ইউনূস
মোদি-ইউনূস বৈঠক: হাসিনাকে বিষোদগারের সুযোগ না দেওয়ার অনুরোধ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার সুযোগ না দেওয়া হয়, দেশটির কাছে সেই অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের সময় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। জবাবে তারা কী বলেছেন, জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘বালাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বলেছি যে প্রত্যার্পণ সাপেক্ষে তিনি (হাসিনা) দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছেন, সেটার সুযোগ যাতে ভারত সরকার তাকে না দেয়।’
শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের বিষয়ে মোদির জবাব কী ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে দুপক্ষ কাজ করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে বাংলাদেশের সাথে যে সম্পর্ক সেটা কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে না, এটা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে। আমরাও তা মনে করি। সেই ভিত্তিতে আমরা দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেব।’
গেল ৪ এপ্রিল ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখা ক্ষতিকর
সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা একটি দেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার এই উচ্চপ্রতিনিধি। তিনি বলেন, একপক্ষকে আরেকটি পক্ষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া ব্রিটিশদের কাজ।
যখনই ভারতের সঙ্গে আলাপ হয়, তখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন তারা। কিন্তু মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তুলছেন কিনা; প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুর প্রশ্নটি ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ব্রিটিশরা চলে গেছেন, কিন্তু সমস্যাটা আমাদের দেশে রয়ে গেছে। এক সম্প্রদায়কে আরেক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া ব্রিটিশদের কাজ। আমরা দুপক্ষই ভুক্তভোগী। আমাদের কোনো লাভ নেই, আমাদের বুঝতে হবে।’
‘কোনো দেশের সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখার মানে হচ্ছে, একটি জনগোষ্ঠী মূলস্রোতে আসতে পারছেন না। এটা ক্ষতি। যে দেশে এটা ঘটছে, সেটা তাদের ক্ষতি,’ যোগ করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা রকমের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, ৫ আগস্টের পর পাঁচ-সাতদিন সরকার ছিল না। সে সময়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। যে দলের পতন ঘটেছে, তাদের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবার ওপর নানা রকম হামলা হয়েছে। যেটা খুব দুঃখজনক। কারণ আইন হাতে নিয়ে নেওয়া উচিত না।’
তবে এখন সবাই বুঝতে পেরেছেন, সেই আগের অবস্থা নেই। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ওই স্কেলে তো ঘটেনি। তবুও আমরা বলবো, আমরা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব দেখতে চাই না। সরকার সবকিছু করতে পারবে না। আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধেরও একটা বিষয় আছে। আমাদের সবাইকে মিলেই কাজটি করতে হবে। আপনি বলছেন, ভারতে হচ্ছে, ভারতে হচ্ছে বলে আমাদের দেশেও হবে নাকি? আমরা তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা উদহারণ বলে নিজেদেরকে অভিহিত করি। সেই কাজটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নে আলোচনা
গঙ্গার পানি চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। সেটা নবায়নে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাতে করে আলোচনাগুলো মসৃণভাবে শুরু হয়, সে জন্য আমরা দুপক্ষই যোগাযোগ রাখছি। আমাদের ধারণা, ভারতের কাছ থেকে আমরা এ বিষয়ে ভালো সহযোগিতা পাবো। তিস্তার বিষয়ে তাদের জানিয়েছি। আমাদের দেশের ১৪ শতাংশ তিস্তা অববাহিকায় বসবাস করেন।’
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
‘তাদের জীবন-জীবিকা, ভবিষ্যত, ওই অঞ্চলের ইকোলজি সবকিছু নির্ভর করছে পানির সহজলভ্যতার ওপর। পানি নেই, পুরো জায়গাটিই নেই।’
খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই তিস্তা অববাহিকায় ন্যূনতম পরিমাণ পানি নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের একটি বিশাল অগ্রাধিকার। ১৪ শতাংশ লোককে একেবারে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারেন না। সে জন্য আমরা সবার সাথে কথা বলেছি। ভারতকে বলেছি, চুক্তিটি করেন। পাশাপাশি, অন্য বিকল্পগুলোও হাতে রাখতে হবে।’
স্মৃতিকথায় থাকবে অজিত দোভালের সঙ্গে কথোপকথন
৩ এপ্রিল রাতে বিমসটেকের অফিশিয়াল নৈশভোজে ছিলেন আপনারা। সেখানে আপনাকে দেখেছি, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে মগ্ন হয়ে কথা বলতে। সেখানে আপনাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অজিত দোভালের সঙ্গে যেদিন কথা বলি, তার দুদিন আগে আমেরিকান ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অ্যালেক্স এন ওয়ংয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তিনি ফোন করেছিলেন।’
‘সেখানে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়েছে। অ্যালেক্স এন কিন্তু চাকরিতে আছেন। কেউ কেউ বলছেন তার চাকরি গেছে। কিন্তু তিনি চাকরিতে আছেন, তিনি ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার এবং তিনি হোয়াইট হাউসে বসেন।’
