২৭তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের পটভূমি এবং পরিবর্তন আনয়নে তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
এসময় তিনি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন তরুণদের অধিকতর সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কমনওয়েলথ নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তৌহিদ হোসেন।
সামোয়ার রাজধানী আপিয়ায় ২১-২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনুসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়াও ২৫ অক্টোবর তিনি নির্বাহী আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়াও, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৬ অক্টোবর সরকার প্রধানদের রিট্রিটে বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেকার অধিকতর যোগাযোগ, বাণিজ্য এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর নেতারা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউথ ফোরাম, বিজনেস ফোরাম, ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এবার ৩৭টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
এর মধ্যে একটি বাংলাদেশ ও সামোয়া যৌথভাবে আয়োজন করে। ‘ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি অ্যান্ড রেজিলেন্ট ইউথ: টুওয়ার্ডস এ নেট জিরো ফিউচার’ শীর্ষক এই সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সামোয়ার মহিলা ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন।
এই সাইড ইভেন্টে নামিবিয়া, জ্যামাইকা ও মালদ্বীপের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং মাল্টার পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও ৬০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি যোগ দেন।
এছাড়াও তরুণ প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সামোয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও, তিনি পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
সব বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান মামলা কার্যক্রমের বিষয় জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যয়ের কথাও তুলে ধরেন।
সামোয়ায় কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফেরার পথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মতবিনিময় সভার পূর্বে নিউজিল্যান্ডের সিনেটর ফিল টোয়াইফোর্ড পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এছাড়াও সরকার প্রধানদের সম্মানে ব্রিটেনের রাজার নৈশভোজ ছাড়াও একাধিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
‘ওয়ান রেজিলেন্ট কমন ফিউচার: ট্রান্সফর্মিং আওয়ার কমন ওয়েলথ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আধুনিক কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে আয়োজিত ২৭তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন কমনওয়েলথের সভাপতি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস।
এ সম্মেলন বৈশ্বিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।