অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে পাসপোর্ট প্রাপ্তির ঝক্কি-ঝামেলা অনেকটা কমে এসেছে। ঘরে বসেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবেদন ফি পরিশোধসহ পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যায়। সহজ ব্যাপার হলেও আবেদন ফর্মে তথ্য প্রদান করার সময় ভুল হচ্ছে কি না তার একটা প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত পাসপোর্ট ওয়েব ইন্টারফেস থেকেই দেয়া হয়। কিন্তু তথ্যগুলোর পরিপূর্ণভাবে সঠিক হওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় আবেদনকারী নিজেকেই। আর এই জায়গাটিতেই বিশেষ করে নতুনদের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া বা অসাবধানতা বশত ভুল হয়ে যায়। আজকের নিবন্ধে আলোচনা করা হবে ই-পাসপোর্ট আবেদনের সেই ভুলগুলোর সংশোধন নিয়ে।
জমা দেয়ার আগে ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল ধরা পড়লে করণীয়
ই-পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য বাংলাদেশের অভিবাসন ও পাসপোর্ট অনুষদের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করলে আবেদনকারীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়। অ্যাকাউন্টটিতে আবেদনকারীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। আবেদনের মুহুর্তে অনলাইন আবেদনের ফর্মের প্রতিটি পেজ আলাদা ভাবে সংরক্ষিত হয়। তাই আবেদনকারী পুরো আবেদনটি সম্পন্ন করে সাবমিট বাটনে ক্লিক না করেও তার অসমাপ্ত আবেদনটি নিজের অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
তাই চূড়ান্ত ভাবে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা প্রদানের আগ পর্যন্ত আবেদনপত্রের যে কোনো ভুল আবেদনকারী যতবার ইচ্ছে ততবার সংশোধন করতে পারবেন। একবার সাবমিট বাটনে প্রেস করে ফেলার পর আবেদনটি আর আগের মত সংশোধনের উপায় থাকবে না। জমাকৃত আবেদনের তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে তার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে। এ সময় জমাকৃত ই-পাসপোর্ট আবেদন সংশোধনের জন্য কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে চলুন তা জেনে নেয়া যাক।
আরও পড়ুন: পুরাতন পাসপোর্ট নবায়নের উপায়
জমা দেয়ার পর ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল চোখে পড়লে করণীয়
ই-পাসপোর্ট আবেদন পরিপূর্ণভাবে শেষ করে তা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করার পর দেখা গেলো তাতে ছোট্ট একটি ভুল আছে। এ অবস্থায় মুলত দুটি পদ্ধতিতে ভুল সংশোধনের চেষ্টা করা যেতে পারে।
(১) নিতান্ত উপেক্ষণীয় ভুলের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে যেয়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কম্পিউটার অপারেটরকে অনুরোধ করে ভুলটি সংশোধন করে নেয়া যেতে পারে। ছোট ছোট ভুল নিয়ে তেমন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তবে বড় ভুল হলে পাসপোর্ট অফিস আবেদনই গ্রহণ করতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হবে দ্বিতীয় উপায়।
(২) বড় ভুলটি সংশোধনের জন্যও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে দেখা যেতে পারে। যদি তিনি সংশোধন করে দেন তাহলে তো ভালই, আর তা না হলে শেষ উপায় হচ্ছে আবেদনপত্র বাতিল করা। অতঃপর নতুন করে আবেদন ফরম পূরণ করা। চলুন এবার দেখে নেয়া যাক ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
অনলাইনে জমাকৃত ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম
প্রক্রিয়াটির শুরু পাসপোর্ট অফিসের সহকারী উপ-পরিচালক বরাবর একটি দরখাস্ত লেখা দিয়ে। ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল বিষয়ের এই দরখাস্তে প্রথমেই নিজের নাম ও পিতামাতার নামের পর আবেদনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এরপর দিতে হবে অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনের আইডি নম্বর। এটি পাওয়া যাবে আবেদনের পর অ্যাপ্লিকেশন সামারিতে, যার শুরু হয়েছে OID দিয়ে। অতঃপর আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে আবেদনের যে অংশে ভুল হয়েছে তার কথা লিখতে হবে। এই মূল অংশগুলোর মাধ্যমে দরখাস্তটি শেষ করে তার সঙ্গে অনলাইন আবেদনের সেই অ্যাপ্লিকেশন সামারির প্রিন্ট করা কপিটি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
এরপর কাগজগুলো নিয়ে সশরীরে গিয়ে জমা দিতে হবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নবায়ন সমস্যা সমাধানে সৌদি-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ
অনলাইন থেকে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি
পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের জন্য দরখাস্ত জমা দেয়ার দিনই আবেদনকারীর মোবাইলে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের বিষয়ে একটি এসএমএস চলে আসবে। এবার আবেদনকারীকে পাসপোর্ট আবেদনের ওয়েবসাইটে তার নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের এসএমএস যেহেতু চলে এসেছে, সেহেতু অ্যাকাউন্টে আবেদনের অংশে লাল অক্ষরে স্ট্যাটাস ক্যান্সেল দেখাবে। তারপরেই থাকবে ডিলিট অপশন, যেটি প্রেস করার মাধ্যমে পুরো আবেদনটি নিজের অ্যাকাউন্ট তথা অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। এরপর সঠিক তথ্য দিয়ে নতুন করে আবার ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন করা যাবে।
এখানে উল্লেখ্য যে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হতে প্রায়ই একটু সময় নিতে পারে। কখনও কখনও ২৪ ঘন্টার মতো দীর্ঘ সময়ও লেগে যেতে পারে। এছাড়া আবেদন ডিলিট করার পরেও প্রায় সময় নতুন ভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায় না। মুলত পাসপোর্ট সার্ভারের ত্রুটির কারণে এরকমটা হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোর বেলায় বার বার চেষ্টা না করে একটু বেশী সময় অপেক্ষা করে চেষ্টা করতে হবে। এই সময়টি তিন থেকে শুরু করে কখনও কখনও সাত দিন পর্যন্তও যেতে পারে।
এই সময়ে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হয়েছে কি না তা নিয়মিত অনলাইনে যাচাই করা যেতে পারে। এর জন্য পাসপোর্ট আবেদনের ওয়েবসাইটের চেক স্ট্যাটাস মেন্যুতে যেতে হবে। অতঃপর অনলাইন পাসপোর্ট আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন সামারির সেই OID নম্বর অথবা অ্যাপ্লিকেশন আইডি অথবা ইমেইল আইডি এবং জন্ম তারিখ দিয়ে আবেদনের বাতিলের ব্যাপারে জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে: প্রধানমন্ত্রী
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধের আগে আবেদনে ভুল ধরা পড়লে করণীয়
এ ধরনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের টাকা জমা দেয়ার সময়সীমাটিকে খেয়াল রাখতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনটি অনলাইনে জমা দেয়ার পর থেকে ২০০ কার্যদিবস বা ছয় মাস পর্যন্ত সময় থাকে টাকা জমা দেওয়ার। এই সময়টি ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাঁপ দেয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ছয় মাস পর পাসপোর্ট আবেদনটি এমনিতেই পাসপোর্ট অফিসের পাশাপাশি পাসপোর্ট সার্ভার থেকেও সরিয়ে ফেলা হয়। তাই তাড়া না থাকলে ছয় মাস পর বাতিল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর নতুন করে আবেদন করা যেতে পারে।
তবে জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো তাৎক্ষণিকভাবে পাসপোর্ট অফিসের সহকারি উপ-পরিচালকের নিকট আবেদনটি বাতিল করার জন্য দরখাস্ত করা। এভাবে দরখাস্ত গ্রহণের পর থেকে এক দিনের মধ্যেই আবেদনটি সার্ভার থেকে বাতিল হয়ে যায়। কারিগরি জটিলতা থাকলে সর্বোচ্চ সাতদিন লাগতে পারে। অতঃপর উপরোক্ত নিয়মে ই-পাসপোর্ট আবেদনটি ডিলিট করে দেয়া যায়।
আরও পড়ুন: শিশুদের ই-পাসপোর্টের নিয়ম: কীভাবে আপনার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পাসপোর্ট করবেন
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধের পরে আবেদনে ভুল ধরা পড়লে করণীয়
যারা ইতোমধ্যে আবেদনের সঙ্গে টাকাও জমা দিয়ে ফেলেছেন, তাদের আবেদনে কোনো ভুল বের হলেও একই নিয়মে পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আবেদন ফি’টিও বাতিল হয়ে যাবে না। বরং তারা আগের আবেদনের সঙ্গে যে ব্যাংক রশিদ বা চালান দিয়েছিলেন, সেই একই রশিদ বা চালান নতুন পাসপোর্ট আবেদনের সময় জমা দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
আগের বার আবেদনে ই-পাসপোর্টের যে মেয়াদ, পৃষ্ঠা ও সরবরাহের ধরণ উল্লেখ করা হয়েছিল, এবারেও তা অপরিবর্তিত রাখতে হবে। যেমন- আগের বার আবেদনের সময় যদি মেয়াদ ১০ বছর এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৪ হয়, এবং সরবরাহের ধরণ রেগুলার হয়, তবে এবারের আবেদনের বেলাতেও তথ্যগুলো একই রাখতে হবে।
তবে পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের পর নতুন করে আবেদন না করা হলে পূর্বের আবেদনের জন্য ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ফেরৎ পাওয়া যাবে না। ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি-এর এই ব্যাংক রশিদ বা চালান ইস্যু করা হয় মুলত আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাম দিয়ে। এই চালানের মেয়াদ থাকে ছয়মাস; অর্থাৎ ছয়মাস পরে আবেদন করলে নতুন করে আবেদন ফি দিতে হবে।
শেষাংশ
সর্বোপরি, অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদনে কোনো ভুল হলে প্রয়োজনীয় শর্তগুলো খেয়াল রেখে উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা সংশোধন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দুটোরই নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় চূড়ান্ত ভাবে সাবমিট বাটনে ক্লিক করার আগেই সাবধান হওয়া উচিত। ইন্টারনেট পরিষেবার সহজলভ্যতার ও পাসপোর্ট আবেদন ডিজিটাল করার কারণে আবেদনের সময় অনেকটা বাঁচে। এরপরেও নাগরিক জীবনের জন্য অতি দরকারি এই নথিটি তৈরি করার প্রাথমিক ধাপে যথেষ্ট সময় দেয়া উচিত। এই ধাপে অল্প কিছু অতিরিক্ত সময় প্রদান ভবিষ্যতে শত শত বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আরও পড়ুন: যেভাবে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করবেন