একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী নেই। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার অন্টারিওর লেকরিচ হেলথ ওশাওয়ায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার জামাতা নাদিম ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই কবি। তিনি ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ক্যানসারে ভুগছিলেন। এরপরে তাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
তার মৃত্যুতে দেশের সাহিত্যিক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানানো হয়নি।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার জমিদার নামে পরিচিত এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে তিনি কলকাতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ট্রিবিউটর ও উপস্থাপক হন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত জয়বাংলা (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) এবং দৈনিক জনপদ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
সাংবাদিক হিসেবে তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং অবসর গ্রহণের পর ডয়চে ভেলের বাংলা সার্ভিসের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
কবি আসাদ চৌধুরী বাংলা একাডেমির পরিচালক ও ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশের রেডিও ও টিভি শিল্পী সমিতির সাবেক সহসভাপতিও ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সহসভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহযোগী সদস্য এবং ঢাকায় বাংলা-উর্দু সাহিত্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
'তবক দেওয়া পান', 'বিত্ত নাই বেসাতি নাই', 'এক্কা দোক্কা', 'জলের মাধ্যে লেখাজোখা', 'যে পারে পারুক', 'মধ্য মাঠ থেকে', 'মেঘের জুলুম পাখির জুলুম', 'নদীও বিবস্ত্র হয়', 'প্রেমের কবিতা', 'বাতাশ যেমন পরীক্ষিত', 'বৃষ্টি সংসারে আমি কেও নই' তার প্রকাশিত ও প্রশংসিত কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ।
টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আসাদ চৌধুরী অনেক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, বিশেষ করে 'রাত বিরাত' যা দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
দেশের সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার ২০১৩ সালে কবি আসাদ চৌধুরীকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদমর্যাদা একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।