প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে ইউএসএআইডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৯৬টি বিদ্যমান ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রকে পুননির্মাণ করছে, যাতে এগুলো একই সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয় ও স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সেই সঙ্গে ২৫টি নতুন বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রনজিৎ কুমার সেন এবং ইউএসএআইডি’র বাংলাদেশ মিশন পরিচালক ডেরিক ব্রাউন বাংলাদেশ সরকারের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারের রামুতে একটি পুনর্নির্মাণকৃত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র (এমপিসিএস) উদ্বোধন করেন।
উত্তর মিঠাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত এ আশ্রয়কেন্দ্রটিতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১,৫০০ জনের বেশি লোক আশ্রয় নিতে পারবে। সেই সঙ্গে ৪০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষের সংকুলান হবে এখানে।
এটি ছাড়াও ইউএসএআইডি আরও ১১ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র মেরামত করেছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোর একটি কক্সবাজারে ইউএসএআইডির প্রোমোটিং রেজিলিয়েন্স টু রিস্কস অফ নেচারাল হ্যাজার্ডস (ইউএসএআইডি/প্রেরণা) কর্মসূচির অধীনে পরিকল্পিত মোট ৯৬টি বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে যে ৫০টি ইতিমধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, উত্তর মিঠাছড়ির বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রটি সেটির অন্যতম।
কেয়ার, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং স্থানীয় অংশীদার গ্রাউস’র সঙ্গে এক যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজার ও বান্দরবানে আরও ২৫টি নতুন বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র (এমপিডিএস) নির্মাণে সহযোগিতা দিচ্ছে ইউএসএআইডি।
‘শিশুর জন্য নিরাপদ স্কুল, সকলের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র’ মূলমন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে ইউএসএআইডি‘র ‘প্রেরণা’ কর্মকাণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোকে এমন দুর্যোগ-সহনীয় আশ্রয়কেন্দ্র দিচ্ছে যেগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয় এবং দুর্যোগবিহীন সময়ে স্কুল হিসেবে দ্বৈত-উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
কক্সবাজারের রামু, মহেশখালী, চকরিয়া এবং সদরে এখন পর্যন্ত যে ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোয় পৃথক ওয়াশরুম ব্যবস্থা, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, র্যাম্প সুবিধা, জরুরি নির্গমন, বিকল্প বিদ্যুৎ উৎস, উন্নত প্রবেশ সড়ক, শিক্ষা পরিসর এবং শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করেছে ইউএসএআইডি।
প্রশিক্ষিত কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবকেরা যাতে দ্রুততম সময়ে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারে সে জন্যে ইউএসএআইডি সকল আশ্রয়কেন্দ্রকে জরুরি সাড়া প্রদান উপকরণে সজ্জিত করেছে।
ইউএসএআইডি’র মিশন পরিচালক ব্রাউন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের এটিসহ ১২টি পুনর্নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্র হস্তান্তর করতে পেরে আমরা খুশি। এ পুনর্নিমিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চমৎকার, যেখানে আধুনিক সৌর বিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আছে, সেই সঙ্গে ছেলে এবং মেয়েদের জন্যে আছে পৃথক ওয়াশরুম। তবে যেটা আমাকে আরও বেশি গর্বিত করে, তা হলো এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় লোকজনকে আরও সক্ষম করে তুলবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এ স্থাপনাগুলো স্কুল হিসেবে কাজ করবে, শিশুবান্ধব শিক্ষা পরিসর দেবে, যাতে করে আশপাশের জনগোষ্ঠীর শিশুরা জীবন-বদলে দেয়া শিক্ষায় অভিগম্যতা লাভ করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চ্চাকে উৎসাহিত করা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ২০১৯ সালে ইউএসএআইডি একাই ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে। এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে স্থানীয় সাড়া প্রদান প্রচেষ্টাগুলোকে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দেশটির সরকার ৬৮.৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।