সচিবালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি এবং কমিশন প্রধানের বক্তব্য ঘিরে হট্টগোল হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়ের একপর্যায়ে কমিশন প্রধান ছাত্র প্রতিনিধি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসানকে বক্তব্য দিতে বলেন।
এ সময়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই কমিশনের সদস্য হিসেবে আমি এক-দেড় মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের কথা শুনেছি, জনগণের কথা শুনেছি। এতে আমার একটি উপলব্ধি এসেছে যে, জীবনে আর যাই করি, বিসিএস দেব না। একজন উপসচিব, যুগ্ম-সচিব ও ডিসি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে আচরণটা করে... তাদের যে আমরা পাবলিক সার্ভেন্ট বলি, তারা আসলে পাবলিক সার্ভেন্ট না, তারা হচ্ছেন তাদের সিনিয়রদের সার্ভেন্ট। তারা এতটা হীনম্মন্যতায় ভোগেন যে তারা কাজ করবে কী, আমি জানি না। এই হীনম্মন্যতা দেখে আমার বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে খুব আশাহত হয়েছি যে, আপনারা (সাংবাদিক) অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক জায়গা থেকে কথা বলেছেন, অনেক ভালো কথা বলেছেন। আপনারা যখন কথা বলছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন তখন জনপ্রশাসন সম্পর্কে আপনাদের কিছু বিষয় একটু চিন্তা-ভাবনা করে পড়াশোনা করে আসার দরকার ছিল। সেই জায়গায় একটু ঘাটতি দেখা গেছে।’
আরও পড়ুন: লাল-সবুজে সাজলো পোল্যান্ডের স্লাসকো দাবড়োভস্কিয়েগো সেতু
তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘কি ঘাটতে মনে হয়েছে আপনার?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করার দরকার ছিল, তা হলো- এই ৫০ বছরে স্যাররা বললেন যে ২৩টি সংস্কার কমিশন হয়েছে, সেই কমিশনগুলো কেন ইফিশিয়েন্টলি কাজ করতে পারেনি?’
তখন সাংবাদিকরা বলেন যে, ‘এগুলোর বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। তখন অনেক সাংবাদিক দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে থাকেন। তখন মেহেদী হাসান বলতে থাকেন, প্লিজ আমার কথা শুনুন; আমার বাক্য আমাকে শেষ করতে দিন।’
কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে তিনি আর কোনো কথা বলতে পারেননি। তাকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে সাংবাদিকরা দাবি জানাতে থাকেন।
এরপর কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এমন একজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করছেন, যিনি এখনও ছাত্র। তার সার্বিক পরিস্থিতি জানা সম্ভব নয়। সে জেল খেটেছে, জেল থেকে বের হয়ে এসেছে এবং এই আন্দোলন করেছে। আন্দোলন তো আপনারা-আমরা করিনি।’
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা একযোগে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা বলেন, ‘এ কথা আপনি বলতে পারেন না। আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের সহকর্মীরা আহত-নিহত হয়েছেন। আমরা কেউ কেউ বাসায় ঘুমাতে পারিনি। অনেকে জেল খেটেছেন।’
বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের হল্লা ছাপিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও মুয়ীদ চৌধুরী অনেকক্ষণ তা বলতে পারেননি।
পরে কমিশন প্রধান বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন কভার করতে গিয়েছিলেন এবং সেজন্য আপনারা পুলিশের গুলির সামনে ছিলেন; আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন।’
এরপর আবারও সাংবাদিকরা উত্তেজিত হয়ে যান। তারা বলেন, ‘আপনার এই কথারও প্রতিবাদ জানাই। কভারের বাইরেও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম।’
এ সময় একজন সাংবাদিক বলেন, ‘সাংবাদিকরা যদি কিছু নাই করে থাকেন, তবে সারা বিশ্ব কীভাবে এই আন্দোলনের কথা জানল? অভ্যুত্থানের পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এগিয়ে, কিন্তু এ আন্দোলনে তাদের কী ভূমিকা ছিল? শেষের দিকে আপনারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা আমরা নিতে পারছি না।’
এরপর আবার মেহেদী হাসান কথা বলতে গেলে সাংবাদিকরা বলেন, ‘আপনি ক্ষমা চান, তারপর কথা বলবেন। তখন মেহেদী হাসান বলেন, আমার শব্দ চয়নে আপনারা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি দুঃখিত।’
এরপর তিনি বলেন, ‘৮০ বছরে আমাদের চারটি বড় বড় বিপ্লব হয়েছে। এই চারটি বিপ্লব পরিবর্তনের জন্য হয়েছে, কিন্তু পরিবর্তনটা হয়নি। ২০২৪-এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে পরিবর্তনটা হয়েছে, সংস্কার কমিশনগুলো হয়েছে, এই কমিশনগুলো কেন এক্সক্লুসিভ এবং আরও বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে, এই কমিশনটা কেন আগের ২৩টি কমিশনের মত নয়- আমার প্রশ্নটি ছিল ওই জায়গায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সমসাময়িক মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া- এ দেশগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বাংলাদেশ কেন ওই জায়গাটা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না- ওই জায়গাটায় প্রশ্ন করা হয়নি, আমি সেটা বলতে চেয়েছিলাম।’
আরও পড়ুন: ‘শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে দেখাই প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্ন’