আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
শাহীনুজ্জামান বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা বাদল ফরাজিকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি তা নিশ্চিত করতে কেন তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হবে না, সেই মর্মে রুল জারি করেছে আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে স্বারষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা বিভাগ), পররাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৮ জুলাই ফরাজিকে মুক্তি দিতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। রিটটি একই বছরের ১১ জুলাই উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়।
গত বছরের ৬ জুলাই বিকেলে জেট এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে বাদলকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। পরে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভারতের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় দিল্লির তিহার জেলে থাকা বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজিকে (২৮) ফিরিয়ে আনা হয়। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, দেশে ফিরিয়ে আনার পর বাদলকে জেলে রেখেই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যা করার তা করা হবে।
বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টিএ ফারুক স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখার। এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশ করেন তিনি।
সেখানে একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে তিনি বিএসএফ কর্মকর্তাদের বোঝাতে পারেননি যে খুনের অভিযোগ যাকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু দুজনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদলকে আটক করে বিএসএফ। পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট দিল্লির সাকেট আদালত বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। পরে বাদলের স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে।
বাদল দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। পরে শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে।