কোরবানির পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পচন রোধে নাটোর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ প্রান্তিক আড়ৎ পর্যায়ে স্টোরেজ সুবিধা চান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে অব্যবহৃত স্টোরেজ আধুনিকায়নের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে চামড়া সংরক্ষণ সংকট দূর করা সম্ভব। এতে, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কোরবানির পশুর চামড়া নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
শনিবার (৬ জুলাই) বিকালে এফবিসিসিআইর মতিঝিল কার্যালয়ে আয়োজিত হাইড অ্যান্ড স্কিন, লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড আর্টিফিসিয়াল লেদার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় এসব কথা জানান তারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক শাহীন আহমেদ। কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইর পরিচালক এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: শিল্পায়নে বিনিয়োগের আহ্বান এফবিসিসিআই সভাপতির
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকারকে প্রতি জেলায় স্টোরেজ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনে এই উদ্যোগে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা যেতে পারে। পাশাপাশি, চামড়া শিল্পের শতভাগ কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু রপ্তানি বাজারের জন্য নয়, নিজেদের জন্য পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে।
চামড়া শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেন আমিন হেলালী।
কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে চামড়া শিল্পপল্লী। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও সেখানে সিইটিপি বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। কঠিন বর্জ্য (সলিড ওয়েস্ট) ব্যবস্থাপনায়ও দুর্বলতা রয়েছে। যা আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ছাড়পত্র (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট) পাওয়ার পেছনে বড় বাধা।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে এটিই অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে জানান স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মো. সাইফুল ইসলাম।
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়া শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ওপর জোর দেন কমিটির চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। রপ্তানি বাড়াতে চীনসহ পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সভার মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়নের ব্যবস্থা, ডিজাইনারসহ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী তৈরি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, দেশে প্রচলিত ছুরি ও যন্ত্রপাতি উন্নয়ন এবং কসাইদের প্রশিক্ষণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য কমন ডিসপ্লে সেন্টার, পাদুকা শিল্পপল্লী, আধুনিক স্লটারিং হাউজ, লেদার টেকনোলজি বিষয়ে শর্ট ডিপ্লোমা কোর্স এবং উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, হাইড অ্যান্ড স্কিন ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওয়া পরিশোধ, সাভার চামড়া শিল্প নগরীর পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ, চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা আইনবিষয়ক জাতীয় কমিটিতে খাতের সব অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা।
সভায় আরও ছিলেন- এফবিসিসিআইর পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন-অর-রশিদ, আজিজুল হক, এফবিসিসিআইর মহাসচিব মো. আলমগীর, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা।
আরও পড়ুন: নিত্যপণ্যের দাম নাগালে রাখতে সাপ্লাই-চেইন স্থিতিশীল রাখুন: এফবিসিসিআই
নিম্নমানের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধে এফবিসিসিআইয়ের আহ্বান