দিন আগে
পহেলা বৈশাখে শেফ জাহিদার রেসিপি চিংড়ি মালাইকারি
কথায় আছে নালে ঝোলে বাঙালি। নববর্ষে বাঙালির মুখে লাগাম থাকে না। রসগোল্লা হোক বা ডাল ভাত সবেতেই জিভে পানি আসে। মিষ্টান্ন, হরেক রকমের আয়োজনে বাঙালির হেঁশেলে বাড়ে ব্যস্ততা। পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষ কাছাকাছি সময়ে উদযাপিত হচ্ছে। আর এই উদযাপনকে ঘিরে বাঙালিয়ানা রান্নার কদরও দেখা যাচ্ছে ঘরে ঘরে। তেমনই একটি আয়োজন হচ্ছে চিংড়ির মালাইকারি।
কমবেশি সবাই চিংড়ির মালাইকারি খুব বেশি পছন্দ করেন। তবে যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের চিংড়ি এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে যাদের কোনো সমস্যা নেই তাদের জন্য সোনায় সোহাগা। এটি একেবারে বাঙালি খাবার।
বাজার থেকে চিংড়ি এনে বানিয়ে ফেলতে পারেন চিংড়ি মালাইকারি। পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন (রন্ধন প্রশিক্ষণ) বিভাগের প্রধান শেফ জাহিদা বেগম বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ইউএনবির পাঠকদের জন্য শেয়ার করেছেন চিংড়ির মালাইকারি রেসিপি।
পরিবেশন: ৪ জন
উপাদান ও পরিমাণ: চিংড়ি ১ কেজি, পেঁয়াজ ২টি বড় সাইজের, আদা রসুন বাটা ১ থেকে ১/২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ৬ পিস, গরম মসলা ১/৪ চা চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ৩ পিস, তেল ৫০ মিলি, নারকেলের দুধ ১ কাপ, টমেটো ১টি বড় সূক্ষ্মভাবে কাটা এবং লবণ পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি:১. চিংড়ির খোসা পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. লবণ এবং এক চিমটি হলুদ গুঁড়া দিয়ে চিংড়িগুলো ভেজে মেরিনেট করুন। তারপর একটি প্যানে খুব অল্প পরিমাণে তেল দিয়ে ভেজে নিন।
৩. তারপর চিংড়ি তেল থেকে উঠিয়ে রেখে একই প্যানে আরও তেল দিন এবং পেঁয়াজের পেস্ট, তেজপাতা, আদা রসুনের পেস্ট, টমেটো দিয়ে ১০ মিনিট নাড়ুন।
৪. হলুদ, মরিচ, জিরা এবং গরম মসলা গুঁড়া যোগ করুন। সামান্য পানি দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন।
৫. চিংড়ি ভাজা, লবণ, নারকেল, মরিচ এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে আরও ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করুন।
৬. এরপর উপরে ঘি দিয়ে দিন। এবং
৭. ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।
গার্নিশ:কাটা ধনে পাতা, লেবুর ওয়েজ দিয়ে পরিবেশন করুন।
পুষ্টির পরিমাণ:প্রতি পরিবেশন: ক্যালরি ৭৬০, ফ্যাট ২৮ গ্রাম, কোলেস্টেরল ১০.২৪ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮০ গ্রাম, সোডিয়াম ২২.৫৮, পটাসিয়াম ৩৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১২.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৪৭ মিলিগ্রাম।
৬২৩ দিন আগে
রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ছায়ানটের জমকালো পহেলা বৈশাখ উদযাপন
ঈদ উৎসবের মাঝে রাজধানীর রমনা পার্কের রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রবিবার(১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৬টায় দেশের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট পরিবেশন করে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মর্তুজা কবির মুরাদের 'রাগ আহীর ভৈরব' গানের মন্ত্রমুগ্ধকর বাঁশি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই সাংস্কৃতিক উৎসবের। দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনা, গান, আবৃত্তি ও অন্যান্য পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
আরও পড়ুন:ঢাকার জনপ্রিয় ১০টি বুক ও স্টাডি ক্যাফে: বইপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ১১টি কোরাস গান ও ১৫টি এককসহ ৩১টি একক পরিবেশনা পরিবেশন করা হয়। এরমধ্যে সত্যম কুমার দেবনাথ, খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, তানিয়া মান্নান, রামেন্দু মজুমদার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ প্রখ্যাত শিল্পীরা প্রকৃতি, মানবপ্রেম, আত্মশুদ্ধি ও দেশপ্রেমের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি ১৪৩১ সনকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে দর্শকরা জড়ো হয়ে নাচ-গানে মেতে উঠেছিল।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নতুন বছরের ভাষণ পাঠ করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ড. সারওয়ার আলী। দলগত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে অনুষ্ঠানের।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এবং ছায়ানট তাদের ইউটিউব চ্যানেলে https://www.youtube.com/@ChhayanautDigitalPlatform অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং ১৩তম হুসার্স ওপেন রোভার স্কাউট গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি ছায়ানটের স্বেচ্ছাসেবকরা অনুষ্ঠানস্থলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: পবিত্র শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয়