প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি বলেন, ‘দোভালের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে আলাপ হয়েছে। ঘড়ি ধরে তো আলাপ করিনি। আমরা আলাপে মগ্নই ছিলাম। আমি সব জানাব, আমার স্মৃতিকথায়।’
২৬ দিন আগে
মোদি-ইউনূস বৈঠক: হাসিনাকে প্রত্যর্পণসহ সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) মধ্যাহ্নের পর তাদের দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠক হয়েছে।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এমন তথ্য দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবো: প্রধান উপদেষ্টা
দুই নেতার বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো ইস্যু ছিল, সবগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো বিষয় ছিল, সবগুলো বিষয়ই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। যেমন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা হয়েছে। শেখ হাসিনা যে ওখানে (ভারতে) বসে ইনসিন্ডিয়ারে (হিংসাত্মক) কথা বলছেন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, নতুন করে সেটা করা নিয়ে কথা হচ্ছে। তিস্তা পানি চুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে।’
বৈঠকটি অনেক গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছে।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডে প্রথমবারের মতো মোদি-ইউনূস বৈঠক
৩০ দিন আগে
থাইল্যান্ডে প্রথমবারের মতো মোদি-ইউনূস বৈঠক
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে এই বৈঠক হয়। যা জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বার্তা সংস্থা ইউএনবি এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছে।
এরআগে বৃহস্পতিবার বিমসটেক সম্মেলনের নৈশভোজে দুই নেতার সাক্ষাৎ হয় এবং তারা কুশলাদি বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবো: প্রধান উপদেষ্টা
৩০ দিন আগে
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করায় ইউনূসের প্রশংসা সালিভানের
বাংলাদেশের অর্থনীতির মোড় ঘোরানো এবং গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এসব বিষয়ে তার প্রশংসা করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় তাদের দুজনের আলোচনায় দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়টি উঠে আসে।
গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর গত সাড়ে চার মাস ধরে মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন তার প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তিকে কাজে লাগান, কার্যকর পদক্ষেপ নিন: ডি-৮ সদস্যদের অধ্যাপক ইউনূস
বাংলাদেশের অর্থনীতি এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, নির্বাচন-সংক্রান্ত এবং অন্যান্য সংস্কার শুরুর জন্য যে অগ্রগতি হয়েছে তারও প্রশংসা করেন জেইক সালিভান।
তিনি জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ দেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
টেলিফোন আলাপে তারা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি নিয়েও আলোচনা করেন।
ইউনূস দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশকে উদার সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পুনরায় সমর্থন জানিয়ে জেক সালিভান সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন।
ইউনূস জানান, তিনি জানুয়ারির মধ্যে ছয়টি বড় সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়ে আশা করছেন। এরপর সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করতে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আরও পড়ুন: তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ করতে দৃষ্টিভঙ্গি-নৈতিকতার ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান ড. ইউনূসের
১৩১ দিন আগে
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইউনূস
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট রামোস। এরপর প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ড. ইউনূস ও প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হবেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশ ভিসা ছাড় এবং ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় অবস্থানকালে রাষ্ট্রপতি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
চার দিনের সরকারি সফরে শনিবার রাতে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: নেচারের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকায় ড. ইউনূস
রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তাকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট ও গার্ড অব অনার দেয়। দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
পূর্ব তিমুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রামোস-হোর্তার সঙ্গে রয়েছেন।
রবিবার বিকেলে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনসাল কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ও বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করবেন রামোস-হোর্তা।
