তবে, ‘ওয়ান টাইম’ (প্লাস্টিক) চায়ের কাপ ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলা জুড়ে ছোট-বড় প্রায় ৮ হাজার চায়ের দোকান আছে। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ কাপ চা বিক্রি হয়। যার ৮০ শতাংশ দোকানি প্লাস্টিকের ‘ওয়ান টাইম’ চায়ের কাপ ব্যবহার করে। ব্যবহার শেষে এসব কাপ যত্রতত্র ফেলে দেয়া হচ্ছে। অপচনশীল এসব কাপ এখন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে প্লাস্টিকের এ চায়ের কাপকে দোষারোপ করছেন পরিবেশবাদীরা।
এছাড়া, ঝামেলামুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হরহামেশাই ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস। এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যে হুমকিতে পড়ছে, সে সম্পর্কে আশঙ্কার কথা জানান স্বয়ং ব্যাবহারকারীরাও।
স্থানীয় এক চায়ের দোকানদার বলেন, ক্রেতা ও স্থানীয়দের চাহিদার চাপে আমরা ওয়ান টাইম চায়ের কাপ নওয়াপাড়া বাজার থেকে কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছি।
উপজেলার পায়রা বাজারের চায়ের দোকানি আব্দুর রহমান, কলিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের চায়ের দোকানে প্লাস্টিকের ‘ওয়ান টাইম’ চায়ের কাপ না থাকায় স্থানীয় ভবদহ পুলিশ ক্যাম্প তাদের কাঁচের কাপ ভেঙে দেয়। তাই বাধ্য হয়েই তারা ‘ওয়ান টাইম’ কাপ ব্যবহার করছেন বলে জানান।
তবে ব্যবহারের পর ওই কাপ যত্রতত্র ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বাজারের প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায়ী মঙ্গল কুমার জানান, নওয়াপাড়া বাজারে প্রায় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ান টাইম’ প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করে। প্রতিদিন তারা প্রায় এক লাখ ‘ওয়ান টাইম’ প্লাস্টিকের চায়ের কাপ বিক্রি করছেন। প্রকারভেদে এসব চায়ের কাপ প্রতি পিস ৭০ পয়সা থেকে এক টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য এটি এম কামারুল ইসলাম জানান, প্লাস্টিক মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকারক, তেমনি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এসব অপচনশীল প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বন্ধে জরুরি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, ‘প্লাস্টিক কাপে চা বা গরম পানি পান করলে হার্ট, কিডনি, লিভারসহ ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পলিমার নামক ক্ষতিকর কেমিক্যাল, যা মানবদেহে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। এসব প্লাস্টিকের জন্ম হয় কিন্তু মৃত্যু হয় না।’
প্লাস্টিকের পরিবর্তে মাটির তৈরি অথবা কাঁচের কাপ ব্যবহার করা উত্তম বলে জানান তিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম রফিকুল ইসলাম জানান, পলি ইথায়লিন ও পলি প্রোপাইলিন বা উভয়ের কোনো যৌগ মিশ্রণে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ (৬) এর ‘ক’ ধারা লঙ্ঘনের সামিল। এর দায়ে দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে ব্যাপক জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে, যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে রবিবার দুপুরে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের নম্বরে টেলিফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।