রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে ওয়াশিংটনের বক্তব্যের বিষয়ে স্পষ্টতই অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে কিছু বিদেশি সংস্থার রাজনৈতিক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা উচিত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে ও রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় মনে করি বোধহয় কোনো কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান এদেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া উচিত। তারা বোধহয় রেজিস্টেশনের জন্য অ্যাপ্লাই করা উচিত। তারা একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান করবেন এবং আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে তারা রাজনৈতিক অবস্থান নেবেন। তারা একটা দল করুন, আর দেখা যাক জনগণের কাছে তারা কত ভোট পান।’
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক সংলাপের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্যের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত হাস আশা প্রকাশ করেন, উত্তেজনা কমাতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অগ্রসর হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে সব পক্ষ একটি শর্তহীন ‘সংলাপ’ করবেন।
ইসি কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের আরও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘এ কথা ভুলে যান। এটা কোনো ব্যাপার না...আমাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: পূর্বশর্ত ছাড়াই সব পক্ষ সংলাপে অংশ নেবে: সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত হাসের প্রত্যাশা
বিএনপির ‘বর্বরতা ও ধ্বংসযজ্ঞ’ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, এটা তাদের দলের জন্য লজ্জাজনক এবং পুলিশ, হাসপাতাল ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘এটা লজ্জার বিষয়, দলের সদস্যদের করা এসব অপকর্মের জন্য তাদের (বিএনপি) প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া উচিত। আমি বিএনপির কাছ থেকে আশা করব, তারা যেন তাদের বহিষ্কার করে।
মোমেন বলেন, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার কারণে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির হরতাল ও অবরোধে সারাদেশে মোট ১৬০০ কোটি টাকা (বা ১৯২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা প্রতিদিন জিডিপির শূন্য দশমিক ২ শতাংশ খরচ হয়েছে।
মোমেন সোমবার কূটনীতিকদের বলেন, ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের পরিবেশ তৈরি করেছিল। বিশেষ করে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় ব্যাপক সহিংসতা ও ভোট কারচুপির মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা লুটপাট, ধর্ষণ ও খুন করেছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে।
২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তার মিত্ররা কয়েক হাজার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং পেট্রোলবোমা ব্যবহার করে অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ির ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের জীবন্ত পুড়িয়েও মেরেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও ভয়াবহ ক্ষত ও ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন।
তিনি বলেন, পেট্রোল বোমা ও হ্যান্ড গ্রেনেড হামলায় ২০ জন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'বিএনপি বুঝুক বা না বুঝুক, প্রত্যেক মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ': বিদেশি কূটনীতিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিক-জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে আজ ব্রিফ করবে সরকার