চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এসময় দেশের অর্থনীতি এবং এর জনগণের প্রতি তাদের সংকটকালীন ভূমিকার ওপর জোর দেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও এর বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছি। দেশের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য চলমান প্রকল্পগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি।’
চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক বা অন্য খরচই হোক অপচয় কমাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা এগুলো পর্যালোচনা করব।’
ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদেরকে অবশ্যই তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেটি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসুক, অথবা ঋণ বা অনুদান থেকেই আসুক না কেন।’
এডিপি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন দুর্বলতার কথা স্বীকার করে দ্রুত উদ্যোগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এডিপি বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে। প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য আমরা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি একজন প্রকল্প পরিচালকের অধীনে একাধিক প্রকল্প অর্পণকে নিরুৎসাহিত করেন এবং কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ এবং গুরুত্বসহকারে কর্মনীতি গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমরা কর্মকর্তাদের তাদের ওরিয়েন্টেশন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে এবং তাদের দক্ষতা বাড়াতে বলেছি।’
বিলম্ব ও আর্থিক অপচয় রোধে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও ভালো সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যাগুলো সমাধান করার পরিকল্পনার কথা জানান।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১.৭ শতাংশে পৌঁছেছে: বিবিএস
ডাটা ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে তিনি কর্মকর্তাদের সঠিক ও দ্রুত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের নির্দেশ দেন।
আর্থিক খাতের সম্ভাব্য সংস্কারের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা অনতিবিলম্বে ব্যাংকিং খাতসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেব।’
এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় নির্ধারণের জন্য তিনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, শিগগিরই নতুন গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়, সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জের কারণে এটি কেবল ধীর হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন,‘অর্থনীতিকে বেগবান করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো শূন্যতা নেই।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিদ্যমান নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
তিনি স্বীকার করেছেন যে দেশ একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি পার করছে। অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলেও আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনীতি ইতিমধ্যে গতিশীল হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গভর্নরের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকুক বা না থাকুক বাংলাদেশ ব্যাংক সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আরটিজিএস ও এলসি পেমেন্টের মতো কার্যক্রমে গভর্নরের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে চলেছেন আহসান এইচ মনসুর