৬২৩ দিন আগে
মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়।
ঐক্য, সাংস্কৃতিক গর্ব ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক শোভাযাত্রাটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পীসত্তা ও চেতনার মন্ত্রমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে আরম্ভ হয়।
উৎসাহী অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব এবং শিশু পার্কের মতো ঐতিহাসিক স্থান হয়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা অতিক্রম করে। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত ও প্রতীকী নিদর্শন সম্বলিত শোভাযাত্রাটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি করে এবং আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ডিএমপির
সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক প্রকাশের লালনের জন্য পরিচিত চারুকলা অনুষদ সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের সূচনা স্থান। অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আয়োজিত এই আয়োজনে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের প্রচার ও সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে।
শোভাযাত্রাটি টিএসসিতে সমাপ্তির পথে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বাতাস হর্ষধ্বনি, সংগীত এবং অংশগ্রহণকারী ও দর্শকদের সম্মিলিত উল্লাসে অনুরণিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু বাংলা নববর্ষের আগমনই উদযাপন করে না, প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালি মানুষের সহনশীলতা ও চেতনার সাক্ষ্য বহন করে।
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে এই জাতীয় আয়োজন ঐক্য, স্থিতিস্থাপকতা ও একাত্মতার বোধকে লালন করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রস্তুত ঢাবি
পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে ঘিরে যেকোনো জঙ্গি হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুত র্যাব: ডিজি
৬২৪ দিন আগে
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি
জীবিকার তাগিদে শত শত মানুষের ঠিকানা রাজধানী ঢাকা। এরপরেও অল্পকিছু সময় সুযোগ মিললেই নাড়ির টানে সবাই ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিটা মা-বাবার সঙ্গে কাটানোর জন্য সারা বছর ধরে দিন গুনতে থাকেন প্রতিটি কর্মজীবী মানুষ।স্বভাবতই বছরের এই সময়টাতে সবার মধ্যেই এক রকম তাড়াহুড়ো কাজ করে। ঈদের কেনাকাটা আর ট্রেন বা বাসের টিকেট ব্যবস্থা করতে যেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শহরবাসী। এই ঝক্কি-ঝামেলায় শহরে নিজের যে ঠিকানাটি তারা ছেড়ে যাচ্ছেন তার কথা বেমালুম ভুলে বসেন অনেকেই। ছুটি শেষে আবার এই যান্ত্রিক সংসারেই ফিরতে হবে জেনেও বিষয়টি প্রতিনিয়ত নজর এড়িয়ে যায়। তাই চলুন, ছুটি কাটানোর জন্য শহরের বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
বাড়ির অভ্যন্তরে বিভিন্ন ত্রুটি যাচাই
বাড়ির মূল ফটকের লকের সমস্যা ও ভাঙা জানালার দিকে সর্বপ্রথম নজর দেওয়া জরুরি। এর সঙ্গে সময় নিয়ে খুঁজে বের করতে হবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ও পানি সরবরাহের লাইনে কোন ত্রুটি আছে কি না। এগুলো মূলত ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নেওয়া উচিৎ। উপরন্তু, বাড়ি ছাড়ার আগ মুহূর্তে চোখে পড়লে দ্রুত এগুলো মেরামতো করে নিতে হবে।
অন্যথায় এড়িয়ে গেলে বা পরে ঠিক করার চিন্তা করলে খালি বাড়িতে যে কোনো অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদে ঘরে ফিরতে অনলাইনে প্লেন, বাস ও ট্রেনের টিকেট কাটার উপায়
চুলা, পানির কল ও বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো বন্ধ করা
শহরের বাইরে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এই বিষয়গুলো বারবার যাচাই করে নিতে হবে। এমনকি কোন পানির কলের প্যাচ ঢিল হওয়ার কারণে যদি ফোটায় ফোটায় পানি পড়তে থাকে তাও মেরামতো করে নেওয়া দরকার। একই ভাবে দেখতে হবে প্রতিটি ঘরের বিদ্যুৎ সুইচগুলো বন্ধ আছে কি না। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ওভেন, রাউটার, ফ্যানের মতো বিদ্যুৎ সংযোগকৃত প্রতিটি যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দিতে হবে। দেওয়াল এবং টেবিল ঘড়ির ব্যাটারিগুলো খুলে যথাস্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
ফ্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ
সবগুলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিদ্যুৎ সংযোগমুক্ত করার সময় ফ্রিজের ব্যাপারে ব্যতিক্রম করা যেতে পারে। কেননা যেসব খাবার সময়ের সঙ্গে নষ্ট হয়ে সেগুলোকে সতেজ রাখার জন্য ফ্রিজে বিদ্যুৎ সংযোগ রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে যদি ভ্রমণের আগেই পচনশীল খাবারগুলো শেষ হয়ে গেলে ভালো। সেক্ষেত্রে ফ্রিজ ছেড়ে রাখতে হবে না।
এছাড়া ভ্রমণের আগের দিনগুলোতে কোনো পচনশীল খাবার না কেনাই উত্তম। বাড়ির ছাড়ার আগের সপ্তাহের খাদ্যতালিকায় ফ্রিজের অবশিষ্ট খাবারযোগ্য আইটেমগুলো রাখা যেতে পারে। অপচনশীল খাবার বা কেনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত খেয়ে ফেলতে হয় এমন খাবারগুলো কেনা যেতে পারে অল্প করে। বের হওয়ার আগের দিন ফ্রিজের ভেতরটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ফ্রিজে এমন কিছু রাখা যাবে না যা পরবর্তীতে দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
আসবাবপত্রের লকারগুলো লক করা
আলমারি, টেবিল, দেরাজ বা কেবিনেটের লকারগুলো ভালো করে চেক করতে হবে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে নিশ্চিত করতে হবে যেন সেগুলো মজবুত ভাবে বন্ধ থাকে। কেননা এগুলোতে নগদ টাকা, ডেভিট বা ক্রেডিট কার্ড, অলঙ্কার, সার্টিফিকেট সহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র রাখা হয়। এগুলোর কোনোটাকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেবিল বা বিছানার উপর ফেলে রাখা একদমি ঠিক নয়।
যাবতীয় সরঞ্জামসহ রান্নাঘর পরিষ্কার করা
খাবারের পরপরই থালা-বাসন ধুয়ে রাখা হলে এই কাজটি অনেকটা এগিয়ে যায়। রান্নাঘরে প্রায় ক্ষেত্রে ফল ও সবজি স্তূপ করে রাখা হয়। এভাবে এলোমেলাভাবে না রেখে প্রত্যেকটিকে তার যথাস্থানে রাখতে হবে। এতে করে রান্নাঘরের ময়লা পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।
সিঙ্কের জায়গা, কেবিনেট, শেল্ফ ও তৈজসপত্র ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা উত্তম। এতে করে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের সম্মুখীন হতে হবে না। একই সঙ্গে বাড়ি ফিরেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে ধোয়া-মোছার কাজে লেগে পড়তে হবে না।
আরও পড়ুন: ঈদের কেনাকাটায় জনপ্রিয় ১০টি বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড
পরিধেয় কাপড় পরিষ্কার করা
ভ্রমণের জন্য ব্যাগ গোছানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে বাড়ি ফিরে পরিধানের জন্য পরিষ্কার কাপড় আছে কি না। এছাড়া পরনের কাপড় সব স্তূপ করে রেখে দিলে তা বাজে গন্ধ ছড়ায়। সেই সঙ্গে বদ্ধ ফাঁকা ঘরে এই গন্ধ অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাছাড়া ভ্রমণের পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে কাপড় ধোয়ার আর অবস্থা থাকে না। তাই এই সব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাড়ি ছাড়ার আগেই কাপড়গুলো পরিষ্কার করা। নিদেনপক্ষে নিয়মিত পরিধানের কাপড়গুলো ধুয়ে শুকিয়ে আয়রন করে রাখতে হবে।
আসবাবপত্রসহ ঘর পরিষ্কার করা
বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, ও টেবিল ক্লথ অনেক দিন হয়ে গেলে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং ঘরের পরিবেশ নষ্ট করে। আনন্দের ঈদ উদযাপন করে বাসায় ফিরে এমন অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন হওয়া কারোই কাম্য নয়। এছাড়া ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে চান। তাই নিজেই নিজেকে স্বাগত জানানোর জন্য আগে থেকেই এই চাদর-পর্দাসহ প্রতিটি আসবাব পরিষ্কারের দিকটি মাথায় রাখা উচিৎ।
প্রতিটি কক্ষ পরিষ্কারের সময় বাথরুম পরিষ্কারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাথরুমে পানির কল চেক করে দেখার সময়েই এক সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার দিকটাতেও নজর দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: এবারের ঈদ আয়োজনে বড় পর্দার ১০টি চলচ্চিত্র
ময়লার বাক্স ঘরের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা
রান্নাঘরসহ প্রতিটি ঘরের ট্র্যাশ বক্সের সব ময়লা একটি পলিথিনে নিয়ে বাড়ির বাইরে যথাস্থানে ফেলে আসতে হবে। সারা ঘর পরিষ্কার থাকলেও শুধু ময়লায় ভর্তি ট্র্যাশবক্স ঘিরেও কীটপতঙ্গ ও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। আর এভাবে বেশ কিছু দিন বদ্ধ অবস্থায় থাকলে সারা বাড়ি জুড়ে অস্বস্তিকর পরিবেশে সৃষ্টি হয়। তাই আগেই ট্র্যাশ বক্সগুলো খালি করে ফেলতে হবে।
শেষাংশ
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পূর্বে এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া মানেই শহরের বাড়িটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনের ত্রুটি সারানো এবং সেগুলোর সংযোগ বন্ধ রাখা বাড়িকে বিপদমুক্ত রাখার জন্য জরুরি। তদুপরি, আসবাবপত্রসহ প্রতিটি ঘর পরিষ্কার করে গেলে ফিরে এসে ফাঁকা বাড়ির জঞ্জালের ধকল সামলাতে হবে না। সব মিলিয়ে ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার পর প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ পেতে এই করণীয়গুলো অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: এবারের ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় ১০টি নাটক
৬২৯ দিন আগে