১৬ ডিসেম্বর রামোস-হোর্তা বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয় উপলক্ষে আয়োজিত ৫৪তম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট তার শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে 'সমসাময়িক বিশ্বে শান্তির চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক বক্তৃতা দেবেন।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও তরুণ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। তার দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা, জনগণের ভূমিকা এবং পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা-পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও পূর্ব তিমুরের মধ্যে কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে তার এ সফর।
একই দিন ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট রামোস-হোর্তা।
আরও পড়ুন: সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে চলতি মাসেই ঘোষণার ইঙ্গিত ড. ইউনূসের
১৪০ দিন আগে
যুক্তরাজ্য আশা করে ড. ইউনূস জাতীয় ঐক্যের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন: ক্যাথরিন
যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্য ত্বরান্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই যুক্তরাজ্য আশা করছে, কীভাবে সেসব বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্যাথরিন বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জনগণকে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে সহায়তা করার চেষ্টা করবে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের
উত্তরে তিনি বলেন, 'অবশ্যই এবং আমরা আশা করছি, কীভাবে এসব ঘটবে সে বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন অধ্যাপক ইউনূস।’
ওয়েস্ট বলেন, তারা জানেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এসব উদ্দেশ্য সাধন করতে যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তারা একক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে বাংলাদেশ বর্তমানে রূপান্তরের পর্যায়ে থাকায় তারা সরকারকে সমর্থন করতে চান।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব কাজ করছে আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করতে চাই।’
ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, 'আমরা জানি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী।’
বাংলাদেশের জনগণের জন্য উন্নত গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃঢ় সংকল্পকে স্বাগত জানান তিনি।
ওয়েস্ট বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের খুব শক্তিশালী ও অবিচল বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা শক্তিশালী অংশীদারত্ব গঠন করতে চাই এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তরটি শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
অর্থনীতি ও বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিরাপত্তা, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি জানান, তারা একসঙ্গে অনেক কিছু করছেন এবং তাদের অবশ্যই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রিন্সেস ক্যাথরিনের সাহসিকতায় গর্বিত রাজা চার্লস
ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, কয়েক মাসের অশান্ত অবস্থার পর বাংলাদেশের জনগণের 'শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ ও জবাবদিহির' জন্য একটি পথ পাওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে যুক্তরাজ্য কীভাবে সর্বোত্তম সহায়তা করতে পারে তা, নিয়ে আলোচনা করতে আমি এখানে এসেছি।’
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা শরণার্থীদের জন্য উপযুক্ত আশ্রয় নির্মাণ এবং শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে তারা আরও ১০ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করেছেন।
গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের কোনো মন্ত্রীর সফর বাংলাদেশ সফর।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ অভিবাসনে চলমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বর্তমানে অনন্য ও ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব বিরাজ করছে। এটি দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক এবং অভিন্ন কমনওয়েলথ মূল্যবোধের কারণে দৃঢ় হয়েছে।
এই সফরে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতা এবং সুশীল সমাজের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ওয়েস্ট।
ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরও সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজকে সমর্থন করে যুক্তরাজ্য।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, 'ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।’
হাইকমিশনার বলেন, এই সফর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে আরও ব্যাপক ও গভীর করবে।’
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ বর্তমানে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু হিসেবে যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে সহায়তা করবে। এটি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।’
যুক্তরাজ্যের সহায়তার মধ্যে বিক্ষোভে গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মেডিকেল টিম মোতায়েনের কথাও রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের স্থানীয়রা যুক্তরাজ্যের নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সেবা পাবে।
এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরাও যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে সহায়তাও পাবেন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রিটিশ মন্ত্রী।
এছাড়া দৃঢ় সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে এবং পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রিন্সেস ক্যাথরিন ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন, প্রিন্স হ্যারি-মেগানের আশা
১৬৮ দিন আগে
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ-জটিলতা মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার আহ্বান ইউনূসের
বিশ্বব্যাপী 'চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা' মোকাবিলা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, যখন আমরা একত্রিত হই, এক হয়ে কাজ করি, তখন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমাদের থাকে। এই সম্মেলন ঠিক সেই বিষয়েই – ঐক্যের শক্তি, অভিন্ন উদ্দেশ্যের শক্তি।’
ইউনূস এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যেখানে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীরা নয়, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষ সমানভাবে ভোগ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই আশাবাদী। আমি সবসময় সৃজনশীল ও কল্পনা শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা যদি একসঙ্গে কল্পনা করতে পারি তবে এটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। চলুন আমরা সেটি করি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার বা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি যাই হোক না কেন, তারা এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন যা অপ্রতিরোধ্য।
তিনি বলেন, ‘তারপরও বাংলাদেশে আমরা ঘুরে দাঁড়ানো, প্রতিকূলতা মোকাবিলা এবং তা থেকে সুযোগ তৈরি করার বিষয়ে কিছু জানি।’
তিনি জানান, এটি এমন একটি শিক্ষা যা তিনি কয়েক দশক আগে শিখেছিলেন গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে কাজ করে, তাদের সাহস দেখে এবং তাদের শক্তির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সমস্যারই সমাধান আছে, যদি আমাদের ধৈর্য থাকে, চেষ্টা করার সাহস থাকে এবং এগিয়ে যাওয়ার অধ্যবসায় থাকে।’
তিনি বলেন, এই অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুক্তভোগীদের সামনের সারিতে রয়েছে এবং প্রতি বছর, উপকূলীয় এলাকাবাসী ক্রমবর্ধমান জলোচ্ছ্বাস এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়। এর ফলে তাদের জীবন, ঘরবাড়ি ও জীবিকার উপর প্রভাব পড়ে।
তিনি বলেন, এটি এমন এক সমস্যা, যার সমাধানে তাৎক্ষণিক ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের প্রয়োজন। এটি এক দিনের জন্যও ফেলে রাখা যায় না।
তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে আমাদের এ এলাকা অপার সম্ভাবনাময়। আমাদের দেশ তরুণদের দেশ।’
১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি দেশকে সৃজনশীলতায় খুব শক্তিশালী করে তোলে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'আমাদের তরুণদের টেকসই উন্নয়নে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, সবুজ প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরি এবং আমাদের পরিবেশের প্রচার করার ক্ষমতা রয়েছে।’
তবে এর জন্য সহযোগিতা, সাহস ও অভিন্ন ভবিষ্যতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণকারীদের কীভাবে নতুন বিশ্ব গড়া যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহিত করেন ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ গ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন জীবনধারাসহ নতুন বিশ্ব কল্পনা করার সাহস করি।’
আরও পড়ুন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, শুধু পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অতিরিক্ত সম্পদ আহরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’ তাদের থ্রি জিরো, নিট জিরো কার্বন নিঃসরণ, জিরো ওয়েলথ কনসেন্ট্রেশন-বিশ্ব তৈরি করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সামাজিক ব্যবসা চালু করে, মুনাফা বৃদ্ধি না করে এবং শূন্য বেকারত্ব, যেখানে যুবকদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, 'মানুষের জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আমরা সেটাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করি।’
আন্তর্জাতিক অতিথিদের নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানান ইউনূস।
তিনি বলেন, ১০০ দিন আগে প্রায় হাজার ছাত্র ও তাদের সমর্থকরা পুরোনো সরকারের হাতে নিহত হয়েছেন এবং ২০ হাজার আহত হয়েছেন।
ইউনূস বলেন, 'এই আন্তর্জাতিক সমাবেশের মাধ্যমে আসুন আমরা তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং কেউ কেউ অঙ্গ, চোখ ও বিভিন্ন শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন।’
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি দেখতে বিদেশি অতিথিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির দেশ। ‘এটি এখন আরও প্রকট, কারণ বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাগুলো মানুষের মনে এখনও তাজা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি লাখ লাখ কণ্ঠের কাজ, প্রায় সমগ্র জাতির কণ্ঠস্বর, যা পরিবর্তনের দাবি করেছে, যা আমাদের সবাইকে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে।’
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ঢাকায় শনিবার শুরু হলো আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) ২০২৪’র তৃতীয় আসর।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে পেয়ে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’
জিল্লুর রহমান বলেন, সিজিএস আয়োজিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন এবারের সম্মেলন।
সম্মেলনে ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অংশগ্রহণকারী একত্রিত হবেন।
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। বিওবিসির তৃতীয় সংস্করণের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ এ ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড’।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রিড তৈরির চিন্তা করা উচিত: অধ্যাপক ইউনূস
১৬৯ দিন আগে
নতুন সভ্যতার জন্য 'বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক, যুব শক্তিকে' একত্রিত করার আহ্বান ইউনূসের
একটি নতুন সভ্যতা, একটি আত্মসংরক্ষিত এবং আত্ম-শক্তিশালী সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনে বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে একত্রিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমরা আত্ম-ধ্বংসাত্মক মূল্যবোধের লালন অব্যাহত রাখায় আমাদের সভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ দুই দিনের ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে (ডাব্লুএলসিএএস) অংশ নিতে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কপ২৯: বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (কপ২৯) পক্ষগুলোর ২৯তম সম্মেলন ১১ থেকে ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
ভিন্ন দৃষ্টিকোণে 'জলবায়ু বিপর্যয়কে' উপস্থাপন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য নতুন জীবনধারা প্রয়োজন। যা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, তবে এটি একটি পছন্দ হবে।
তিনি বলেন, ‘তরুণরা এই জীবনধারাকে পছন্দ করে। প্রতিটি তরুণ তিন শূন্য ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে- শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ, শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং নিজেদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করে শূন্য বেকারত্ব।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বলেন, প্রতিটি মানুষ ‘থ্রি জিরো’ ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং তিনি সারা জীবন এই নীতিতেই থাকবেন এবং এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে।
আরও পড়ুন: জানুয়ারিতে যুব উৎসবে যোগ দিচ্ছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট
অন্যরাও তার এই স্বপ্নে যোগ দেবেন এমন আশা প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা করা যেতে পারে। আমাদের যা করতে হবে তা হলো গ্রহ এবং এতে বসবাসকারী সকলের সুরক্ষায় সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা। বাকিটা আজকের প্রজন্মই করবে। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’
তিন শূন্যের নতুন পৃথিবী গড়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি, তাহলে তা হবেই।’
এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের জলবায়ু ধ্বংস রোধ করা থেকে শুরু করে আরও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার দিকে নিয়ে যাবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই পৃথিবী ধ্বংসের জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমরা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে ন্যায্যতা দিচ্ছি, যা গ্রহের সিস্টেমের মতো প্রাকৃতিক হিসাবে বিবেচিত হয়।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন ভোগের উপর সমৃদ্ধ হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যত বেশি গ্রাস করবেন তত বেশি বাড়বেন। আপনি যত বেশি বাড়বেন, তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন।
তিনি বলেন, মুনাফার সর্বোচ্চ বৃদ্ধিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা সিস্টেমের সমস্ত কিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুসারে তার ভূমিকা পালন করতে দেয়।
আরও পড়ুন: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অধ্যাপক ইউনূসকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস এরদোয়ানের
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টিকে থাকতে হলে বিশ্বকে আরেকটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে- একটি পাল্টা সংস্কৃতি যা ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘এটি শূন্য বর্জ্যের উপর ভিত্তি করে। এটি প্রয়োজনীয় চাহিদার মধ্যে খরচ সীমাবদ্ধ করবে, কোনো অবশিষ্ট বর্জ্য রাখবে না। এই জীবনধারাও শূন্য কার্বনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি নেই। শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটা এমন একটি অর্থনীতি হবে, যা প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত মুনাফা– সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
এই ব্যবসাকে সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অ-লাভজনক ব্যবসা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
'সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতি রক্ষায় মনোনিবেশ করবে,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিত নয়, গুণগতভাবে উন্নত করা হবে। এটি তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধা দেবে।
তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুত হবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'চাকরি খোঁজার জন্য শিক্ষার জায়গা নেবে উদ্যোক্তা-কেন্দ্রিক শিক্ষা'।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, কপ-২৯ চলাকালীন আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের ডাব্লুএলসিএএস-এ আমন্ত্রণ বিশ্ব নেতাদের জড়িত হওয়া এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ানো। এটি নির্গমন হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, জলবায়ু সম্পর্কিত মূল সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন ও রূপান্তর করার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনায় রূপান্তর করার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে, উন্নতি করবে: আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম
কপ-২৯ সম্মেলনটির লক্ষ্য হলো অংশীজনদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি এবং কর্ম সক্ষম করার জন্য পরিকল্পনার ঘিরে ঐকমত্য গড়ে তোলা। এছাড়া গতিবেগ তৈরি করা এবং সকল অংশীজনদের কাছে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রদর্শন করা।
এটি জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি), জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) এবং দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন-নির্গমন উন্নয়ন কৌশল (এলটি-এলইডিএস) এর মাধ্যমে প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ানো, জলবায়ু সম্পর্কিত নতুন সমষ্টিগত কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) এবং বাস্তবায়ন ও সহায়তার অন্যান্য উপায়সহ কর্ম সক্ষম করবে।
অধ্যাপক ইউনূস জার্মানি ও চিলি আয়োজিত রুদ্ধদ্বার জলবায়ু নেতাদের বৈঠকে যোগ দেন।
তিনি বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত 'অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স ফর স্মল স্কেল ফারমার্স' শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের বৃহত্তম জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৯ এ যোগ দিতে সোমবার সন্ধ্যায় বাকুতে পৌঁছেছেন। এটিকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার বিকাল সোয়া ৫টায় (বাকু সময়) প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানাতে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ইউনূস একটি ছোট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং ১৪ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকি কীভাবে এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে তেল শিল্পের জন্মস্থান ছিল এমন একটি জায়গায় সারা বিশ্বের নেতা এবং কূটনীতিকরা বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রিড তৈরির চিন্তা করা উচিত: অধ্যাপক ইউনূস
১৭২ দিন আগে
কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
নভেম্বরে আজারবাইজানের রাজধানীতে আয়োজিত হতে যাচ্ছে কপ-২৯ সম্মেলন। জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করতে ৩২ হাজার মানুষের সমাবেশ হতে যাচ্ছে এই সম্মেলনে। জলবায়ু নিয়ে এই মহা আয়োজনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, সবকিছু চূড়ান্ত হলে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাকু যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ১১ থেকে ২২ নভেম্বর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বসতে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (কপ২৯) ২৯তম আসর।
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার জন্য কপ২৯ সম্মেলনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি দমনে ডিজিটাইজেশনকে গুরুত্ব দিতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
রেকর্ড ছাড়ানো বৈশ্বিক তাপমাত্রা, চরম আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এসব সমস্যার সুনির্দিষ্ট সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে কপ২৯ বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের একত্রিত করবে।
জাতিসংঘের মতে, কপ২৯-এর মূল লক্ষ্য হবে অর্থায়ন, কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় দেশগুলোর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
প্যারিস চুক্তির অধীনে দেশগুলোর হালনাগাদ জাতীয় জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হবে এই সম্মেলনে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে দ্বিগুণ করবে।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূত এলচিন হুসেনলি মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে বাকুতে আসন্ন কপ-২৯ শীর্ষ সম্মেলন, জ্বালানি, বাণিজ্য, ব্যবসায়িক সহযোগিতা এবং দুই দেশের মধ্যে একটি পরিকল্পিত বিমান পরিষেবা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
