আগামী রোজা পর্যন্ত দেশে কোনো খাদ্যসংকট হবে না বলে জানিয়েছেন বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, খাদ্যের মজুত আগামী জুন পর্যন্ত যে প্রক্ষেপণ দেখানো যাবে, তাতে সব রকম কাজ করেও মজুতে কোনো ঘাটতি হবে না। ১৬ লাখ টনেরও বেশি খাদ্য মজুত রয়ে গেছে। সুতরাং আমরা একটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছি। আর ওএমএসসহ বিভিন্ন যে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে, সেগুলো চলবে। অর্থাৎ কম দামে খাদ্যসহায়তাগুলো বন্ধ হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিব কমিটির বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের সব সচিবদের বৈঠক হয়েছে, তারই একটি ফলোআপ বৈঠক হয়েছে আজ। আমাদের সব সচিবদের কাছ থেকে ব্যায় সংকোচন, যেমন এন্টারটেইনমেন্ট কেমন কমল, বিদ্যুতে কেমন কমল, তারপর প্রেট্রোলে কতটা কমছে, তার একটি পর্যালোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ‘জুন থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুতে প্রায় ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তো প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি কমে এসেছে। আর জ্বালানি খাতেও ৪০ শতাংশ ব্যয় কমেছে। বৈঠকে তা তুলে ধরা হয়েছে। সবাই তা চর্চা করছেন। এটিই আমাদের কাছে সবচেয়ে আদর্শ বলে মনে হয়েছে।’তিনি জানান, এরপর বিশ্বজুড়ে যে এই আর্থিক মন্দা চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের প্রকল্প যে এ, বি ক্যাটাগরি করে দিয়েছে, সেই ক্যাটাগরিকে কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
সচিব বলেন, বৈদেশিক ঋণকে সঠিকভাবে কাজে লাগতে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের জন্য ভালো হবে। যখন আমরা বৈদেশিক ঋণ নিই, তখন একটি বার্ষিক প্রজেকশন (প্রক্ষেপণ) দেখাতে হয়। যেমন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের ৪০০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। এখন আমরা যখন ৪০০ মিলিয়নের রিকুইজেশন দিয়ে দিই, তা খরচ করতে না-পারলেও আমাদের ব্যবস্থাপনা খরচ কম আসে না। আমরা যদি ২০০ মিলিয়ন ডলারও খরচ করি, তখন ব্যবস্থাপনা খরচ দিতে হয় ৪০০ মিলিয়নেরই। যে কারণে এদিকটিতে বেশি নজর দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার
তিনি আরও বলেন, ‘কাজেই এখনো অর্থবছরের ছয় মাস হয়নি, কাজেই আগামী ছয় মাসের মধ্যে যেন এটা বাস্তবায়ন করতে পারি। এতে দুটো কাজ হবে। প্রথমত, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের একটা সমাধান হবে। খরচও বেশি হবে না।’
সচিব বলেন, আরেকটি জিনিস নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটা হলো, খাদ্যের মজুত আগামী জুন পর্যন্ত যে প্রক্ষেপণ দেখানো যাবে, তাতে সব রকম কাজ করেও মজুতে কোনো ঘাটতি হবে না। ১৬ লাখ টনেরও বেশি খাদ্য মজুত রয়ে গেছে। সুতরাং, আমরা একটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছি। আর ওএমএসসহ বিভিন্ন যে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে, সেগুলো চলবে। অর্থাৎ কম দামে খাদ্যসহায়তাগুলো বন্ধ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কোনোই অসুবিধা হবে না। আগামী রোজা পর্যন্ত আমাদের কোনো খাদ্য সংকট হবে না। বিশেষ করে কৃষি সচিব এ নিয়ে গত ছয় মাস ধরে সমন্বয় করছেন। তাতে এই বোরো মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আগামী মে মাস পর্যন্ত খাদ্য উদ্বৃদ্ধ থাকবে। যে খাদ্য আছে, সেটা ছাড়াও এবারে আমনের ফলন ভালো হয়েছে। খরা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সুবিধা হচ্ছে যে নিম্নাঞ্চলেও আমন চাষ করা গেছে।
সচিব বলেন, ‘সূর্যের আলো বেশি থাকাতে আলোকসংশ্লেষণ ভালো থাকায় ফসল ভালো হয়েছে। ধানে খুব একটা চিটা দেখিনি। ব্যাংকিং খাতেও নজর দেয়া হচ্ছে।’
সর্বোচ্চ সাশ্রয় কোন মন্ত্রণালয় করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বেশি সাশ্রয় করেছে। যা ৬০ শতাংশ। এরপর বিনোদন।
গমের সংকট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গমের উৎপাদন আমাদের দেশের পরিবেশগত না। এটা হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১২টি দেশের। এসব দেশে যে গম উৎপাদন হয়, তা রিপ্লেস করা কঠিন। আমরা প্রায় ৫৮-৫৯ লাখ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন করেছি। এটার খাদ্যমূল্য আরও বেশি। আর গম আনারও চেষ্টা চলছে। খাদ্যসচিব নিশ্চিত করেছেন, আমরা গম আনছি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের বৈঠকে ২৪ দফা নির্দেশনায় যে কোনো সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সেই সংকটটা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় না। কোনো কারণে সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে গেলে, একমাস, দুইমাস, সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর নতুন মুখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন
জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্টে হবে একই নম্বর: মন্ত্রীপরিষদ সচিব