তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে আসছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাই আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে তা কাজে লাগানোর জন্য আমি দেশের সব ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানাই।’
হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণুর অষ্টম অবতার প্রভু শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল ভাবনা।
ধর্ম মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখায় ও মানবকল্যাণে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্মের এ শাশ্বত আবেদন ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সবার মাঝে তুলে ধরতে হবে, বলেন তিনি।
মানবিক সমাজ গঠনে পারস্পরিক সদ্ভাব ও শ্রদ্ধাবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাই সব ধর্মে পারিবারিক বন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পারিবারিক কাঠামোর বিবর্তন, ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে মানুষের কর্মব্যস্ততা বাড়ছে। এতে পারিবারিক বন্ধন ক্রমান্বয়ে শিথিল হয়ে আসছে এবং ঘটছে নানা সহিংস ঘটনা। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়।’
আবদুল হামিদের মতে, মানুষ সামাজিক জীব। তাই শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূর করতে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
‘জন্মাষ্টমী উৎসবকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা ও আনন্দোৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর আবেদনকে একটি কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে হবে। তা হলেই গড়ে উঠবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা,’ যোগ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মিলে সমৃদ্ধ ও অহিংস সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং একেই এবারের জন্মাষ্টমীর অঙ্গীকার হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা, হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারা রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনজীবী, বিচারক, রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার, সিনিয়র সাংবাদিক প্রমুখ বঙ্গভবনে এ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদের দরবার হলে দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।