রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলেও গণ্য করা হয় তাকে।
তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্র নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। আজ ১৩ নভেম্বর বহুগুণে গুণান্বিত এই লেখকের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী।
হুমায়ূন আহমেদ তার বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনী এবং নন-ফিকশন লেখার জন্যই বেশি জনপ্রিয়। প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে (১৯৭২) দিয়ে তার সাফল্য অর্জন শুরু হয়। এরপর একে একে ২০০ টিরও বেশি কথাসাহিত্য এবং নন-ফিকশন লিখেছেন তিনি। তার লেখা সবগুলো উপন্যাসই বাংলাদেশে বেস্টসেলার।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, বাচসাস পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি)তার প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’(১৯৮৩) দিয়ে আত্মপ্রকাশ। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার পরিচালিত সবগুলো ধারাবাহিক নাটকই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে, ‘এই সব দিন রাত্রি’, 'বহুব্রীহি', 'অয়োময়', 'নক্ষত্রের রাত', 'আজ রবিবার' এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য 'কোথাও কেউ নেই'।
আরও পড়ুন: চলে গেলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন হুমায়ুন আহমেদ। মোট আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি, প্রতিটিই তার নিজের লেখা উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া' (২০০৪)ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা'(২০১২) চলচ্চিত্র দু’টি শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসাবে আকাদেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
তিনি ‘শঙ্খনীল কারাগার'(চিত্রনাট্যকার হিসেবে),'আগুনের পরশমনি’,'দারুচিনি দ্বীপ' এবং 'ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য বিভিন্ন বিভাগে সাতবার বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
প্রখ্যাত এই লেখকের অনুরাগী দল ‘হিমু পরিবহন’ বহু বছর ধরে তার জন্মবার্ষিকী পালন করে আসছে। প্রতিবছর এইদিনে তারা একটি বিশেষ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এর সদস্যরা এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খালি পায়ে হেঁটে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং সন্ধ্যায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে এই দলের সদস্যরা।
দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং রেডিও স্টেশনগুলিও হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের জীবনাবসান
এদিকে, শুক্রবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ প্রদান করা হয়।
প্রখ্যাত বাংলাদেশি লেখিকা সেলিনা হোসেন বাংলা সাহিত্যে তার অবদানের জন্য পুরস্কার জিতেছেন। আর লেখিকা ফাতেমা আবেদিন নাজলা তরুণ সাহিত্যিক বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন, যা ৪০ বছরের কম বয়সী লেখকদের দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অন্যদিন পত্রিকার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মেহের আফরোজ শাওন। অনুষ্ঠানে দুটি গান গেয়ে প্রয়াত স্বামীকে স্মরণ করেন শাওন।
২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ১২ নভেম্বর নন্দিত এই কথা সাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকীর আগের দিন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।