রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন এই আহ্বান জানান।
ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস প্রমুখ একই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
ওয়াসার এ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বর্তমান দুই এমডিকে অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূতভাবে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেছে ওয়াসার বোর্ড। যা ওয়াসার কার্যক্রম ও নীতিমালাকে সহায়তা করার জন্য বোর্ড সদস্যদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের বরখেলাপ। কারণ বোর্ড সদস্যদের ওয়াসার স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সরকার তাদেরকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু তারা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। এক ব্যক্তির পুনরায় নিয়োগের জন্য বোর্ড সভা আহ্বান করা কতটা যুক্তিসঙ্গত ও নীতি নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?’
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় এক ব্যক্তির অনৈতিক ও অবৈধ বহাল অব্যাহত রেখে দীর্ঘকালের লালিত এককেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ অপরিবর্তিত রাখার সুযোগ তৈরি করেছেন। ওয়াসার ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও গ্রাহকদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানে অনিয়মের গুরুতর সব অভিযোগ থাকার পরও এই পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও পুনরায় নিয়োগ দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘শূন্য সহনশীলতাকে’ বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সামিল বলে মন্তব্য করছের ক্যাব নেতারা।
বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকারি যে কোনো চাকরিতে নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী হবার কথা। আর একজন কতবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন? তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকার পরও দুই ওয়াসায় বোর্ড সভায় শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তাকে আবারও তিন বছর মেয়াদে পুনরায় নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল কিনা, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী, কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে বারবার পুনরায় নিয়োগ অপরিহার্য তার প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কি না, তার উল্লেখ দরকার ছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রায় এক যুগ দায়িত্বকালে জনদুর্ভোগের বিষয়টি কারও অজানা নয়। বিভিন্ন গবেষণা ও গণমাধ্যমের সূত্রে ওয়াসার ছোট-বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদানে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে অনেকগুলি তদন্তাধীন।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়াসার দুই বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ২০০৯ সালে প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত নিয়োগের পর টানা পাঁচ মেয়াদে ১১-১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবারই নিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে আইন ও নীতিমালাকে ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পরামর্শ দেয়া হলেও কখনো বয়সসীমা বাড়িয়ে, আবার কখনো বোর্ডের সাম্প্রতিক সভার সুপারিশ পাশ কাটিয়ে পুরনো সভার তামাদি সুপারিশ ব্যবহার করে, এমনকি বোর্ডের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়।
তাই আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির না ঘটিয়ে বর্তমান দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবার দাবি জানান তারা।
একই সাথে এই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সেবা সংস্থার গ্রাহকদের কল্যাণে বর্তমান এমডিসহ ওয়াসার যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত ও নিরীক্ষার দাবি জানান ক্যাব নেতারা।