বোয়িং ও এয়ারবাসের সঙ্গে দীর্ঘ দর কষাকষি ও আলোচনা শেষে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন প্রতিষ্ঠানের বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মো. শফিউল আজিম।
বুধবার (২৯ মে) এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরামের (এটিজেএফবি) সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মত বিনিময় সভায় এটিজেএফবির সভাপতি তানজিম আনোয়ারের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা ছিলেন।
এয়ারক্রাফট তৈরির প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে যাত্রীবাহী এয়ারক্রাফট কেনার ইঙ্গিত দিয়ে বিমানের বিদায়ী এমডি বলেন, এয়ারবাস ফ্লাইট কেনার জন্য দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রথমটাতে ২টা কার্গো ফ্লাইট বিক্রির কথা বলা হয়। কার্গো বিমানের প্রয়োজন নেই, তাই যাত্রীবাহী বিমান বহর বাড়ানোর কথা জানালে এয়ারবাস ৪টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট বিক্রির দ্বিতীয় প্রস্তাব পাঠায়। এই প্রস্তাব আগের প্রস্তাবের চেয়ে ভালো ছিল। সেই প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি থেকে বিমানের বোর্ডে যায়। বোর্ড এ বিষয়ে আগানোর নির্দেশনা দিয়ে সমঝোতা কমিটিতে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-গলফ হাউজ সমঝোতা স্মারক সই
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন এয়ারবাসের অফারগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের বহরের সব বড় এয়ারক্রাফট বোয়িংয়ের (২১টির মধ্যে ১৬টি বোয়িং)। কিছু ডাইভার্সিটি, নতুন এয়ারক্রাফট থাকলে যাত্রীরাও পছন্দ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সময় যেকোনো কোম্পানির এয়ারক্রাফট খারাপ পারফর্ম করতে পারে, তখন যেন কোনো ঝুঁকি না থাকে তাই ভিন্নতা আনার কথা ভাবছি।’
বোয়িংয়ের প্লেন বিক্রির প্রস্তাব প্রসঙ্গে শফিউল আজিম বলেন, ‘বোয়িংও আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেটাও ইভ্যালুয়েট করব। বোয়িংয়ের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের ভালো সম্পর্ক। শুধু প্লেন কেনাবেচা সম্পর্ক না, তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট ভালো, ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ভালো। সবমিলিয়ে আমরা একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
তবে যেই এয়ারক্রাফটই কেনা হোক না কেন দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাবে ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশ বিমান সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে জানান তিনি।
বিমান লাভ করছে, না কি ক্ষতিতে আছে জানতে চাইলে বিদায়ী এমডি বলেন, ‘বিমান গত ১০ বছরের ৮ বছরই লাভে ছিল। যেই দুই বছর লোকসান হয়েছে, তার মধ্যে এক বছর করোনা ভাইরাসের আধিক্য ছিল, আরেকবার আমাদের মোটা অংকের পেমেন্ট পরিশোধ করতে হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ডলারের সমস্যা ছিল, বিশ্বে দুটি যুদ্ধ চলমান, এর মধ্যেও আমরা লাভ করেছি। বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট করা হয়েছে আমাদের লাভের বিষয়ে। আমরা বিমানে নিয়মিত নিয়োগ দিচ্ছি, বেতন বোনাস দিচ্ছি, বোনাস দিচ্ছি, প্রোফিট বোনাস দিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: সচিব পদে পদোন্নতিতে বিমানের সিইও শফিউল আজিমকে সংবর্ধনা
এমডি হিসেবে নিজের কার্যক্রম তুলে ধরে শফিউল আজিম বলেন, ‘বিমানে চাকরি করা অবস্থায় আমি কোনো কর্মীকে মূল্যায়ন করতে কার্পণ্য করিনি, শাস্তি দিতেও কার্পণ্য করিনি। কোনো পর্যায় থেকে চাপ ছাড়াই বিমানবন্দরে কাজ করতে পেরেছি।’
বিমানকে পৃথিবীর বড় বড় এয়ারলাইন্সের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিমানে এমডির দায়িত্বের সময় বাড়ানো প্রয়োজন কি না এ প্রসঙ্গে বিদায়ী এমডি বলেন, ‘বিমানের হিউম্যান রিসোর্স মানসম্মত, টেকনিক্যাল রিসোর্স মানসম্মত। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সিস্টেম ও স্ট্রাকচার দাঁড় করানো গেলে এমনিতেই কাজ হবে। সিস্টেম ঠিক থাকলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর প্রতিষ্ঠান নির্ভর করবে না।’
বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিভাগে যারা কর্মরত তাদের বয়স বিবেচনার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে বলেন বিদায়ী এমডি। তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যাল ফিল্ডে বয়স যত বাড়ে অভিজ্ঞতা তত বাড়ে। অভিজ্ঞদের বয়স বিবেচনা না করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিমানে রেখে দিতে হবে। বিমানকে সরকারি অফিসের মতো করে চালানোর চিন্তা করলে বিমান কাজ করবে না। এটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সবকিছু বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করতে হবে।’
এর আগে রবিবার (২৬ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞাকে। পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, শফিউল আজিম পদোন্নতি পেয়ে ইসির নতুন সচিব হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিমানের নতুন এমডি ও সিইও জাহিদুল ইসলাম