জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য 'প্রচেষ্টা জোরদার করা' এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া।
তিনি বলেন, অন্যান্য বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শুক্রবার (৩ মে) এডিবির ৫৭তম বার্ষিক সভার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এডিবি প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এমন একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে অগ্রগতি অর্থের জন্য থমকে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রচেষ্টা একটি স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অঞ্চল তৈরির পথ প্রশস্ত করবে। এবং নিশ্চিত করবে যে এশীয় উন্নয়ন তহবিল পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম।’
এশীয় উন্নয়ন তহবিল ১৪ (এডিএফ১৪) -এর জন্য প্রতিশ্রুতির অধিবেশন শেষ করেছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের এডিএফ গঠনে সম্মতি
এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, 'দাতাদের উদার প্রতিশ্রুতির জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তারা ৫ বিলিয়ন ডলার পুনরায় পূরণে সহায়তা করেছে।’
এই অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি এডিএফের অনুদান কার্যক্রমের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম প্রতিশ্রুতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটি এডিবির সঙ্গে এডিএফ দাতাদের অব্যাহত অংশীদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ। এটি এডিএফের ৫০তম বার্ষিকীকে প্রকৃতপক্ষে সুবর্ণ বার্ষিকীতে পরিণত করেছে।’
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এডিএফ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দরিদ্রতম ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচন এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করে চলেছে।
এডিবির সাধারণ মূলধন সম্পদ থেকে নিট আয় স্থানান্তরের পাশাপাশি এডিবি সদস্যদের অনুদানকে একত্রিত করে এডিএফ গড়ে তোলা হয়েছে।
এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সাম্প্রতিক উন্নয়ন বিপর্যয়গুলো ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আমাদের দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে দুর্বল সদস্য দেশগুলো জরুরি পদক্ষেপ নিতে চায় বলে এডিএফ অনুদান এখন আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, এডিএফ প্রকল্পগুলোতে আমার সফর এই সহায়তার রূপান্তরমূলক প্রভাবকে আরও জোরদার করেছে।
আরও পড়ুন: কার্যকরী-গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজে আগ্রহী এডিবি: ভাইস প্রেসিডেন্ট ভার্গব দাশগুপ্ত
এডিএফ১৪ এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
দুর্বলদের জন্য অব্যাহত সহায়তা
এডিএফ ১৪ বিশষত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়।
এডিএফের রূপান্তরমূলক এজেন্ডা
এডিএফ ১৪ আঞ্চলিক জনসাধারণের পণ্যসহ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস, লিঙ্গ সমতা প্রচার ও আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংহতকরণকে এগিয়ে নেওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে।
প্রতিক্রিয়াশীল সহায়তা
এডিএফ ১৪ দুর্যোগ, স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা এবং বড় আন্তঃসীমান্ত বাস্তুচ্যুতির শিকারদের সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে।
সংকটকালীন সহায়তা
এডিএফ আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের জনগণকে তাদের মৌলিক চাহিদার গুরুত্বের আলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়।
এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, 'একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনের লক্ষ্যে দাতাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক কয়েক মাসের আলোচনার মাধ্যমে এডিএফের আগামী ৪ বছরের একটি শক্তিশালী রূপকল্প তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, 'আমাদের দাতাদের উদার সমর্থন কেবল এই উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নেয় না, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মনোভাবকে উৎসাহিত করে- যা বিশ্বব্যাপী সংকটের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এই সহযোগিতা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের সম্মিলিত সক্ষমতা বাড়ায়, যা কোনো একটি দেশ এককভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে না।
চলতি বছরের বার্ষিক সভার প্রতিপাদ্য হলো ‘ব্রিজ টু দ্য ফিউচার’ যা জর্জিয়ার অবস্থানকে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য সরাসরি, আর্থিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগকে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: আগামী ২ বছর উন্নয়নশীল এশীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশ থাকার আশা এডিবি প্রেসিডেন্টের