বিশ্বব্যাংক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, দুর্নীতি দূর এবং বিচার বিভাগের মতো ক্ষেত্রে মূল সংস্কার গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপে বৃহত্তর সমর্থনের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। এর জবাবে মার্টিন বলেন, ‘আমাদের উপর নির্ভর করুন। আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: জাতি পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান ইউনূস
রেইজার বলেন, সরকারের সংস্কার এজেন্ডায় বিশ্বব্যাংক 'উচ্ছ্বসিত' এবং তিনি মনে করেন 'এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করা গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক প্রত্যাশা আছে।’
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ব্যাংকিং, কর, শুল্ক, ভ্যাট, ডিজিটালাইজেশন, দুর্নীতি প্রতিরোধের মতো পদক্ষেপের সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে ইউনূস বলেন, দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে এবং নতুন করে শুরু করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছ থেকে একটি বৃহত্তর ম্যান্ডেট পেয়েছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান বিদ্যমান ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন থেকেই শুরু করতে চাই।এখন সংস্কারের মৌসুম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ফিরে যেতে চাই না। অতীত সম্পূর্ণরূপে বাতিল। এটি একেবারে নতুন ক্ষেত্র।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সরকার এ পর্যন্ত যেসব সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি, শ্রম সংস্কার ও যুবসমাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শ্রম সংস্কারে আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করবে সরকার। এতে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং স্থানীয় উৎপাদকদের আন্তর্জাতিকভাবে অবস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে কাজ করুন, বিশ্বে কার্যকর প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ান: শীর্ষ ব্যবসায়ীদের প্রতি ড. ইউনূস
তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য খাতে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক ক্রীড়নক হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা এটি করতে চাই।’
সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পদক্ষেপের প্রশংসা করে রেইজার বলেন, বাংলাদেশে বার্ষিক এফডিআই দেশের জিডিপির প্রায় অর্ধেক শতাংশ এবং এটি এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন।
রাইজার বলেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গা মানবিক সংকট এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্যও ৭০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা লাখ লাখ তরুণের সমর্থনে আগ্রহী। তিনি বলেন, 'আমাদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।’
প্রধান আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী; সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক প্রধান লামিয়া মোরশেদ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক; অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বৈঠকে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে: ড. ইউনূস