রাষ্ট্রদূত হুসেনলি দুই দেশের মধ্যে গভীর বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাকু 'নতুন সুযোগ' এবং আরও ব্যবসার জন্য দরজা খোলার উপায় খুঁজছে।
তিনি আরও বলেন, গত জুনে বাকুতে দুই দেশের ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আজারবাইজান বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিমান চলাচল চুক্তি করতে চায় বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানকে 'ভালো বন্ধু' হিসেবে অভিহিত করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে ড. ইউনূস আজারবাইজানের জনগণ, এর নেতৃত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন: আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
১৯৪ দিন আগে
শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা হবে: ইউনূস
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধ করে থাকলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড ইভেন্ট'-এ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন হবে না? তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির বিচার শুরু হলে বাংলাদেশ অবশ্যই তার প্রত্যর্পণ চাইবে।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি ভারতে থেকে গেলে আমরা তার প্রত্যর্পণ চাইতে পারি। আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের জানাব।’
গত ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিম গঠনসহ কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি রয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, 'কোনোভাবেই নয়, এটা আমার জন্য নয়।’
তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। ‘যারা নির্বাচনে অংশ নেয়, আমাকে কি তাদের মতো মনে হচ্ছে?’
'গণপিটুনি' বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিদেশের মানুষ অতিরঞ্জিত সংবাদ পাচ্ছে এবং তাদের নিজের চোখে দেখে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, যেহেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাই বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।
সংস্কার অর্জনের জন্য গঠিত কমিশনগুলো হলো- বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সরফরাজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এই কমিশনগুলো ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
'তুমিই কারণ, আমরা ভোগান্তির শিকার।’
ইউনূস আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার বৈশ্বিক প্যারিস চুক্তি ততদিন কাজ করবে না, যতদিন বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে টিকে থাকবে।
তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা সর্বাধিক মুনাফা অর্জন, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য সম্পদ তৈরি এবং ব্যাপক বর্জ্য সৃষ্টির উপর কেন্দ্রীভূত।
মানুষ 'আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা' তৈরি করেছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, 'আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি তা এই গ্রহের ধ্বংসের চাবিকাঠি।’
নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড সামিটে ইউনূস বলেন, চুক্তিতে যত পরিবর্তনই আনা হোক না কেন, এটি কোনো পার্থক্য আনবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তর্নিহিত ব্যবস্থাগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারত বন্ধুত্ব চায় শুধু স্বৈরশাসক হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়: রিজভী
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ধনী দেশের কারণে জলবায়ুর ক্ষতির বোঝা বহন করতে হবে না।
তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের উপর যে সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ চাপিয়ে দিয়েছেন, তার বোঝা আমরা কেন বহন করব? আপনারই কারণ, আমরা ভুক্তভোগী।’
তিনি আরও বলেন, কম বর্জ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর দায়িত্বও পালন করা উচিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সম্মুখীন একটি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন ইউনূস।
তার মতো দেশগুলোর কাছে ধনী দেশগুলোর কী পাওনা জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, জলবায়ু মোকাবিলায় বৈশ্বিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, যার লক্ষ্য নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ এবং চরম সম্পদ বৈষম্য দূরীকরণ।
নিউইয়র্ক টাইমস বুধবার উদ্ভাবক, কর্মী, বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করে লাইভ জার্নালিজমের সারাদিনের ইভেন্টে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো পরীক্ষা করে।
ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড নামে এই অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন বক্তারা।
এতে জেন গুডাল, মুহাম্মদ ইউনূস ও আর জে স্কারিংসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ করা এবং দ্রুত উষ্ণ হওয়া গ্রহের হুমকি সম্পর্কে কঠিন প্রশ্নের উত্তরের জন্য মত বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে: অধ্যাপক ইউনূস
২২০ দিন আগে