‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ ও একটি ট্রেডবডি বা বাণিজ্য সংগঠনকে ‘ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছে ২১টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি, সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা, বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ছয়টি ক্যাটাগরির খাত ও উপখাত অনুযায়ী এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলরুমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
আরও পড়ুন: পর্যটনখাতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ টোয়াবের ‘টিটা অ্যাওয়ার্ড’
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এসময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিল্পায়ন আর শিল্পায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদনশীলতার প্রসার ঘটিয়ে জনগণের জীবন মানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনপিও বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত, উপখাত এবং শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী কলাকৌশল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালা, পরামর্শ সেবা ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, উৎপাদনশীলতার সুফল শুধু উৎপাদনকারী এককভাবে ভোগ করে না। তার সুফল উৎপাদনকারী থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে ভোগ করতে পারে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শিল্পখাতকে বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তুলতে প্রযুক্তিভিত্তিক, উচ্চ অগ্রাধিকার শিল্প সৃষ্টি, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন প্রক্রিয়া, সুসংহত ব্যক্তিখাত গড়ে তোলাসহ পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন, এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পসহ অন্যান্য উদ্যোক্তাদের আর্থিক সুবিধা ও স্বল্পসুদে ঋণপ্রদান, পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিল্প কারখানার সংস্কার, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও শিল্পপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই শিল্পায়নের প্রসারের মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ বৃদ্ধিতে শিল্প মন্ত্রণালয় সদা সচেষ্ট।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এজন্য নতুন বাজেটে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূল্যেস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এ বছরের শেষে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে মর্মে আমি আশাবাদী।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন সময়মতো জ্বালানি ও সারের জোগান নিশ্চিতকরণ। আমরা এক্ষেত্রে আমদানির পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেছি।
এনপিও’র মহাপরিচালক মুহম্মদ মেসবাহুল আলমের সভাপতিত্বে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।
পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করবেন বায়োফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লকিয়ত উল্লাহ্।
‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছে ছয়টি ক্যাটাগরির খাত ও উপখাতভিত্তিক ২১টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান।
এরই অংশ হিসেবে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে তৈরি পোশাক উপখাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে ইকোটেক্স লিমিটেড, ফকির ফ্যাশন লিমিটেড ও স্কয়ার ফ্যাশন্স লিমিটেড।
টেক্সটাইল উপখাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেড, ফোর এ ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড এবং মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড।
খাদ্য ও পানীয় উপখাতে ইস্পাহানি টি লিমিটেড এবং ওষুধ ও রসায়ন উপখাতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে নুভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
ইস্পাত, প্রকৌশল ও সেবা শিল্প উপখাতে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে বঙ্গ বিল্ডিং মেটেরিয়াল লিমিটেড এবং মাল্টিলাইন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে তৈরি পোশাক উপখাতে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে এফ জি এস ডেনিম ওয়্যার লিমিটেড এবং শান্তা এক্সপ্রেশন্স লিমিটেড লিমিটেড।
ওষুধ উপখাতে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে বায়োফার্মা লিমিটেড এবং গেট ওয়েল লিমিটেড।
এছাড়া ইস্পাত ও প্রকৌশল উপখাতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে শেলটেক হোল্ডিংস লিমিটেড, রংপুর ফাউন্ডি লিমিটেড এবং আদজি ট্রিমস লিমিটেড।
মাইক্রো শিল্প, কুটির শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে যথাক্রমে মাসকো ডেইরি এন্টারপ্রাইজ, রুপকথা ফ্যাশন এবং কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
অন্যদিকে 'ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২' পেয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি এন্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ও ইনস্টিটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড নীতিমালা, ২০২০ অনুযায়ী ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এবং ‘ইনস্টিটিউশনাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: পর্যটন খাতে অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড পেল ইউএস-বাংলা