অর্থনীতি ঠিক করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আমরা ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেছেন বাজারে পণ্য সরবরাহের কোনো সংকট হবে না।’
৫৪তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে যদি কেউ কৃত্রিম কোনো সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে আমরা তাকে কঠোর হাতে দমন করব। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিকল্প কৃষি বাজার চালু করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আমরা এখনো পাইনি। তবে আমার বিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে আসবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সরবরাহ বাড়িয়ে, আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়ে, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে এবং বাজার তদারকির মধ্য দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এটা(চাঁদাবাজি বন্ধ) সম্ভব হলে আমরা আশা করি জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আপনাদের কষ্টে সমব্যথী। তবে আমরা জানি সরকারের কাজ কেবল সমবেদনা জানানো নয়।
সরকার জনগণের কষ্ট কমিয়ে আনতে সকল রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস পূর্ববর্তী 'ফ্যাসিবাদী শাসন' থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: পতিত স্বৈরাচার-দোসরদের বিচার সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত: প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে রপ্তানি ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বছরের হিসাবে এই প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসবের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনেরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'এই সূচকগুলো দেখায় যে আমাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু করেছে এবং অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’
অধ্যাপক ইউনূস স্বীকার করে বলেন, মূল্যস্ফীতি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারিনি। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী যে মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে আসবে।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের শেষে বা '২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা