ভ্রমণ নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে দিতে পারে স্বস্তি ও মুক্তি। এশিয়ার মধ্যে আছে এমন কিছু ভ্রমণ গন্তব্য আছে যা সাধ্যের মধ্যে আপনাকে দিতে পারে অনন্য এক অভিজ্ঞতা। পাহাড়, সমুদ্র আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক অপূব সমন্বয় ভিয়েতনাম। নিরাপদ ও সুন্দর এই দেশটিতে রয়েছে জনপ্রিয় সব দর্শনীয় স্থান। চলুন, এই ভ্রমণ নিবন্ধে ভিয়েতনাম ঘুরতে যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভিয়েতনামের ভৌগলিক অবস্থান
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ৩ লাখ ৩১ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ ভিয়েতনাম। এর উত্তরে চীন এবং পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়ার স্থল সীমানা। আর সামুদ্রিক সীমানা ভাগ হয়েছে থাইল্যান্ডের উপসাগরের মধ্যে দিয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যে দিয়ে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে।
ভিয়েতনামের নামকরণের ইতিহাস
সর্বপ্রথম ২য় শতাব্দীতে ‘ন্যানিউ’ বা ‘নাম ভিয়েত’ শব্দের নিদর্শন পাওয়া যায়, যেটি মূলত বর্তমান ‘ভিয়েতনাম’ শব্দেরই উল্টো রূপ। এর মধ্যে ‘ভিয়েত’ শব্দটি প্রাচীন মধ্য চীনা ভাষার, যা সর্বপ্রথম দেখা যায় একটি কুঠারে শিলালিপি আকারে। কুঠারটি ছিল ১ হাজার ২০০ খ্রিস্টপূর্বে শ্যাঙ রাজবংশের শেষ দিকে ওরাকল নামের বিশেষ হাড় এবং ব্রোঞ্জের অংশ।
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম এবং ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে নিচু ইয়াংজি অববাহিকার ইউ রাজ্য ও এর জনগণকে বোঝানো হতো ‘ইউ’ বা ‘ভিয়েত’ শব্দ দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয় দক্ষিণ চীন এবং উত্তর ভিয়েতনামের অ-চীনা জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
১৭ এবং ১৮ শতকের মাঝামাছি সময়ে শিক্ষিত ভিয়েতনামিরা নিজেদেরকে প্রকাশ করতো ‘নোই ভিয়েত’ (ভিয়েত জনগণ) বা ‘নোই নাম’ (দক্ষিণের জনগণ) বলে।
‘ভিয়েত’-এর পরে ‘নাম’ শব্দটির উপস্থাপন সর্বপ্রথম দেখা যায় ১৬ শতকের কবিতা স্যাম ত্র্যাঙ তৃণ-এ। এছাড়া ১৬ ও ১৭ শতকে ১২টি পাথুরে স্তম্ভেও খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া যায় ‘ভিয়েতনাম’ শব্দটি।
১৯ শতকের শুরুর দিকে নুইয়েন রাজবংশের রাজা গিয়া লং ‘আনাম’ নামের রাজ্য দখল করেন। তিনি ‘আনাম’-এর নাম বদলে ‘ভিয়েত’ বা ‘ন্যানিউ’ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিং রাজবংশের সম্রাট জিয়াকিং তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কারণ নামটি কিং সাম্রাজ্যের সেনাপ্রধান ঝাও তুওর এলাকা ‘ন্যানিউ’ নামটির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এছাড়া এই ন্যানিউয়ের মধ্যে দক্ষিণ চীনের জায়গা গুয়াঞ্জি এবং গুয়াংডংও ছিল। পরবর্তীতে সম্রাট জিয়াংকিং অঞ্চলটির জন্য সেই ‘ভিয়েতনাম’ শব্দটি পছন্দ করেন।
১৮০৪ এবং ১৮১৩ সালের মধ্যে সম্রাট গিয়া লং ‘ভিয়েতনাম’ নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করেন। নামটির পুনর্ব্যবহার হয়েছিল ২০ শতকের গোড়ার দিকে ফ্যান বই চোউয়ের ‘ভিয়েতনামের ক্ষতির ইতিহাস’ বইতে। পরে ভিয়েতনামের জাতীয়তাবাদী দল বেশ জোরেসোরে নামটির প্রচারণা চালায়।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
এরপরেও ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ‘আনাম’ নামেই পরিচিত ছিল অঞ্চলটি। অতঃপর বর্তমান ভিয়েতনামের উত্তর মধ্য উপকূলীয় সাম্রাজ্য হুয়ে সরকার এই অঞ্চলের জন্য ‘ভিয়েতনাম’ নামকে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই নামটিই অপরিবর্তিত হয়ে আছে।