বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে এই ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
নির্দেশনা অনুযায়ী,করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ ও এ সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে লুকোচুরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সাধারণভাবে সকলের পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। যারা হোমকোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে।
নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নদীবেষ্টিত জেলা সমূহে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। সারা দেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়,জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাগণ যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন, এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ত্রাণ কাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবেনা।
দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। সোশ্যাল সেফটিনেট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে, যাতে বাজার চালু থাকে। সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ।
জনসমাগম এড়াতে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সমাজের সকল স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের সকলকে নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরও বলা হয়, সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলাপ্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবানারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণসহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সকল সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নির্দেশদেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্দেশনা অনুযায়ী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না। খাদ্য শস্যসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কৃষকগণ নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। সকল শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখবেন। শিল্প মালিকগণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে।