২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গুমের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে 'গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশন'কে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আপনাদের যা প্রয়োজন আমরা তা সরবরাহ করব এবং সব ধরনের সহায়তা দেব ‘
কমিশনের সদস্যরা জানান, এ বিষয়ে আরও কাজ করার আগে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরকারকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দেবেন তারা।
আরও পড়ুন: বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানে তরুণদের আত্মবিশ্বাসের ওপর জোর দেন ড. ইউনূস
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রয়োজনে হলেও কমিশনের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় আইনি বিধান তৈরিসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করা হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী সভায় বলেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা প্রায় ১ হাজার ৬০০ অভিযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছেন এবং ১৪০ জন অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
কমিশনের একজন সদস্য বলেন, 'অভিযোগের সংখ্যা দেখে আমরা অভিভূত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাল্টা শাস্তির ভয়ে এখনো অনেকে কমিশনে আসছেন না। এ থেকে বোঝা যায়, এখনও পর্যন্ত যা রিপোর্ট করা হয়েছে, তার থেকে ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি।’
কমিশনের এই সদস্য বলেন, জোরপূর্বক নিখোঁজের সংখ্যা কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। কারা এই অপরাধ করেছে এবং কারা তাদের নির্দেশ দিয়েছে তা চিহ্নিত করতে তারা কাজ করছেন বলে জানা তিনি।
কমিশনের এই আরও সদস্য বলেন, ভিকটিমদের অনেকে কারাগারে আছেন, কারও কারও মৃত্যুদণ্ডও হচ্ছে, কারণ তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
নিখোঁজের শিকার কয়েকজনকে প্রতিবেশী ভারতের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভিকটিমদের যেসব গোপন স্থানে গুম করে রাখা হয়, সেখানে আলামত রক্ষায় কমিশনের সদস্যরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
কমিশনের এক সদস্য জানান, ‘অনেক ভুক্তভোগী আমাদের বলেছেন যে তারা বছরের পর বছর ধরে সূর্যের আলো দেখেননি। সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হলেই তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এটি একটি নতুন দিন।’
ওই সদস্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশন থেকে আসামিদের তালিকা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তারা এ ব্যবস্থা নেবেন।
কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ এবং গুমের ঘটনা তদারকি করেছেন এমন ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহায়তাকারী মনফুজ আলম।
বৈঠকে কমিটির উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য প্রেস সচিব, মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের সঙ্গে আছে: অধ্যাপক ইউনূসকে পাম্পালোনি